সপরিবার ওয়াং কি। — নিজস্ব চিত্র
পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখে কেঁদে ফেললেন প্রাক্তন চিনা সৈনিক ওয়াং কি। সেই কবে, ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের পর পরই হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তখন সাতাশের যুবক। পথ হারিয়ে শত্রু দেশের সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হলেন ওয়াং। পরের কিছু বছর জেল কুঠুরির বন্দি-জীবন। দু’দেশের নিয়মের ফাঁসে জড়িয়ে আর ঘরে ফেরা হয়নি তাঁর। সেই সব স্মৃতির ভারেই তখন হয়তো ঝাপসা হয়ে আসছিল বৃদ্ধের দু’চোখ।
শেষ পর্যন্ত ভারত ও চিন সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় শনিবার বেজিং-এর বিমানবন্দরে আত্মীয়-স্বজনকে কাছে পেয়েও তাই বিশ্বাস হচ্ছিল না ৭৭ বছরের বৃদ্ধের। সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় স্ত্রী সুশীলা, ছেলে বিষ্ণু, পুত্রবধূ নেহা এবং নাতনি কনক। বিমানবন্দরে ছিলেন চিন ও ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীরাও। স্বজনদের সঙ্গে ভিনদেশি পরিবারের আলাপ করিয়ে এ দিনই শানসি প্রদেশে নিজের গ্রামের উদ্দেশে রওনা হলেন ওয়াং।
এক অর্থে সিনেমার মতোই এই চিনা সৈনিকের জীবন। ছেলে বিষ্ণু ওয়াং জানালেন বাবার হারিয়ে যাওয়ার গল্পটা। ১৯৬২ সালের ঘটনা। ভারত-চিন যুদ্ধ সবে থেমেছে। রাতের অন্ধকারে পথ হারিয়ে পূর্ব ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে ঢুকে পড়েছিলেন ওয়াং। ভাষা জানেন না। চেনেন না কাউকে। তাঁকে উদ্ধার করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রশের সদস্যরা। সেটা ১৯৬৩ সাল। এর পর শুরু হল বিচার। অসম, অজমের, দিল্লিতে একের পর এক জেলে বন্দি হিসেবে জীবন কেটেছে তাঁর। এক সময় যখন সব আশাই ছেড়ে দিয়েছেন, সেই ১৯৬৯ সালে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি পেলেন ওয়াং। তবে দেশে ফেরার রাস্তা তখন বন্ধ।
অগত্যা এ দেশেই নতুন অধ্যায় শুরু করলেন এই প্রাক্তন চিনা সৈনিক। সুশীলাকে বিয়ে করে ঘর বাঁধলেন মধ্যপ্রদেশের বালাঘাটের তিরোদি গ্রামে। পাঁচ দশক আগে যে দেশে এসে বাড়ি-ঘর খুইয়েছিলেন ওয়াং, সেখানেই তিন সন্তান-সহ নতুন পরিবার পেলেন। এ দেশের মানুষের কাছে পেলেন অফুরান ভালবাসা।
তবে দুর্ভাগ্য তাঁর পিছু ছাড়েনি। যখন সবে থিতু হওয়ার কথা ভাবছেন তখনই জানলেন, ওয়াংয়ের জন্য বরাদ্দ মাসিক সরকারি ভাতা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশের মাটিতে পরিচয়হীন চিনা সৈনিকের জীবনটা মোটেই সহজ ছিল না। পরিচয়পত্র নেই, নেই এ দেশের নাগরিকত্ব। তবু হার মানেননি মরিয়া সৈনিক। স্থানীয় এক কারখানায় পাহারাদারের চাকরি নিয়ে ফের শুরু করেন বাঁচার লড়াই। ওয়াংয়ের পরিবারের অভিযোগ, গত ৫০ বছরে বার বার চিনে ফেরার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। দূতাবাসে দৌড়োদৌড়ি থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার— বাদ রাখেননি কিছুই। ২০০৯ সালে মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টে ফেরার আর্জি জানালেও তা সফল হয়নি। সাড়া পাননি চিনা দূতাবাস থেকেও।
তা হলে শনিবার ওয়াং সপরিবারে বেজিং পৌঁছলেন কী ভাবে?
বিষ্ণু জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে ওয়াংয়ের ভাইপো ইয়ুন চুন ভারতে বেড়াতে এসে তাঁদের খুঁজে পান। তিনিই কাকাকে ফেরাতে উদ্যোগী হন। দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় অবশেষে দেশে ফেরার জন্য ভিসা পেয়েছেন ওয়াং। শুধু তাই নয়, নিজের দেশ ঘুরে যদি ফের এ দেশেই ফিরতে চান, সে জন্য ভারত সরকার তাঁকে ফেরার ভিসাও দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy