Advertisement
E-Paper

ভাড়া দেব, নিরাপত্তা দাও, পরিচ্ছন্নতা দাও

বছরের যে কোনও সময় যাত্রী ভাড়া বা পণ্য মাশুলের পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। নতুন ট্রেন ঘোষণাও বাজেট ছাড়াই হতে পারে।

সুভাষ রঞ্জন ঠাকুর (লেখক প্রাক্তন রেল অধিকর্তা)

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:২৭
বাজেট প্রস্তাবের চেয়েও যাত্রী সাধারণের কাছে অনেক বেশি জরুরি তাদের নিরাপত্তা।

বাজেট প্রস্তাবের চেয়েও যাত্রী সাধারণের কাছে অনেক বেশি জরুরি তাদের নিরাপত্তা।

গত বছর থেকেই রেল বাজেটের সঙ্গে সাধারণ বাজেটের সংযুক্তি হয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে হয় না। রেল বাজেট সম্বন্ধে যাত্রী সাধারণের বিরাট একটা অংশের কী ভাবনা এটা নিয়ে আলোচনার একটা চেষ্টা করা যাক। বাজেট সাধারণত আয়-ব্যয়ের একটা সালতামামি এবং আগামী বছরের জন্য কী কী করা হবে বা হবে না, সে সম্বন্ধে একটা ধারণা দেয়। সাধারণ বাজেটের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজন যে দেশের অর্থনীতি কোন দিকে চলবে বা কর কাঠামোর পরিবর্তনে কোন ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়তে পারে তার একটা রূপরেখা পাওয়া যায়। রেল বাজেটের ক্ষেত্রে এর কি কোনও প্রয়োজন আছে? যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে কি না বা কিছু অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হচ্ছে কি না এ ছাড়া কিছুই আলোচনা করা হয় না। আজকাল অবশ্য এর জন্য বাজেটের কোনও প্রয়োজন নেই। বছরের যে কোনও সময় যাত্রী ভাড়া বা পণ্য মাশুলের পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। নতুন ট্রেন ঘোষণাও বাজেট ছাড়াই হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাজে রেল বাজেটের আলোচনার প্রয়োজন অত্যন্ত সীমিত বলেই মনে হয়।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, রেল বাজেট পেশ হওয়ার আগে বা পরে যাত্রীদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় যে বিষয়গুলি উঠে আসে তার সঙ্গে রেল বাজেটের বিশেষ কোনও সম্পর্ক নেই। সাধারণ যাত্রীরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে কী আশা করেন বা কী চান না, সংবাদমাধ্যমের কাছে সেটাই উল্লেখ করেন। পরিশীলিত ভাষায় যাদের আমআদমি বলা হয় (অবশ্য শশী তারুরের ভাষায় যাঁরা ক্যাটল ক্লাস বা রবার্ট বঢ়রার ভাষায় এঁরা ম্যাঙ্গো পিপল) বাজেট থেকে তাঁদের আশা যাতে ট্রেনগুলো সময়ানুযায়ী চলে, কামরাগুলো পরিচ্ছন্ন থাকে (বিশেষ করে টয়লেট), নিরাপত্তা যেন থাকে, জল এবং খাবারের মানের যেন উন্নতি হয় এবং দুর্ঘটনা না ঘটে। এই আমার কথা প্রতি বছরই তাঁরা বলেন যা থেকে বোঝা যায় তাঁদের আশানুরূপ কোনও উন্নতি নজরে আসেনি। একটা কথা বোঝা দরকার যে এগুলির সঙ্গে বাজেট পেশ করার বিশেষ কোনও সম্বন্ধ নেই। এগুলি রেল কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে পড়ে এবং এর কোনও খামতির জন্য তাঁরাই দায়ী।

লক্ষ্য করে দেখবেন, রেল বাজেটে এগুলি নিয়ে বিশেষ কোনও উল্লেখ থাকে না। এর কারণ এই বুনিয়াদি বিষয়গুলো সম্বন্ধে বাজেট বরাদ্দ করা ছাড়া রেল বাজেটে কিছু আলোচনার পরিসর থাকে না। এই বিষয়গুলির গুরুত্ব নিয়ে তো কোনও দ্বিমত থাকতেই পারে না এবং এ বিষয়ে উন্নতির জন্য রেল কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু এগুলির উন্নতি তো করতে হবে জেনারেল ম্যানেজার এবং বিভাগীয় রেল ম্যানেজারদের। বাজেট বরাদ্দ কোনও সমস্যাই নয় এ ক্ষেত্রে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের সঙ্গে সঙ্গে এই সব কর্তৃপক্ষের হাতে অন্তত বাজেট বরাদ্দ সমস্যা হতে পারে না। উপরে উল্লিখিত প্রতিটি কাজের জন্য রেল কর্মচারী অথবা ঠিকাদারদের কর্মীর সংস্থান আছে। কিন্তু যাত্রী সাধারণের অভিজ্ঞতা থেকে মানতেই হবে যে ঠিকমতো নজরদারির অভাব আছে। কোনও সমস্যা একবারের জন্য হতেই পারে, কিন্তু সেটা যখন ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকে সেটা কর্তৃপক্ষের অনীহা অথবা অকর্মণ্যতার দিকেই আঙুল তুলবে।

তাই মনে হয়, বাজেট প্রস্তাবের চেয়েও যাত্রী সাধারণের কাছে অনেক বেশি জরুরি উল্লিখিত বিষয়গুলোর আশু এবং উল্লেখযোগ্য উন্নতি। বুলেট ট্রেন বা সেমি বুলেট ট্রেন সংবাদমাধ্যমের কাছে উপস্থাপিত করা হোক তাতে কোনও আপত্তি নেই। এমনকী, বিশেষ ধরনের পরিষেবা-সহ প্রিমিয়াম ট্রেনও চলতে থাকুক। উপনগরীয় ট্রেনের কথা বাদ দিলেও, বেশি দূরত্বের ট্রেনের যাত্রী সংখ্যার প্রায় ৫৯ শতাংশের বেশি দ্বিতীয় শ্রেণি স্লিপার ক্লাসের যাত্রী এবং প্রায় ১২ শতাংশের কাছাকাছি দ্বিতীয় শ্রেণির অসংরক্ষিত কামরার যাত্রী। এই বিপুল সংখ্যক যাত্রীর একটা বৃহৎ অংশই যখন রেল পরিষেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, তখন অন্তত যাত্রী পরিবহণের এই দিকটাতেই বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন।

Rail Budget Union Budget Central Budget Budget 2018 Budget 2018-19 Railway Passenger security Cleanliness Safe journey Punctuality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy