চিন্তায় পড়েছে ভারতের গাড়ি শিল্প। কারণ চিন বিরল খনিজ মৌল বা ‘রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস’-এর রফতানিতে রাশ টেনেছে। এই বিরল খনিজ মৌল থেকে যে চুম্বক তৈরি হয়, তা ব্যাটারি চালিত গাড়ি বা ইলেকট্রিক ভেহিকল তৈরির কাজে লাগে। গাড়ি শিল্পের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রককে জানিয়েছেন, যদি চিনের থেকে বিরল খনিজ মৌল পাওয়া না যায়, তা হলে জুন মাসেই, খুব বেশি হলে জুলাই মাসে ইলেকট্রিক ভেহিকল তৈরি ধাক্কা খাবে।
গোটা বিশ্বেই চিন থেকে রফতানি করা বিরল খনিজ মৌলের অভাবে ত্রাহি ত্রাহি রব। এ দেশে মারুতি সংস্থা এখনও সমস্যায় পড়েনি। জাপানের সুজুকি মোটর্স জাপানে সুইফট মডেলের গাড়ি তৈরি বন্ধ রেখেছে। শিল্পমহল মনে করছে, চিনের বিরল খনিজ মৌলের অভাবে গাড়ি শিল্পের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, টেলিযোগাযোগ, এরোস্পেস, পরিবেশ-বন্ধু শক্তি তৈরির যন্ত্রাংশ তৈরিতে বাধা আসবে। কারণ এ সব ক্ষেত্রেই বিরল খনিজ মৌল কাজে লাগে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি ও আমেরিকার জিওলজিকাল সার্ভে অনুযায়ী, চিন গোটা বিশ্বের ৬০ শতাংশ বিরল খনিজ মৌল উৎপাদন করে। তার প্রক্রিয়াকরণের ৯০ শতাংশও চিনের দখলে। আমেরিকা যখন চিনের উপরে শুল্ক বসিয়ে চাপ তৈরি করছে, তখন চিনও বিরল খনিজ মৌলের রফতানি রাশ টেনে পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছে। শিল্পমহলের আশঙ্কা হল, নিওডাইমিয়াম, ডাইস্প্রোসিয়ামের মতো বিরল খনিজ মৌল স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে কাজে লাগে। এ সবের জোগানে টান পড়লে খরচ বাড়বে। উৎপাদনে দেরি হবে।সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ২০২৩-২৪-এ ভারত চিন থেকে ৪৬০ টন বিরল খনিজ মৌল থেকে তৈরি চুম্বক আমদানি করেছিল। ভারতের বাজারে প্রয়োজনীয় সমস্ত বিরল খনিজ মৌলই এসেছিল চিন থেকে। ২০২৪-২৫-এ এই আমদানির পরিমাণ ৭০০ টন ছাপিয়ে গিয়েছে বলে অনুমান। কংগ্রেস নেতা পবন খেড়ার অভিযোগ, ‘‘ভারতে বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম বিরল খনিজ মৌলের ভাণ্ডার রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই বিপুল পরিমাণ বিরল খনিজ চিন থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। কারণ মোদী সরকার ১১ বছর ক্ষমতায় থেকেও দূরদৃষ্টির অভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করেনি। চিন রফতানি নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় ইলেকট্রিক ভেহিকল উৎপাদনে ধাক্কা লেগেছে। গাড়ি শিল্প খাদের ধারে। চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আত্মনির্ভর ভারতের বড়াই করলেও বিজেপি ভারতকে চিন-নির্ভর করে ফেলেছে।’’
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বিরল খনিজ মৌলের জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার ইন্ডিয়া রেয়ার আর্থস লিমিটেড (আইআরইএল) নামের সংস্থা তৈরি করেছে। যদিও সেই প্রচেষ্টা পুরো সফল হয়নি। জাতীয় ক্রিটিকাল মিনারেল মিশন-এ আইআরইএল ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও হাত মিলিয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)