ডোকলাম থেকে ভারতীয় সেনা হঠাতে চিনা বিশেষজ্ঞরা যখন ছোট আকারে হলেও যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তখন সংঘাত মেটাতে নরেন্দ্র মোদী আলোচনার পথে হাঁটারই বার্তা দিলেন। আজ মোদী জানান, আলোচনা ও বিতর্কই এশিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্য। সংঘাত মেটাতে সেই আলোচনার পথেই তিনি বিশ্বাসী।
ডোকলাম নিয়ে ভারত ও চিন শান্তির পথ খোঁজার চেষ্টা করলেও ড্রাগনের দেশ প্রকাশ্যে নিয়মিতই ভারতকে চোখ রাঙাচ্ছে। আজও চিনা কমিউনিস্ট পার্টি চালিত পত্রিকা ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ এক নিবন্ধে প্রতিরক্ষা, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চিনা বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, ডোকলাম থেকে ভারতীয় সেনাকে হঠাতে দু’সপ্তাহের মধ্যে চিন ছোট মাপের ‘মিলিটারি অপারেশন’-এ যেতে পারে। একই সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয়তে গোটা পরিস্থিতির জন্য মোদীর দিকেই আঙুল তুলে বলা হয়েছে, তিনি চিনের প্রতি ‘কড়া অবস্থান’ নিতে গিয়ে নিজের দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
গত দু’দিনে চিনের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, ভারতে চিনা দূতাবাস ও সরকারি মুখপত্র পিপল’স ডেইলি যে সব মন্তব্য করেছে, তা দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিন বেশি দিন তাদের জমিতে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি সহ্য করবে না।
এই পরিস্থিতিতে ভারত প্রথমে ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব দেখালেও এখন সুর নামিয়ে দৌত্যের পথেই ফিরতে চায়। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের পরে এ বার খোদ প্রধানমন্ত্রীও আলাপ-আলোচনার কথা বলে চিন তথা আন্তর্জাতিক মহলের সামনে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
ইয়াঙ্গনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় মোদী বলেছেন, ‘‘একবিংশ শতাব্দীতে গোটা বিশ্বই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এর সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। আমি আত্মবিশ্বাসী, এশিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্য আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যেই এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।’’
এমন নয় যে, চিন শান্তি চায় না। কিন্তু ভারত যাতে আগে সেনা সরায়, তার জন্যই চিন ধারাবাহিক ভাবে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে। মোদী সরকারও এখন বুঝতে পারছে, প্রথমে যুদ্ধং দেহি মনোভাব নেওয়াটাই ভুল হয়েছে। আসলে বিজেপি নেতারা গত লোকসভা ভোটের আগে থেকে মোদীর ‘ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি’র কথা বলেছেন। এখন সেটাই সমস্যা বাড়িয়েছে। এখন মুখ বাঁচাতে আলোচনার কথা বলতে হচ্ছে খোদ মোদীকেই। বিরোধীদের বক্তব্য, মোদী জমানায় সঙ্ঘের নির্দেশে উগ্র হিন্দুত্বের পথে হাঁটতে গিয়ে দেশে সংখ্যালঘু-দলিতদের উপরে হামলা যেমন বেড়েছে, তেমনই খারাপ হয়েছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক।