উত্তরপ্রদেশে কুম্ভের মতোই ওড়িশার পুরীতে বিজেপি সরকার ভিআইপি-দের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মানুষ হতাহত হয়েছেন বলে কংগ্রেস অভিযোগ তুলল। দিল্লিতে কংগ্রেসের ওড়িশার নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, শিল্পপতি গৌতম আদানির জন্য জগন্নাথের রথ আটকানো হয়েছিল। গত শুক্রবার রথযাত্রায় অস্বাভাবিক দেরির ফলে ভিড় ও ঠেলাঠেলিতে ৬০০ জন জখম হন। রবিবার গুন্ডিচা মন্দিরের সামনে পদপিষ্ট হয়ে তিন জন মারা যান।
মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝির ইস্তফা ও বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে কংগ্রেস নেতা সপ্তগিরি উলাকা ও অরবিন্দ দাস বলেন, ‘‘গৌতম আদানির জন্য রথযাত্রার গোটা সময়সীমা বদলে ফেলা হয়েছিল। তার ফলেই দুর্ঘটনা। ওড়িশার মানুষের জীবন জগন্নাথের আশীর্বাদে চলে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের জীবন চলে আদানির আশীর্বাদে। তাই বিজেপির কাছে মহাপ্রভু জগন্নাথের থেকেও আদানি বড়।’’ ঠিক কত জন মারা গিয়েছেন, সেই সংখ্যা স্পষ্ট করার দাবি করেছে কংগ্রেস। মৃতদের পরিবারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণেরও দাবি উঠেছে।
পুরীতে সোমবারও হাজার হাজার ভক্ত দর্শনের জন্য লাইনে দাঁড়ান। এ দিন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশি ব্যবস্থা তদারকির দায়িত্বে নিযুক্ত এডিজি সৌমেন্দ্র প্রিয়দর্শী বলেন, ‘‘ভগবানের কৃপায় সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে চলছে।’’ ওড়িশা সরকার পুরীর পদদলিত হওয়ার ঘটনায় প্রশাসনিক তদন্তও শুরু করেছে। রাজ্যের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানিয়েছেন, উন্নয়ন কমিশনার অনু গর্গ ৩০ দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন। মন্ত্রী আশ্বাস দেন, ‘‘রাজ্য সরকার এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’’
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সুরজেওয়ালা সোমবার পুরীর ঘটনার জন্য সরকারের জবাবদিহি চেয়েছেন এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশব্যাপী একটি অভিন্ন প্রোটোকল এবং রাজ্যগুলির তরফে ভিড় সামলাতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। সুরজেওয়ালার দাবি, প্রবেশ এবং প্রস্থানের দরজা একই পথে ছিল এবং সেটি ‘ভিআইপি প্রবেশের’ জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছিল। পলিথিন পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার কারণে আগের রাতেই অনেকে পিছলে পড়ে যাচ্ছিলেন। অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হয়েছিল এক কিলোমিটার দূরে। স্ট্রেচার পাওয়া যায়নি। রথের সামনে আনা হয়েছিল দু’টি ট্রাক, যার ধাক্কায় অনেকেই পড়ে যান। সম্প্রতি কংগ্রেসশাসিত বেঙ্গালুরুতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার উল্লেখ করে সুরজেওয়ালা বলেন, তার পরে সব সমালোচনা কংগ্রেস মাথা পেতে নিয়েছে। একই আচরণ ওড়িশা সরকারের কাছেও কাম্য।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল। সেখানে এসিপি নরসিংহ ভোলকে বিক্ষোভকারীদের পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায়। ভোলের দাবি, ভিডিয়োটি মাঝখান থেকে কেটে ভাইরাল করা হয়েছে। তবে বেআইনি সমাবেশ রুখতে পুলিশের কড়া পদক্ষেপ করার অধিকার যে রয়েছে, সে কথাও বলেছেন তিনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)