এ দেশের সংশোধনাগারগুলিতে ক্রমশ বাড়ছে মৌলবাদী ভাবধারা। সেখানে বন্দি থাকা অপেক্ষাকৃত তরুণদের মগজধোলাই করে দলে টানছে মৌলবাদীরা। এ ভাবে সংশোধনাগারগুলির কার্যত মৌলবাদের কারখানায় পরিণত হওয়াটা রীতিমতো উদ্বেগজনক প্রবণতা বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই কারণে প্রত্যেকটি রাজ্যকে কেন্দ্র পরামর্শ দিয়েছে যে, সংশোধনাগারে যারা মৌলবাদ ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। আর তা সম্ভব না হলে এই ধরনের ভাবধারায় বিশ্বাসীদের সম্পূর্ণ একলা বন্দি রাখতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পর্যবেক্ষণ, সাজাপ্রাপ্তদের সংশোধনের জন্য জেলে পাঠানো হলেও উল্টে সেখানেই জেহাদি ভাবধারা ছড়ানোর ক্লাস খুলে বসেছে মৌলবাদীদের একাংশ। অপেক্ষাকৃত তরুণ বন্দিদের জেহাদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করে নিজেদের দল ভারী করে চলেছে ওই মৌলবাদীরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সব রাজ্যকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশোধনাগার একটি বদ্ধ স্থান। বন্দিরা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেখানে প্রবল অথচ নজরদারি যথেষ্ট শিথিল— সংশোধনাগারের এমন একটি পরিবেশে তলায় তলায় মৌলবাদী ভাবধারার প্রচার যথেষ্ট বিপজ্জনক। কারণ কেন্দ্র মনে করছে, এ ধরনের জঙ্গি মনোভাবে বিশ্বাসীরা যে কোনও সময়েই কারাকর্মী বা অন্য বন্দিদের উপরে হামলা চালাতে পারে। এমনকি সংশোধনাগারের ভিতরে থেকে এ সব জঙ্গি মনোভাবাপন্নদের বাইরে নাশকতা চালানোর আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেন্দ্রের মতে, গোটা বিশ্বে কারাগারের ভিতরে মৌলাবাদী ভাবধারার বাড়তে থাকাটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়।
এই ধরনের সমস্যা এড়াতে জেলের ভিতরে নজরদারি চালানোর যে সব প্রকাশ্য ও গুপ্ত পদ্ধতি রয়েছে, তা শক্তিশালী করার উপরে জোর দিতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। বিশেষ করে মৌলবাদী মনোভাবাপন্নদের চিহ্নিত করে তাদের মানসিক গতিবিধি এবং তারা কাদের সঙ্গে মিশছে, তা ধারাবাহিক নজরদারির আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিপদের মূল্যায়নের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোনও বন্দি যখন সংশোধনাগারে প্রবেশ করছেন, সেই সময়ে মনোবিদের মাধ্যমে তাঁর মানসিক মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পরবর্তী সময়েও নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই মূল্যায়ন চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে, যাতে ওই ব্যক্তির মনের গতিবিধি বোঝা সম্ভব হয়।
সংশোধনাগারে বসে সহবন্দিদের মৌলবাদী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করা ঘোষিত মৌলবাদীদের ঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে এক দিকে যেমন মনোবিদদের সাহায্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তেমনই বাকিদের উপরে এদের কুপ্রভাব এড়াতে ওই মৌলবাদী বন্দিদের প্রয়োজনে পৃথক সেলে রাখার পরামর্শও দিয়েছে কেন্দ্র। লক্ষ্য, অন্যদের মগজধোলাই করা থেকে আটকানো। তাই প্রয়োজনে এ ধরনের মৌলবাদে বিশ্বাসী আসামিদের জন্য একেবারে আলাদা একটি কারাগার নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)