অসমে কংগ্রেসের খোলনলচে বদলে ফেলা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন চেহারা পাবে দল— প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে এমনই বললেন রিপুণ বরা।অঞ্জন দত্তের মৃত্যুর পর কার্যত তিনিই ছিলেন রাজ্যে কংগ্রেসের অভিভাবক। সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দল পরিচালনার দায়িত্ব আপাতত তাঁকেই দিয়েছিলেন। গত রাতে ‘আপাতত’ শব্দটা সরিয়ে নেওয়া হল। আজ সকালে তিনি চলে এলেন শিলচরে। সঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া। প্রবীণ নেতাদের সামনে রেখেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘শীঘ্র দলের সর্বস্তরে পরিবর্তন শুরু হবে। তাতেই গতিশীল হবে কংগ্রেস। বুথ থেকে জেলা সর্বত্র নবীন নেতৃত্বের ছড়াছড়ি হবে।’’ তাঁর নিজের কমিটিটিও যে গতবাঁধা হচ্ছে না, সেই ইঙ্গিত দিলেন। রিপুণ বরা বলেন, ‘‘বদলাবে কংগ্রেসের শাখা সংগঠনের প্রধানরাও।’’ এমনকী, এনএসইউআই, যুব কংগ্রেসের সভাপতি সাংগঠনিক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এলেও তিনি তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। তিনি জানিয়েছেন, সে নিয়ে তিনি হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলবেন। তাই বলে নিজের মর্জিতে দল চালাবেন, যাকে খুশি সভাপতি বানাবেন, এমন তিনি করতে নারাজ। রিপুণবাবুর কথায়, ‘‘রাজ্য কমিটি জেলা কমিটিগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। পরে ব্লক কমিটি বদলানোর দায়িত্ব জেলা কমিটিগুলিকেই দেওয়া হবে। একইভাবে পরিবর্তন চলবে বুথ স্তরের কমিটি পর্যন্ত।’’ কেন এমন পরিবর্তনের ভাবনা। নতুন সভাপতির বক্তব্য, অধিকাংশ কমিটিতে ১০-১৫ বছর একই সভাপতি। তাতে নতুন নেতৃ্ত্ব উঠে আসছে না, যা খুব প্রয়োজনীয়।
সে জন্যই কি দল এ বার হেরে গেল বিধানসভায়। রিপুণ বরা জানান, এখনও হারের কারণ সে ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি। ফলাফল ঘোষণায় দলের বিপর্যয়ের চেয়ে অঞ্জন দত্তের মৃত্যু কোনও অংশেই কম বিপর্যয় নয়। সে ধাক্কা সামলে হারের কারণ অনুসন্ধান শুরু হল মাত্র।
এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি কী হবে, তা-ও জানান সাংসদ। তিনি জানিয়েছেন, নির্ধারিত প্রপত্র বিলি করা হবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। যে কেউ ফর্ম পূরণ করে পাঠাতে পারেন। তাতে কারণ উল্লেখ করবেন। কেউ তাঁর অভিমত গোপন রাখতে চাইলেও সে ব্যবস্থাও করা হবে। ৪ সেপ্টেম্বর তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকছেন। সেখানে ওইসব অভিমত নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে এর আগেই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত জানাতে তিনি কুণ্ঠিত নন। স্পষ্ট করে বলেন, স্থানীয় স্তরে নানা সমস্যা ছিল। নাগাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় জয়ের ব্যাপারে নেতারা বেশিই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তখনকার মন্ত্রীরাও যে সে জন্য কম দায়ী নন, তাও শুনিয়ে রাখেন নতুন সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘অহঙ্কারী হয়ে উঠেছিলেন আমাদের মন্ত্রীরা।’’
তবে আত্মসমালোচনার পরই রিপুণবাবুর গলায় অন্য ঝাঁজ ধরা পড়ে। বলেন, ‘‘দলের হারের পিছনে এগুলি ছোট ছোট কয়েকটি কারণ। আসলে মানুষকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অহেতুক ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছিল। ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করেও বিজেপি-এআইইউডিএফ একসুরে অপপ্রচার করেছে। ধর্মীয় মেরুকরণ হয়েছে প্রচণ্ড ভাবে।’’ বিজেপি-র সাংগঠনিক ক্ষমতাকে রিপুণ বরা একেবারেই গুরুত্ব দিতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু মার্কেটিংয়ের জোরে দলটি ক্ষমতা দখল করেছে। সব বিষয়ে তিলকে তাল করেছে।’’ এখন বিরোধী ভূমিকায় এসে তাঁরাও যে বিজেপির মার্কেটিং ফর্মুলা ধার করতে চান, রাখঢাক না করেই শুনিয়ে দেন অসমে কংগ্রেসের নতুন সেনাপতি। দলীয় কমীদের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, ‘‘পত্রপত্রিকা পড়ুন, টিভি দেখুন। নতুন প্রজন্ম সোস্যাল মিডিয়ায় সময় দিন। যেখানে যে ইস্যু পাবেন, ঝাঁপিয়ে পড়ুন।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রয়োজনে মশলা, রং মিশিয়ে রাজ্যবাসীর কাছে পরিবেশন করুন। বিজেপির বিরুদ্ধে ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।’’ এতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
কয়েক দিন আগেই সাতটি পঞ্চায়েত সভাপতি পদে উপনির্বাচন হয়েছে অসমে। তার মধ্যে ৪টি জিতেছে কংগ্রেস। ২টি বিজেপি, ১টি নির্দল। এই ফলাফলকে বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ ঘটার প্রতিফলন বলেই মনে করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy