Advertisement
E-Paper

যাকে ভালবাসি, তাকে নিয়েই বাঁচি! ধারাবাহিক ‘জোয়ার ভাঁটা’র মতো বাস্তবেও একতরফা প্রেম রৌনকের?

বাবার একটি বাস আছে। সেই বাসের কন্ডাকটর রৌনকের দাদা! রৌনকের গোটা জীবনটাই যেন রুপোলি পর্দার গল্প।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:২৫
‘ভানু’ চরিত্র রৌনক খানের ‘অক্সিজেন’।

‘ভানু’ চরিত্র রৌনক খানের ‘অক্সিজেন’। ছবি: সংগৃহীত।

শীতের সকাল। গ্রামের মেঠো রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে ছেলেটি দ্রুত পৌঁছোনোর চেষ্টা করছে প্ল্যাটফর্মে। শুটিং আছে তার। দরজায় হাত রেখে চৌকাঠের উপরে বয়স্ক মা দাঁড়িয়ে। শীতের হাওয়ায় চাদর উড়ছে তাঁর। দেখতে দেখতে ছেলে দৃষ্টিপথের বাইরে।

সেই ছেলেটির বাবার একটি বাস। সেই বাসের কন্ডাকটর ছেলেটির এক দাদা। দুই বিবাহিত দিদির নিজস্ব দোকান আছে। গ্রামে যেমন হয়। পেশার কারণে ছেলেটি ২০১৩ থেকে কলকাতায়। টাকা বাঁচাতে রান্না, ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা— সব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে। সঙ্গে শরীরচর্চা। সুযোগমতো মঞ্চাভিনয়। আর আছে ন’মাসে-ছ’মাসে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে যাওয়া।

ইনিই রৌনক খান। আরও বিস্তারিত বললে, ধারাবাহিক ‘জোয়ার ভাঁটা’র ‘ভানু’। যে একতরফা প্রেমে ডুবে ‘নিশা’র! এই চরিত্র রৌনককে রাতারাতি জনপ্রিয় করেছে। প্রেমের গল্প পরে। আগে দেখা যাক, কোথা থেকে কী ভাবে রুপোলি পর্দার দুনিয়ায় পৌঁছে গেলেন সুন্দিপুর গ্রামে জন্মানো ছেলেটি?

রৌনকের জীবনের গল্প শুনতে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। অভিনেতা বললেন, “প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। লেখাপড়ার থেকেও ক্রিকেটে মন ছিল বেশি। আর জেদ ছিল, অভিনয়ে আসব। ইংরেজিতে স্নাতক হওয়ার পরেও স্বপ্ন দেখা ছাড়িনি।” যদিও মা-বাবার একটু আপত্তি ছিল। ছেলের ঘাড়ে এ কী ভূত চাপল! সেই স্বপ্ন তাঁকে তাড়িয়ে এনেছে কলকাতায়। পেশাজীবন শুরু মডেলিং দিয়ে। কাজের তাগিদে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন মুম্বই। লম্বা-চওড়া পেটানো স্বাস্থ্য, সুপুরুষ রৌনককে মডেলিংয়ের দুনিয়া গ্রহণ করেছিল। “তখনই ঠিক করেছিলাম, মডেলিংয়ের জন্য মুম্বইয়ে থাকতে সমস্যা নেই। কিন্তু অভিনয় বাংলাতেই।” যদিও তিনি বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি— তিনটি ভাষাই ঝরঝরে বলতে, লিখতে, পড়তে পারেন।

কয়েকটি বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাতেই টলিউডে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। আশ্বাস পেয়েছিলেন, তাঁকে নায়ক করে ধারাবাহিক তৈরি হবে। আশ্বাসই সার! একটা রঙিন বুদবুদের মতো মিলিয়ে গিয়েছে সে সব। রৌনক টের পেয়েছেন, “প্রতিভার পাশাপাশি যোগাযোগটাও প্রয়োজন। আমি কাউকে চিনি না। ফলে, পিআর করতে পারিনি। পরিশ্রমের পাশাপাশি ভাগ্য থাকা দরকার। নইলে ব্যাটেবলে হয় না।” বারবার স্বপ্ন ভেঙে যেতে অভিনেতা কি হতাশায় ডুবেছিলেন? একেবারেই না, দাবি তাঁর। “আমি কলকাতার এক মঞ্চাভিনেতা বন্ধুর সঙ্গে থাকি। ও জানে আমার লড়াই। হ্যাঁ, মা-বাবা হয়তো এক-এক সময়ে ভয় পেয়েছেন। পরে তাঁরাই উৎসাহ জুগিয়েছেন। আমায় গুঁড়িয়ে যেতে দেননি।”

এই ব্যর্থতা রৌনককে বুঝিয়েছে, ভাল অভিনেতা হতে গেলে ভাল অভিনয় জানতে হবে।

পর্দার নিশা-ভানু বাস্তবে শ্রুতি দাস-রৌনক খান।

পর্দার নিশা-ভানু বাস্তবে শ্রুতি দাস-রৌনক খান। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনেতা তাই যোগ দেন হাতিবাগানের একটি নাট্যদলে। সেখানে টানা মঞ্চাভিনয় করে গিয়েছেন। পেট চালানোর জন্য মডেলিং। এ ভাবেই কখনও কালার্স বাংলায় ‘জয় জগন্নাথ’ ধারাবাহিকে ‘মহাদেব’। কখনও স্টার জলসায় ‘রোশনাই’য়ের পার্শ্বচরিত্র। অবশেষে জ়ি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিকের দ্বিতীয় নায়ক রৌনক! লোকে তাঁর অভিনয় দেখছেন। তাঁর লড়াই জানছেন। আর ভালবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন। ধারাবাহিকে অভিনয় করতে গিয়ে তাঁকে রুদ্রাক্ষ পরতে হয়েছে। কপালে তিলকও কেটেছেন। মা-বাবা, গ্রামবাসীদের আপত্তি... “কিচ্ছু না!” মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা। জোর গলায় আরও বলেছেন, “টলিউডেও এই ছুতমার্গ নেই। যাঁরা বলেন, তাঁরা খুব ভুল কথা বলেন। একই ভাবে গ্রামের ছেলে বলেও কেউ মুখ ফেরাননি।”

এই প্রসঙ্গে রৌনকের উদাহরণ, তাঁর সহ-অভিনেতা শ্রুতি দাস। “ওর লড়াই কাছে থেকে দেখেছি। মফস্‌সলের মেয়ে। কখনও হার মানেনি। এখনও প্রতি মুহূর্তে লড়ছে। তেমনি অভিনয়। ওর থেকে অনেক কিছু শিখছি। খুব আগলে রাখে আমায়।”

এ দিকে টেলিপাড়া যে বলছে, পর্দার ‘ভানু’ আর বাস্তবের রৌনক নাকি ছোটপর্দায় একাকার? ভানু যেমন একতরফা ভালবাসে নিশাকে রৌনকও নাকি তা-ই?

বেশ কিছুক্ষণ চুপ রৌনক। বড় করে দম নিয়ে বলেছেন তার পর, “তেমন যদি কিছু হয়েও থাকে, তা হলে সমস্যা কোথায়? যাকে ভালবাসি তাকে নিয়েই বাঁচছি। নিজের মতো করে।” রৌনকের গোটা জীবনটাই যেন রুপোলি পর্দার গল্প...!

Shruti Das Joar Bhata susanta das Ronak Khan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy