স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমাজমাধ্যমে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের দেওয়া একটি বিজ্ঞাপন ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সেখানে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, ভগৎ সিংহের সঙ্গে বিনায়ক দামোদর সাভারকরেরও ছবি ছাপা হয়েছে। সঙ্গে লেখা, ‘স্বাধীনতা ছিল এঁদের দেওয়া উপহার। ভবিষ্যৎ গড়াই আমাদের লক্ষ্য।’ গান্ধী-সুভাষচন্দ্র-ভগতের সঙ্গে একাসনে সাভারকরকে বসানো নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নেট নাগরিকদের একাংশ।
তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীকে সমাজমাধ্যম এক্স-এ ট্যাগ করে আজ কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা লিখেছেন, ‘যেন গান্ধীকে হত্যা করাটা যথেষ্ট ছিল না, এখন ওঁরা গান্ধীর হত্যাকারীকে মহিমান্বিত করতে চান।’ এর পরেই তেলমন্ত্রীর নাম নিয়ে খেরা লিখেছেন, ‘এটাই এখন স্বাধীনতা দিবসের চেতনা। নিহত এবং হত্যাকারীকে এক করা।’ এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘প্রতি স্বাধীনতা দিবসে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ইতিহাসকে বিকৃত করে এবং বিশ্বাসঘাতকদের নায়ক হিসেবে দেখায়। যারা বিভেদ এবং ঘৃণার বীজ বপনের জন্য ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, তাদের থেকে আর কী আশা করা যায়!’ সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ জন ব্রিটাসের অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবেই ওই বিজ্ঞাপনে গান্ধীর পাশে সাভারকরের ছবি রাখা হয়েছে। জন বলেছেন, ‘‘সরকারের এই পদক্ষেপ ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের প্রতি জাতির অঙ্গীকারকে দুর্বল করে। সাভারকর গান্ধী হত্যার এক জন অভিযুক্ত ছিলেন, যদিও পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে তাঁকে মুক্ত করা হয়েছিল। তবে কপূর কমিশন সাভারকরের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় প্রমাণ তুলে ধরেছে।’’
ক্ষুব্ধ নেট ব্যববহারকারীদের একাংশ। এক্স হ্যান্ডলে এক জন যেমন লিখেছেন, ‘এক জন ক্ষমাপ্রার্থীর ছবি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে এক সারিতে রাখাটাই লজ্জাজনক’। আর এক জন আবার লিখেছেন, ‘এই সরকারের মতো আর কেউ গান্ধীজিকে অসম্মান করেনি। মোদীজি যখন বিদেশে যান তখন শুধুমাত্র গান্ধীজির নাম নেন, কারণ ওখানে সাভারকরকে কেউ চিনবে না।’
আজ মোদীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে আরএসএসের নাম উল্লেখ করারও সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, যে আরএসএস স্বাধীনতার পরে ৫২ বছর পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন পর্যন্ত করেনি, আজকের দিনে তাদের নাম উল্লেখ করে মোদী আসলে নিজের প্রধানমন্ত্রীর গদিটিই আরও পোক্ত করতে চাইছেন। সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত এর আগে বলেছিলেন, ৭৫ বছর বয়স হয়ে গেলে যে কারওরই নিজের পদ ছেড়ে নতুন প্রজন্মকে জায়গা করে দেওয়া উচিত। অনেকে মনে করেছিলেন, নাম না-করে মোদীকেই এই বার্তা দিয়েছিলেন সরসঙ্ঘচালক। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ আজ সেই সূত্রেই এক্স হ্যান্ডলে তোপ দেগে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ টায়ার্ড ছিলেন। খুব শীঘ্রই উনি রিটায়ার্ডও হবেন।’ আগামী মাসে পঁচাত্তরে পড়বেন মোদী। তার পরেও তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে চান বলেই আজ আরএসএস-নাম করেছেন বলে খোঁচা দিয়েছে কংগ্রেস। দলের নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেছেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, লাল কেল্লার ভাষণ থেকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এমন এক সংগঠনের নাম নিয়েছেন, যাদের থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নাথুরাম গডসে গান্ধীজিকে হত্যা করেছিলেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)