দীপক মিশ্র। —ফাইল চিত্র।
বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রকে ‘ইমপিচ’ করার প্রক্রিয়া শুরু করলেও, তার পিছনে ‘রাজনৈতিক স্বার্থ’ দেখছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
মঙ্গলবার থেকেই প্রধান বিচারপতিকে ‘ইমপিচ’ করার প্রস্তাবে সই সংগ্রহ শুরু করেছেন বিরোধীরা। রাজ্যসভায় প্রস্তাব আনতে হলে ৫০ জন সাংসদের সই প্রয়োজন। তাই সংসদের উচ্চকক্ষে কংগ্রেসের কপিল সিব্বল, এনসিপি-র মজিদ মেমন, সমাজবাদী পার্টির ঘনশ্যাম তিওয়ারিরা উদ্যোগী হয়েছেন। সিপিএমের সমর্থনও রয়েছে। কারা কারা সমর্থন করছে, তা খতিয়ে দেখে অবস্থান ঠিক করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের একাংশের দাবি, ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাবে ৭০ জন সাংসদের স্বাক্ষর পাওয়া গিয়েছে। ওই প্রস্তাব তাঁরা আগামী সোমবারেই পেশ করতে প্রস্তুত।
কিন্তু আজ মোদী সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রী এই ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রক্রিয়াকে একেবারেই অযৌক্তিক বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর যুক্তি, কোনও বিচারপতির অপসারণের প্রক্রিয়া বিচারবিভাগীয় কারণে হতে পারে। রাজনৈতিক কারণে নয়। সরকারের কর্তারা মনে করছেন, একেবারে রাজনৈতিক কারণে, মোদী সরকারকে চাপে রাখতেই প্রধান বিচারপতিকে নিশানা করা হচ্ছে।
প্রবীণ আইনজীবী সোলি সোরাবজি আজ এই প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তি, ‘‘কোনও যৌক্তিকতা নেই। একেবারেই ভুল পরিকল্পনা। অক্ষমতা বা কাজকর্মে গুরুতর ত্রুটির জন্য ইমপিচমেন্ট হতে পারে। প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রে তার কোনওটাই খাটে না।’’
ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবের খসড়ায় প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মূলত তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এক, একটি দুর্নীতির মামলায় তিনি তদন্তের নির্দেশ দেননি। তাঁর বিরুদ্ধেও ওই দুর্নীতিতে জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে। দুই, তিনি মিথ্যে হলফনামা দিয়ে ওড়িশায় সরকারি জমি নিয়েছিলেন। তিন, কেন্দ্রীয় সরকারকে সুবিধে করে দিতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বাছাই করা বিচারপতির কাছে মামলা পাঠান।
প্রক্রিয়া অনুযায়ী শাসক দলের আপত্তি থাকলে প্রধান বিচারপতিকে ‘ইমপিচ’ করা কঠিন। কারণ রাজ্যসভায় প্রস্তাব গ্রহণ হবে কি না, তা ঠিক করবেন চেয়ারম্যান। তারপর তিনি সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের বিচারপতি ও আইন বিশারদকে নিয়ে কমিটি তৈরি করবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সংসদের দুই কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রস্তাব পাশ করাতে হবে। তারপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দরকার।
প্রধান বিচারপতি নিজে অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই মামলা শুনেছেন। কিন্তু তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন প্রবীণ বিচারপতি জে চেলামেশ্বর। কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী জেলা দায়রা আদালতের বিচারক পি কৃষ্ণ ভাটের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই বিচারককে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। কিন্তু সরকার তা আটকে রেখেছিল। এর মধ্যেই ওই বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়ে আপত্তি তোলেন বিচারপতি চেলামেশ্বর। ওই চিঠির পরে নিঃশব্দে তদন্তও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy