Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪
UNICEF

৩ লক্ষ শিশুমৃত্যুর আশঙ্কা দেশে, বলছে ইউনিসেফ

ভাল নেই করোনা হানা দেওয়ার ঠিক আগে স্কুলের গণ্ডি পেরনো ৬০ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীও।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

করোনার কামড়ে কাজ হারিয়ে ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের ফের দারিদ্রসীমার নীচে ফিরে যেতে পারেন, সে সম্ভাবনার কথা আগেই তুলে ধরেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এ বার ইউনিসেফের সমীক্ষায় উঠে এল অতিমারির থাবায় শৈশব ছারখার হওয়ার আশঙ্কা।

ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনার জেরে মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ থাকার প্রভাব সরাসরি পড়ছে এ দেশের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের ২৪.৭ কোটি পড়ুয়ার উপরে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যে ২.৮ কোটি শিশু প্রাক-স্কুল পড়াশোনা করে, এই রোগের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে তাদের উপরেও। জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেল্‌থের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনার কারণে নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ ধাক্কা খাওয়ায় শুধু ভারতেই ৬ মাসে মারা যেতে পারে ৩ লক্ষ শিশু!

ভাল নেই করোনা হানা দেওয়ার ঠিক আগে স্কুলের গণ্ডি পেরনো ৬০ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীও। তাদের কেউ বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেটের অভাবে অনলাইন পড়াশোনার চৌহদ্দির বাইরেই থেকে যাচ্ছেন, অনেককে পড়তে হচ্ছে অবসাদ কিংবা বাড়িতে তিতিবিরক্ত অভিভাবকের খপ্পরে।

আরও পড়ুন: ‘হার্ড ইমিউনিটি’ পেতে কত খেসারত?

করোনায় স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে ডিজিটাল পড়াশোনায় জোর দেওয়ার কথা গোড়া থেকেই বলছে কেন্দ্র। এ জন্য বিভিন্ন অ্যাপ, পোর্টাল, এমনকি টিভি চ্যানেলও চালু করেছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। বিকল্প শিক্ষা-নির্ঘণ্ট তৈরি করেছে এনসিইআরটি। সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও ইউনিসেফের আশঙ্কা, ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মাত্র ২৪ শতাংশ পরিবার। দেশের বহু প্রত্যন্ত প্রান্তে নেট সংযোগ তো দূর, দিনভর নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সংযোগই পৌঁছয়নি এখনও। ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম-শহর আর ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বৈষম্যও যথেষ্ট। এ সবেরই খেসারত পড়ুয়াদের দিতে হচ্ছে বলে সমীক্ষায় দাবি।

স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়— সমস্ত স্তরের পড়ুয়াদের এক বড় অংশ দীর্ঘ দিন ধরে বলছেন, কেন্দ্র জোর করে ডিজিটাল পড়াশোনা এবং অনলাইন পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ঠিকই। কিন্তু দেশের বহু জায়গায় নেট এবং বিদ্যুৎ অমিল। অনেকের সামর্থ্য নেই ল্যাপটপ, স্মার্টফোন কেনার। স্মার্টফোন থাকলেও নিয়মিত ইন্টারনেট ডাটা জোগানোর সামর্থ্য নেই। স্কুল-কলেজ ছুটি থাকায় বাড়ির কাজে হাত লাগাতে হয়েছে বহু ছাত্রীকে। অনেকের বাড়িতে বাবা-মা দু’জনে কাজে বেরোলেও তাই নেট-নির্ভর পড়াশোনায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া প্রবল চাপ তৈরি করছে তাঁদের মনে। সেই আশঙ্কার প্রতিফলন এ দিন দেখা গেল ইউনিসেফের সমীক্ষাতেও।

আরও পড়ুন: এত দিন নিজেকে মহিলা বলেই জানতেন, ক্যানসার চেনাল আসলে তিনি পুরুষ!

বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে বাড়ির রোজগেরে কাজ খোয়ালে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেকের। বহু শিশু বাধ্য হচ্ছে রোজগারের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিতে। বাড়ছে শিশুশ্রম, বালিকা বিবাহও। বাড়িতে তিতিবিরক্ত বড়দের খারাপ ব্যবহার, এমনকি মারধরেরও শিকার হচ্ছে তারা। ২০ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে চাইল্ডলাইনে আসা ফোনের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ!

অতিমারির কোপ পড়ছে স্বাস্থ্যেও। অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ কিংবা নিদেন পক্ষে থমকে থাকছে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা কিংবা প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি। আয়ে কোপ পড়ায় পারিবারিক অনটনের কারণে ঘাটতি হচ্ছে খাবারে। বাড়ছে অপুষ্টি। বিশেষত মেয়েদের। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, এর ফলে আগামী দিনে সদ্যোজাত মৃত্যুর হারও লাফিয়ে বাড়ার সম্ভাবনা।

ভারতে ইউনিসেফের প্রতিনিধি ইয়াসমিন আলি হকের মতে, শুধু ভাইরাসের আক্রমণ নয়, করোনায় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক-মানসিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে বহু শিশুর। তাদের বেড়ে ওঠা থেকে শিক্ষা— থমকে যাচ্ছে সব কিছুই। এই ভয়াল ছবি অবশ্য পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই। সমীক্ষা অনুয়ায়ী, সেখানে এর মাসুল গুনতে হচ্ছে ৬০ কোটি শিশুকে। ইউনিসেফের দক্ষিণ এশীয় ডিরেক্টরের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ৬ মাসে ৪.৫৯ লক্ষ শিশু এবং মায়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে শুধু প্রতিষেধক, পুষ্টি আর স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy