সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই)-এর সভাপতি এবং গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মনোনীত করা হল মলয়ালম অভিনেতা ও রাজনীতিক সুরেশ গোপীকে। আজ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এই ঘোষণা করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যদিও সুরেশ এই দায়িত্ব নেবেন কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
অভিনেতার ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্তে খুশি নন তিনি। এ বিষয়ে আগে তাঁকে জানানো হয়নি বলেও খবর। টেলিভিশনে তাঁর নিয়োগের বিষয়টি জানতে পারেন বিজেপি ঘনিষ্ঠ এই রাজনীতিক। এর আগেই মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন তিনি।
অন্য দিকে এসআরএফটিআইয়ের ছাত্র সংগঠনের তরফেও সুরেশের তীব্র বিরোধিতা করা হয়। এক বিবৃতিতে সংস্থার ছাত্র সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানাচ্ছে তারা। বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের ২৫ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। বহু দুর্দান্ত সিনেমা ও পরিচালক উপহার দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। সেখানে সুরেশ গোপীকে কোনও ভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিরোধিতার কারণ হিসেবে সুরেশের হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা এবং বিজেপি যোগের উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, সুরেশের নানা মন্তব্য দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে বিপজ্জনক। কোনও বিশেষ দলের ঘনিষ্ঠতার সূত্রে যদি কোনও ব্যক্তিকে এসআরএফটিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তা প্রতিষ্ঠানের নীতি, নিরপেক্ষতা, শৈল্পিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে আপস ঘটাতে পারে। এতেসংস্থার ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংগঠনের।
ছাত্র সংগঠনের এই বিরোধিতাক আগেই অবশ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সুরেশ জানিয়েছিলেন এসআরএফটিআইয়ের দায়িত্ব নিতে চান না তিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই সিনেমার শুটিংয়ের কাজে দিল্লি যাচ্ছেন তিনি। সেই সময়ে তিনি মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে সূত্রের খবর।
সুরেশের এই মনোনয়ন ঘিরে বিতর্কের কারণ হিসাবে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টিও সামনে আসছে। এর আগে শোনা গিয়েছিল, আগামী লোকসভা নির্বাচনে ত্রিসূর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সুরেশ। তবে সে ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে এসআরএফটিআইয়ের মনোনয়ন। তিন বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে তাঁকে। সে ক্ষেত্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না সুরেশ। তাই অভিনেতার সমর্থকদের একাংশ আজ এক্স হ্যান্ডলে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, সুরেশ যাতে লোকসভায় দলীয় টিকিট না পান, সে জন্য দলের একাংশেরই কৌশলে এসআরএফটিআইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সুরেশ অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রসঙ্গত, সুরেশ মলয়ালমফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ। বহু তামিল, তেলুগু ও কন্নড় ছবিতেও অভিনয় করেছেন। ১৯৯৭ সালে কালিয়াট্টম সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)