ভোটের দিকে তাকিয়ে বরাক উপত্যকায় কংগ্রেস-বিজেপি সমান পাল্লা দিয়ে চলেছে। দু’দলে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে চলছে সংগঠন বিস্তারের কাজ।
এত দিন সব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ছিল, বুথভিত্তিক কমিটি গঠন। এখন তাঁরা চাইছেন, আরও ছোট ইউনিট। কংগ্রেসের ভাষায় ‘মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট’। সহজ কথায়, প্রতি ১০০ ভোটারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া। তা-ও ওই ১০০ ভোটারের মধ্যে থেকে। বিজেপিও একই কায়দায় কোথাও ভোটার তালিকার ২ পাতার জন্য এক জনকে নিযুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কোথাও ১০ পাতার জন্য দু’জনের উপর দায়িত্ব বর্তাচ্ছে। দলে তাঁদের পরিচয় ‘পান্নাপ্রমুখ’। এ নিয়েই এখন কংগ্রেস বিধানসভা আসন ভিত্তিক গাঁধীসভা করছে। আর বিজেপি করছে কর্মী প্রশিক্ষণ শিবির।
ওই সব সভা-শিবিরের জন্যও কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের আমন্ত্রণ করে আনা হচ্ছে। কংগ্রেসের গাঁধীসভার জন্য উপত্যকা চষে বেড়াচ্ছেন এআইসিসি নিযুক্ত মাইক্রোবুথ ম্যানেজমেন্ট পর্যবেক্ষক মনোজ চৌহান। গেরুয়া দলের প্রশিক্ষণ শিবিরে কর্মীদের তাতিয়ে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সম্পাদক মহেন্দ্র সিংহ।
আজও উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে দুই দল বিধানসভা আসন ভিত্তিক সভা করে। লক্ষ্মীপুরে একই আসনে কংগ্রেস যখন মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট বোঝায়, বিজেপি পান্নাপ্রমুখ নিয়ে বুথ কমিটিগুলির সঙ্গে আলোচনা করে।
পয়লাপুল কমিউনিটি হলে কংগ্রেসের গাঁধীসভায় মনোজ চৌহান নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘‘মূল্যবৃ্দ্ধি ঠেকানো, কালো টাকা উদ্ধারের মত ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গেরুয়াবাহিনী। এখন ঘটছে উল্টো ব্যাপার।’’ তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প তৈরি করেছিল। বিজেপি তা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। সবাই মিলে রুখে দাঁড়ানোয় তা সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের ল্যাপটপ, ট্যাবলেট প্রকল্পের জন্য তিনি তরুণ গগৈ সরকারকে সাধুবাদ জানান। আরও অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য ফের কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরাতেও আহ্বান জানান। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মনোজবাবু বলেন, ‘‘এ বার অসমেও অসহিষ্ণুবাহিনীকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।’’
প্রদীপ দে’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সে সভায় জেলা পরিষদ সভাপতি সাথী কর্মকার, লক্ষ্মীপুরের পুরপ্রধান রিমি পাল, মনোজিৎ দাস, তিলক কর্মকার বক্তব্য রাখেন।
অন্য দিকে বিজেপির বুথভিত্তিক প্রশিক্ষণ শিবির হয় ডাক্তারবাগান খেলার মাঠে। বক্তব্য রাখেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়, জেলা সভাপতি কৌশিক রায়, প্রাক্তন বিধায়ক পরিমল শুক্লবৈদ্য, অমিয় কান্তি দাস, রীনা সিংহ ও সঞ্জয় ঠাকুর। তাঁরা কংগ্রেসকে মোকাবিলার জন্য অধিকতর জনসংযোগে গুরুত্ব দিতে বলেন। রাজদীপবাবু বলেন, ‘‘কংগ্রেসিরা পরাজয় নিশ্চিত জেনে হিংসার পথে হাঁটতে পারে। প্রশাসনকেও ব্যবহার করতে চাইবে। সে জায়গায় বিজেপির প্রধান হাতিয়ার হবে ব্যাপক ভোটার সমর্থন।’’ কৌশিকবাবু বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উল্লেখ করে সে সব কথা গ্রাম-শহরে ছড়িয়ে দিতে আহ্বান জানান। গুরুত্বের সঙ্গে টেনে আনেন ব্রডগেজ প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং একের পর এক তিনটি ট্রেন চালুর কথা। আজকের সভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৫ জন বিজেপিতে যোগ দেন।
শিলচরে ইন্ডিয়া ক্লাবের মাঠে বিজেপির সভায় প্রশিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, করিমগঞ্জ জেলা সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য ও হাইলাকান্দি জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত দত্তচৌধুরী। তাঁরা কর্মীদের বুঝিয়ে বলেন— ‘রাজ্যে এ বার গেরুয়া দলের সরকার হচ্ছে। এমন সম্ভাবনাময় অবস্থায় শিলচর থেকে বিজেপি প্রার্থীকে বিধানসভায় পাঠানো গেলেই এলাকার উন্নতি হবে।’ এই সময়ে বরাক উপত্যকার ১৫ আসনের মধ্যে একমাত্র শিলচরেই বিজেপি বিধায়ক রয়েছে। তাই এই আসনের দলীয় কর্মীদের যে বিরাট দায়িত্ব রয়েছে, তা তাঁরা নানা ভাবে তুলে ধরেন। শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পালও সভায় উপস্থিত ছিলেন। পৌরোহিত্য করেন শান্তনু নায়েক।
বিজেপির শিলচর শহর কমিটির সভাপতি দীপায়ন চক্রবর্তী ও শিলচর ব্লক কমিটির সভাপতি বাবু সিংহ জানান, গত লোকসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হেরে গেলেও শিলচর বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থীর চেয়ে প্রচুর ভোট বেশি পেয়েছেন। বিধানসভার উপ-নির্বাচনে বিজেপি কংগ্রেস প্রার্থীকে ৩৭ হাজার ভোটে পরাস্ত করে। তা সম্ভব হয়েছে বুথভিত্তিক শক্তিশালী কমিটি গঠনের দরুন। এখন একই ভাবে পান্নাপ্রমুখ তৈরি করতে হবে। তাঁরা নিজের দায়িত্বে থাকা ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। তাঁর কাছে কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএম কিংবা হিন্দু-মুসলমান বলে বাছবিচার থাকবে না। প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক রাখবেন, দলের সম্ভাবনার কথা বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy