আগামী ১ অক্টোবর ওই রুটে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের বর্ষপূর্তি। সেই দিনটি ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি ‘ধিক্কার দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে স্মারকপত্র দিয়ে নতুন ব্রডগেজ লাইনে এখনও যাত্রিবাহী ট্রেন না চালানোর কারণ খুঁজতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করানোর আর্জি জানাবেন। ১৪ অক্টোবর বদরপুরে রেলের আঞ্চলিক ম্যানেজারের কার্যালয় ঘেরাও করবেন তাঁরা। একে বৃহত্তর রূপ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চলের গণ-সংগঠনগুলিকে সামিল করানোর জন্য তাঁরা সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ১৪ তারিখের কার্যসূচি সফল করতে জায়গায় জায়গায় পথসভা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগ্রাম কমিটির তিন আহ্বায়ক— অজয় রায়, অরুণাংশু ভট্টাচার্য ও সুশীল পাল।
যাত্রিবাহী ট্রেন না চললে ১০ অক্টোবর থেকে ওই ব্রডগেজ লাইনে মালগাড়িও চলতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন সংগঠন। সংগ্রাম কমিটি এতে সমর্থন জানিয়েছে।
লামডিং-শিলচর ব্রডগেজে প্রথম ইঞ্জিন পৌঁছয় এ বছরের ১৩ মার্চ। বিজেপি জায়গায় জায়গায় সেটিকে স্বাগত জানায়। মোদী সরকারের পক্ষে স্লোগান ওঠে। কৃতিত্ব চাপা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গেরুয়া বাহিনী শিলচর স্টেশনে অন্যদের মাইক বাজানোও বন্ধ করে দিয়েছিল। কংগ্রেস দাবি করেছিল— যত বছরই লাগুক, ৯০ শতাংশ কাজ ইউপিএ সরকারের আমলেই শেষ হয়েছে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য, আন্দোলনের চাপেই ছ’মাসের মেগাব্লকের মধ্যেই লাইন পরিবর্তনের কাজ শেষ করেছে রেল। কাদের আন্দোলন কত তীব্র ছিল, তা নিয়েও দাবি-পাল্টা দাবি শোনা যায় দীর্ঘদিন।
২৭ মার্চ মালগাড়ি চলল বটে, কিন্তু যাত্রিবাহী ট্রেন আজও চালু হয়নি। সংগ্রাম কমিটির অভিযোগ, কৃতিত্বের লড়াইও থেমে গিয়েছে। বিজেপি হিসেব কষছে, বিধানসভা ভোটের আগে ট্রেন চললেই হল। সাংসদের চিঠি লেখা আর বিবৃতির মধ্যে আটকে রয়েছে কংগ্রেস। রেলকর্তাদের সমালোচনা করে সংগ্রাম কমিটি রেলের সেফটি কমিশনারের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান। নির্মাল্য দাস, মলয় ভট্টাচার্য, সুনীল রায় বলেন— ‘রেল এখন ওই রিপোর্টের কথা বলে যাত্রিবাহী ট্রেন চালানো পিছিয়ে দিচ্ছে। অথচ ৩২ কিলোমিটার নতুন লাইনে (ডাইভারশন) কাজ চলার সময় কমিটির প্রতিনিধিদল যখন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তখন রেল বিভাগ সমস্ত আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছিল। দাবি করেছিল, আধুনিক প্রযুক্তিতে তাঁরা অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলবেন। এখন কোথায় সেই হাঁক-ডাক?’
সংগ্রাম কমিটির বক্তব্য, রেল মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। গত ছ’মাসে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ৯০টি মালগাড়ি এই রুটে শালচাপড়ায় এসেছে। যাত্রিবাহী ট্রেন আসতে পারবে না, তা মানা যায় না। তা ছাড়া ওই প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারদের ভাল কাজের জন্য কয়েক দিন আগে রেল দফতর পুরস্কৃত করেছে। সংগ্রাম কমিটির প্রশ্ন, যাত্রীট্রেন চালানো না গেলে পুরস্কার কেন? আর পুরস্কার দেওয়ার ব্যাপারটি যুক্তিসঙ্গত হলে যাত্রিবাহী ট্রেন চলছে না কেন? তারা রাজ্য সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেন। নিজের রাজ্যে এত দিন ধরে একটি রুটে ট্রেন চলছে না, মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও শব্দ করলেন না বলে তাঁরা আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
অজয়বাবু বলেন, ‘‘শুধু কি আর দক্ষিণ অসম! এই রুটে ট্রেন চলার অপেক্ষায় মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মণিপুরের মানুষও। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই।’’
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার অজিত পণ্ডিত জানান, বৃষ্টি না থামলে যাত্রিবাহী ট্রেন চালানোর ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না। লাইন বা সুড়ঙ্গ-সেতু, কোথাও কাজ খারাপ হয়েছে এমন নয়। না হলে এত মালগাড়ি চলত না। সেফটি কমিশনার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করায় বর্ষার মরসুম অপেক্ষা করা হচ্ছে। তাঁরা যে যাত্রিবাহী ট্রেন চালাতে পুরোপুরি প্রস্তুত, সেই দাবি করে তিনি নির্বিঘ্নে যাত্রা শুরুর জন্য কয়েকটা দিন সকলকে অপেক্ষা করতে বলেন।
তবে আগামী বর্ষায় কী হবে, এই প্রশ্নে অজিতবাবু আশ্বস্ত করেন, এক বার ট্রেন চলতে শুরু করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy