পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের উপরে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়েছিল। তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তা হলে কী ভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সফল বলে দাবি করা হচ্ছে? প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আচমকা ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে দেওয়ায় দেশের মানুষ ‘প্রতারিত’ ও ‘অপমানিত’ বোধ করছেন বলেও কংগ্রেস অভিযোগ তুলল।
কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বঘেল আজ দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমরা জানতে চাই, যে সন্ত্রাসবাদীরা পহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করল, তাদের কী হল? তারা কি ধরা পড়েছে? তাদের কি মেরে ফেলা হয়েছে? কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিয়েছে, পহেলগামের হামলায় নিরাপত্তার ব্যর্থতা ছিল। সরকার সে ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করেছে? সরকার কি তার দায় নির্দিষ্ট করেছে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি ইস্তফা দেবেন?”
ভারতের সেনা যখন পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে আচমকা সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে দেওয়ার ফলে দেশের মানুষের একটা বড় অংশ হতাশ বলে কংগ্রেস মনে করছে। বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীকে যে ভাবে সমাজমাধ্যমে আক্রমণ করা হচ্ছে, তাতে সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা করায় দেশের মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কেন মোদী সরকার তা মেনে নিল?
এই আবেগকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে কংগ্রেস আজ প্রশ্ন তুলেছে, মোদী সরকার কি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আমেরিকার মধ্যস্থতা মেনে নিয়েছে? বিশেষ করে আমেরিকার মধ্যস্থতায় কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব কি ভারত মেনে নিয়েছে? কংগ্রেস আজ স্লোগান তুলেছে, ‘‘মোদীজি, মাথা নত করবেন না।’’
কংগ্রেসের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান পবন খেরা আজ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, তাঁর সরকারেরই প্রথম বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, শিমলা চুক্তি মেনে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কথা হলে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মানা হবে না। ‘‘নরেন্দ্র মোদী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুসরণ করতে না পারলেও অন্তত সুষমা স্বরাজকে অনুসরণ করুন।’’
রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে আগেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি তুলেছিলেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি-ও আজ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে একই দাবি তুলেছেন। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ, বিরোধীরা সংসদে সরকারকে নিশানা করে, সেনাকে খোঁচা দিয়ে পাকিস্তানের সুবিধা করে দিতে চায়। কংগ্রেসের পবন খেরার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘১৯৬২ সালে যুদ্ধের মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন নেহরু সরকারের কাছে বিশেষ অধিবেশনের দাবি তুলেছিলেন, তখন কি তিনি সেনাবাহিনীকে খোঁচা দেওয়ার জন্য এই দাবি তুলেছিলেন?”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)