অল্প দিন আগে কেরলে তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যে চিড় ধরিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। দ্রুত প্রত্যাঘাত এল পিনারাই বিজয়নের দিক থেকে!
স্বজনপোষণ বিতর্কে কোনও আপস না করার জন্য কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। প্রথমে আপত্তি থাকলেও বাধ্য হয়ে তেতো ওষুধ গিলতে হয়েছিল কেরলে বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে! বিতর্কের জেরে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ই পি জয়রাজন। এ বার তাঁর জায়গায় এম এম মানিকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে এলেন বিজয়ন! চার বছর আগে তাঁর দল ‘নিকেশ করার রাজনীতি’ করে বলে মন্তব্য করে গোটা দেশে সিপিএমের মুখ পুড়িয়েছিলেন এই মানি! তাঁকে রাজনৈতিক পুনর্বাসন দিয়ে বিজয়ন ফের তাঁর দল ভারী করলেন। এবং এই সিদ্ধান্ত স্বভাবতই ইয়েচুরিদের জন্য ফের অস্বস্তির কারণ হল!
চার বছর আগে প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে মানি বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের অতীতেও খতম করেছে তাঁর দল। এই নিকেশের রাজনীতি তাঁরা করেই থাকেন! মানি তখন সিপিএমের এর্নাকুলাম জেলা সম্পাদক। সিপিএম নেতা নিজের মুখে খুন-খারাবির রাজনীতি করার কথা কবুল করে নিচ্ছেন, এই বার্তা ছড়িয়ে পড়তে একটুও সময় লাগেনি। সর্ব স্তরে প্রবল হইচই এবং তার জেরে অস্বস্তি তৈরি হওয়ায় মানিকে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে সরাতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন। পরে অবশ্য বিতর্কিত নেতার আবার দিন ফিরতে শুরু করেছিল। বিগত রাজ্য সম্মেলনের পরে তাঁকে কেরলে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা করে দিয়েছেন বিজয়ন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনেরা। এ বার সেখান থেকেই একেবারে মন্ত্রিসভায়! মানিকে বিদ্যুৎ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।
এক কালে যে দফতরের মন্ত্রী ছিলেন বিজয়ন নিজে এবং সেই সময়েই লাভালিল কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়িয়েছিল।
ইস্তফা দেওয়ার আগে জয়রাজন ছিলেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি পদত্যাগ করার পরে দফতরটি ছিল মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের কাছে। এ বার এ সি মইদিনকে শিল্প দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হল। আর মইদিনের হাত থেকে সমবায় ও যুবকল্যাণ নিয়ে দেওয়া হল কে সুরেন্দ্রনকে। যিনি এত দিন বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন। অর্থাৎ সব মিলে দু’জনের দফতর রদবদল এবং এক জনের অন্তর্ভুক্তি।
কে কোন দফতর পেলেন, সে সব ছাপিয়ে অবশ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মানির প্রত্যাবর্তনই। জয়রাজন-প্রশ্নে দলের পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিতর্ক ওঠার সম্ভাবনা। মানিকে নিয়ে সিদ্ধান্ত
তাতে আরও মাত্রা যোগ করবে বলেই দলের একাংশের ধারণা। সিপিএমের কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘‘ওই মন্তব্যের ঘটনা এখন অতীত। দল তাঁকে শাস্তি দিয়েছিল। মানিও দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে অতীতের বিষয় টেনে আনা অর্থহীন।’’ আর মানি রবিবার বলেছেন, ‘‘প্রথম বিধায়ক হয়েছি এ বারই। মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দিয়ে দল আমার উপরে আস্থা রেখেছে। দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব।’’
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য অবশ্য মেনে নিচ্ছেন, ‘‘মানির মতো কাউকে মন্ত্রিসভায় এনে কংগ্রেস এবং সঙ্ঘ পরিবারের হাতে নতুন করে হাতিয়ার তুলে দেওয়া হল! সিপিএম মানেই খুনের রাজনীতি করে, এই কথাগুলো ফের খুঁড়ে বার করা হবে!’’