দেশে তীব্র বেকারত্বের সঙ্কট এবং অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে ফের কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। দলের অভিযোগ, গত পাঁচ বছর ধরে তারা এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এই পরিস্থিতি নিয়ে বারবার সরব হলেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সে দিকে নজরই দেয়নি। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এ দিন সিটিগ্রুপের একটি রিপোর্টের উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, নোটবাতিল নিয়ে মোদীর তুঘলকীয় আচরণ, তড়িঘড়ি করে চালু করা ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি এবং চিন থেকে আমদানি বৃদ্ধির কারণে দেশের ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এরাই দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ এই ক্ষেত্রে কাজ করেন। যার জেরে অর্থনীতি আড়েবহরে বাড়লেও তা বেকারত্বের সমাধান করতে পারছে না। এই বৃদ্ধি শুধু মাত্র গুটিকয় শিল্পপতির সম্পদ বৃদ্ধি করেছে বলে মনে করে কংগ্রেস। এই ‘কর্মসংস্থানহীন উন্নয়ন’ যুব সমাজকে বড় বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, অভিযোগ করেছেন রমেশ।
রবিবার রমেশ রেকারত্বের বিষয়টি নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ শানাতে গিয়ে সিটিগ্রুপের রিপোর্টকে অস্ত্র করেন। সেখানে ভারতের বেকারত্বের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথাই শোনানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘‘কংগ্রেস কমপক্ষে ৫ বছর ধরে ভারতের বেকারত্ব নিয়ে সরব।’’ এর পরেই মোদীর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘নন-বায়োলজিক্যাল প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক নীতির কারণে একদিকে বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলি সুফল কুড়িয়েছে, অন্য দিকে বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। স্নাতক উত্তীর্ণ যুবদের বেকারত্ব হার ৪২ শতাংশ।’’সিটিগ্রুপের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে যুব সমাজকে টেনে বের করতে আগামী দশ বছর ধরে বছরে গড়ে এক কোটি ২০ লক্ষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘এমনকি জিডিপি-র হার ৭ শতাংশে পৌঁছলেও তা যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি করবে না। আমাদের নন-বায়োলজিক্যাল প্রধানমন্ত্রীর আমলে আমরা মোটে ৫.৮ শতাংশ জিডিপি-তে পৌঁছেছি। মোদীর জমানায় অর্থনীতির ক্রমাগত পতনই এই ভয়াবহ বেকারত্বের মূল কারণ।’’ সরকারের নীতিকে তীব্র আক্রমণ করে রমেশ জানান, এই মুহূর্তে দেশে শুধু কেন্দ্রীয় সরকারে ১০ লক্ষ শূন্য পদ রয়েছে। এটা দেশের বেকারদের উপহাস করা ছাড়া কিছু নয়।
এ বছর লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গোটা বিজেপি যখন শুধু মাত্র ধর্মীয় বিষয়কে হাতিয়ার করে প্রচার করেছে, তখন বিরোধীদের অন্যতম অস্ত্র ছিল বেকারত্ব। ভোটের পরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠা হারিয়ে দুই শরিকের সাহায্যে মোদী ফের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসলেও বিরোধীরা যে বেকারত্বের বিষয়টিকে হাতছাড়া করতে নারাজ, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন রমেশ। তিনি তথ্য তুলে ধরে বলেন যে, কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে দেশে ২৪ শতাংশ বেতনভূক কর্মী থাকলেও তা এখন নেমে এসেছে ২১ শতাংশে। অথচ কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশে ধনীতম অংশটির সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়েছে বিপুল হারে। বেতনভূক মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় কার্যত উধাও। গ্রামীণকর্মসংস্থান হ্রাসের বিষয়টি নিয়েও এ দিন সরব হন রমেশ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)