Advertisement
E-Paper

বিভ্রান্ত কংগ্রেস সংরক্ষণ প্রসঙ্গে মৌনী

গুজরাতে পটেল অশান্তির সুবাদে কংগ্রেস উন্নয়নের ‘মোদী মডেল’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে যে মৌলিক বিতর্ক মাথা তুলছে, সে ব্যাপারে দৃশ্যতই বিভ্রান্ত তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৪

গুজরাতে পটেল অশান্তির সুবাদে কংগ্রেস উন্নয়নের ‘মোদী মডেল’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে যে মৌলিক বিতর্ক মাথা তুলছে, সে ব্যাপারে দৃশ্যতই বিভ্রান্ত তারা। জাতপাত, নাকি অর্থিক অনগ্রসরতা— কোনটিকে সংরক্ষণের ভিত্তি করা উচিত তা নিয়ে দলে স্পষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। এই অবস্থায় আপাতত নীরব থাকার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। বিশেষ করে বিহার ভোটের আগে সংরক্ষণ নিয়ে কোনও রকম বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা। কংগ্রেস বরং দেখে নিতে চায়, বিজেপি তথা সঙ্ঘ এ নিয়ে কী অবস্থান নেয়।

মোদী-রাজ্য অস্থির বছর বাইশের এক যুবকের আন্দোলনে। হার্দিক পটেল। তাঁর দাবি, হয় পটেলদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-ভুক্ত করে সংরক্ষণের সুবিধে দাও। না পারলে প্রচলিত সংরক্ষণ ব্যবস্থা খতম করো। এখন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের জাঠ ও গুজ্জরদেরও এই আন্দোলনে সামিল করতে চান তিনি। জাতপাতের সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার পক্ষে এটাই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন আরএসএসের একাংশ নেতা। কাল থেকে তিন দিন বিজেপি-আরএসএস সমন্বয় বৈঠক হবে দিল্লিতে। জাতপাতের বদলে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষণ চালু করা যায় কি না, তা নিয়ে সরাসরি আলোচনা হবে সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবত ও প্রধানমন্ত্রী সরাসরি আলোচনা হবে। বিজেপি যে বিতর্কটা জাতীয় স্তরে তুলে আনতে চাইছে, এটা তার স্পষ্ট ইঙ্গিত। কংগ্রেসেই তাই প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় স্তরে বিতর্ক জোরদার হয়ে উঠলে দল কোন পাশে থাকবে? বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার দাবি জানাবে, নাকি পটেল, জাঠ, গুজ্জরদের মতকে উপেক্ষা করবে!

এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা আজ মূল প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘‘সংরক্ষণের ব্যাপারটা পরে। গুজরাতে যে ভাবে পটেল-অসন্তোষ মাথা তুলেছে তাতেই প্রমাণ, মোদী মডেল ব্যর্থ। এই মডেলে সমাজের সব অংশের উন্নতি হয়নি। বরং একটা বড় অংশ বঞ্চিত বোধ করছে।’’ পটেলদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানো ও তাতে ৯ জনের মৃত্যু নিয়েও সরব কংগ্রেস।

আসল প্রশ্নটি কেন এড়িয়ে যাচ্ছেন আনন্দ শর্মারা? কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, সংরক্ষণের বিষয়টি দলে বরাবরই বিতর্কিত। কংগ্রেসেও বহু রকম মত রয়েছে। বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে দেশের কম-বেশি সব অংশে উচ্চ শ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণ চালু করার প্রস্তাব বিভিন্ন মহল থেকে অনেক দিন ধরেই রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে দুম করে কোনও মত প্রকাশ করাটা রাজনৈতিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রচলিত সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মত জানালে উচ্চ বর্ণ খুশি হবে। কিন্তু বিরূপ হবে সমাজের অনগ্রসর অংশ। সামনে বিহার ভোট। লালুপ্রসাদ ‘মণ্ডল পার্ট টু-র’ ডাক দিয়েছেন। এ সময় মহাজোটে থেকে সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিলাসিতা করার সুযোগ কংগ্রেসের নেই। তা ছাড়া, পটেল, জাঠ ও গুজ্জরদের সংরক্ষণ আন্দোলন নিয়ে বিজেপি ও আরএসএসেই মাথাব্যথা বেশি। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেই দানা বাঁধছে এই আন্দোলন। এ সব রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি হলে কংগ্রেসেরই লাভ। এ সময় কংগ্রেস কেন আগ বাড়িয়ে নাক গলাতে যাবে?

শুধু সময়ের প্রশ্ন নয়। কংগ্রেস মৌনী অন্দরের নীতিগত বিরোধের কারণেও। দলের উচ্চ বর্ণের নেতারা অনেকেই জাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। গত লোকসভা ভোটের মুখে জনার্দন দ্বিবেদী প্রকাশ্যে এ নিয়ে সরব হয়ে অস্বস্তিতে ফেলছিলেন দলকে। দলের এই অংশের মতে, রাজীব গাঁধীও মণ্ডল বিতর্কে সংসদে দাঁড়িয়ে ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে দরিদ্রদের সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আজও সেই প্রসঙ্গ টেনে দলের এক ব্রাহ্মণ নেতা উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভিসেসের এক পরীক্ষায় সাধারণ শ্রেণির প্রার্থীদের জন্য একটি মাত্র আসন ছিল। যা নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়েছিল। এ বার বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে, মন্তব্য করেন ওই নেতা।

কংগ্রেসের অনগ্রসর কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পি এল পুনিয়া এর কট্টর বিরোধী। তাঁর মত, ‘‘রাজীব কী বলেছিলেন সেটা অতীত। বরং সংরক্ষণ নিয়ে জনার্দনের বেফাঁস মন্তব্যের পর সনিয়া গাঁধী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কংগ্রেস বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থার পক্ষে। সেটাই এখনও দলের অবস্থান।’’ পুনিয়ার মতো নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, হার্দিকদের আন্দোলনকে সামাজিক রোগ হিসেবে দেখা উচিত। সুপ্রিম কোর্টও জাঠদের সংরক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে আগেই। তাই হার্দিকদের আন্দোলন দমন করে অরাজকতা বন্ধ করা উচিত। কারণ, কয়েক হাজার বছর ধরে যে বঞ্চনা হয়েছে, মাত্র চল্লিশ বছরে সংরক্ষণ তা মুছে ফেলতে পারে না।

এই অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে কংগ্রেস প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও বিহার ভোটের পরে কী হবে? কংগ্রেসেও এ নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন দলের অনেকে। কারণ, ভবিষ্যতে জাতীয় স্তরে সংরক্ষণ বিতর্ক মাথা তুললে কংগ্রেসের পক্ষেও বেশি দিন মুখ লুকিয়ে থাকা সম্ভব হবে না।

patel reservation congress confused congress silent hardik patel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy