Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Anti BJP Alliance

শাসক-বিরোধী একই জোটে, কেরলে বিদ্ধ রাহুল-ইয়েচুরি

বেঙ্গালুরুতে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির মহা-বৈঠকের পরে দুই ফ্রন্টই সোজা কথায় এখন ঢুকে গিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে! লোকসভা ভোটে তা হলে কে কার বিরুদ্ধে কী বলবে?

Rahul Gandhi and Sitaram Yechuri

(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী এবং (ডান দিকে) সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৯
Share: Save:

রাজ্যের শাসক ও প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন দুই ফ্রন্ট রয়েছে সম্মুখ সমরে। অথচ বেঙ্গালুরুতে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির মহা-বৈঠকের পরে দুই ফ্রন্টই সোজা কথায় এখন ঢুকে গিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে! লোকসভা ভোটে তা হলে কে কার বিরুদ্ধে কী বলবে?

বেঙ্গালুরুর বৈঠক এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের পরে এ বার মহা বিড়ম্বনায় পড়েছে কেরলের কংগ্রেস ও সিপিএম। জাতীয় স্তরে সমন্বয় রয়েছে কিন্তু রাজ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই হচ্ছে, এই পরিস্থিতির সঙ্গে কেরলের বাম ও কংগ্রেস সম্যক পরিচিত। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় স্তরে একই জোটে থেকে রাজ্যে আবার যুদ্ধ, এই পরিস্থিতি নতুন। যার ফায়দা নিয়ে দক্ষিণী ওই রাজ্যে বিজেপি বলতে শুরু করেছে, মানুষকে ‘ধোঁকা’ দেওয়ার সমঝোতা করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। এক কথায় বলতে গেলে, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে বাম ও কংগ্রেসের কাছে যে সমস্যা খণ্ডগ্রাস, কেরলে তা একেবারে পূর্ণগ্রাস!

বিড়ম্বনা বেড়ে যাওয়ার আরও কারণ, কেরল গত লোকসভা ভোটের সময়ে স্বয়ং রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। আপাতত তাঁর সাংসদ-পদ খারিজ হয়ে গিয়েছে। তবে আগামী বছর লোকসভা ভোটে ফের কেরলের ওয়েনাড় থেকে রাহুল প্রার্থী হলে বামেদের সমস্যা আরও বাড়বে। যে দিকে ইঙ্গিত করে বিজেপির কেরল রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন বলছেন, ‘‘পটনা এবং বেঙ্গালুরুতে বিরোধীরা তো প্রায় ঠিক করে ফেলেছে, রাহুল গান্ধীই তাদের মুখ। এ বার কেরলে এসে সীতারাম ইয়েচুরি কি রাহুলের বিরুদ্ধে সরব হবেন? যদি হন, তা হলে কী বলবেন? আর যদি না বলেন, তা হলে তো সহজেই ধরা পড়বে যে, রাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএমের লড়াই একেবারেই লোক-দেখানো!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবি, বাম ও কংগ্রেস মানুষকে ‘ধোঁকা’ দেওয়ার চেষ্টা করে অদ্ভুত সমঝোতা করেছে। মানুষ এ বার তা ধরে ফেলবেন।

ঘটনাচক্রে, বিজেপি যখন বিরোধী জোটের প্রসঙ্গে সুর চড়াতে শুরু করেছে, সেই সময়ে রাহুল কেরলেই আছেন। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডির শেষকৃত্যে উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধা জানানোর পরে শুক্রবার রাহুল গিয়ে ভর্তি হয়েছেন মলপ্পুরমের কোট্টাকাল আর্য বৈদ্যশালায়। সেখানে তাঁর হাঁটুর ব্যথার চিকিৎসা চলছে। থাকতে হতে পারে সপ্তাহখানেক। কোট্টাকালে যাওয়ার সময়ে রাহুলের সঙ্গে ছিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ( সংগঠন) কে সি বেণুগোপালও। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপিকে হারানোর বৃহত্তর লক্ষ্য সামনে রেখেই জাতীয় স্তরে বিরোধীরা একজোট হয়েছে। তবে রাজ্যে রাজ্যে আলাদা সমীকরণ অস্বীকার করা যাবে না। তেলঙ্গানায় যেমন বিআরএসের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হবে না, কেরলেও সিপিএমের সঙ্গে হবে না।’’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরিরও ব্যাখ্যা, ‘‘দেশের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষা করার জন্য বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। সেই লক্ষ্যে ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হয়েছে। বিজেপি-বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি আটকাতে হবে। তবে নির্দিষ্ট রাজ্যের পরিস্থিতির নিরিখে কী করণীয়, সেটা সেই রাজ্যেই ঠিক করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যে দলের নেতৃত্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ করবেন।’’ তিনি ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেস সর্বত্র লড়াই করার পরেও কেন্দ্রে একসঙ্গে ইউপিএ জোট ও সরকার তৈরি করেছিল। এ বারও বাংলায় তৃণমূল বা কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার প্রশ্ন নেই বলেই জানিয়ে রেখেছেন ইয়েচুরি। তবে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বিরোধী জোটের প্রেক্ষিতে সিপিএম বা বামেদের সমস্যাই সব চেয়ে বেশি। কারণ, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য বাংলা ও কেরলে সার্বিক বিজেপি-বিরোধী জোট বাস্তবে রূপায়ণ করা খুবই কঠিন! আর আগে যা ছিল নির্বাচন-পরবর্তী পদক্ষেপ, ভোটের আগে হলে তাকে সর্বত্র বাস্তবে পরিণত করা সমস্যাজনক, বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়ানোও প্রশ্ন।

বিজেপি নেতা সুরেন্দ্রনের কটাক্ষ, ‘‘নিজেদের মধ্যে লড়াই করলে বাম-কংগ্রেস বলুক, তারা কোনও জোটে নেই। আর যদি বিরোধী জোটে থাকে, তা হলে রাজ্যে তাদের লড়াইকে কেন মানুষ বিশ্বাস করবেন? কোথায় জোট আছে আর কোথায় নেই, এটা আগে মানুষকে বোঝান!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE