— ছবি সংগৃহীত
চলতি বছরে দেশে দু’শো কোটি করোনা প্রতিষেধক উৎপাদন সম্ভব হবে বলে দাবি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ভাইরোলোজিস্ট গগনদীপ কঙ্গ। বর্তমানে দেশে প্রতিষেধক উৎপাদনের প্রশ্নে সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক যত ক্ষণ উৎপাদন না বাড়াচ্ছে, তত ক্ষণ ওই লক্ষ্যমাত্রায় কী ভাবে পৌঁছনো সম্ভব— তা নিয়ে সংশয়ে তিনি। করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্বে সরকারের বায়োটেকনোলজি দফতরে কর্মরত থাকলেও, নীতিগত মনোমালিন্যের কারণে সরকারি পদ ছেড়ে দেন ওই ভাইরোলজিস্ট। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর প্রতিষেধক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য কঙ্গ।
করোনাকালে দেশে জুড়ে টিকার হাহাকার। কম বয়সিরা তো বটেই, বয়স্কেরাও যাঁরা প্রথম ডোজ় পেয়েছেন, তাঁরাও সময় মতো দ্বিতীয় ডোজ় পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সপ্তাহে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল দাবি করেছিলেন, আগামী অগস্ট-ডিসেম্বরে প্রায় দুশো কোটির বেশি টিকা উৎপাদনে সক্ষম হবে ভারতীয় প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। কিন্তু সরকারের ওই পরিকল্পনা সম্পর্কে কঙ্গের মত, যতক্ষণ না ওই দুই সংস্থা উৎপাদন না-বাড়াচ্ছে, ততক্ষণ লক্ষ্যপূরণ সম্ভব নয়। অতীতের উদাহরণ তুলে তিনি বলেছেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে সিরাম দাবি করেছিল ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই তারা অন্তত ১০ কোটি প্রতিষেধক মজুত রাখতে সক্ষম। আর ভারত বায়োটেকের দাবি ছিল, তারা মজুত করতে পারবে অন্তত ১ কোটি প্রতিষেধক। বাস্তবে নিজেদের সেই দাবি পূরণে ব্যর্থ হয় সংস্থাগুলি।’’
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন, বছরের শেষে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, তৃতীয় ঢেউ আসার আগে জনসংখ্যার বড় অংশকে টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তা হলেই আমজতাকে রোগ থেকে অনেকটা রক্ষা করা যাবে। সরকারের দাবি, তারাও জুলাইয়ের মধ্যে ৫১.৬ কোটি লোক ও ডিসেম্বরের মধ্যে ৯৫ কোটি মানুষকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন আজ করোনা সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে দাবি করেছেন, কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গেই দেশে পৌঁছে গিয়েছে রুশ টিকা স্পুটনিক ভি। এ ছাড়া ভারত বায়োটেকের ন্যাসাল ভ্যাকসিন ও জাইডাস ক্যাডিলার ডিএনএ টিকার উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে হর্ষ বর্ধনের দাবি, বাড়ানো হয়েছে রেমডেসিভিয়ার উৎপাদন। করোনা রোগীদের শরীরে যে ফাঙ্গাল বা ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেটির কথা মাথায় রেখে দেশে অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি-এর উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে বলে মন্ত্রিগোষ্ঠীকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, আমজনতার যাতে বুঝতে সুবিধে হয়, তাই কো-উইন অ্যাপ্লিকেশন আঞ্চলিক ভাষাতেও বাজারে আসতে চলেছে।
টিকা উৎপাদন নিয়ে হর্ষ বর্ধনের দাবি সম্পর্কে কঙ্গের প্রশ্ন, ‘‘ন্যাসাল প্রতিষেধক ভাল হলেও এর কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। করোনার মতো সংক্রমণের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষেধক কতটা কার্যকর হবে, তা প্রমাণের জন্য প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে।’’ তিনি মনে করেন, জাইডাস ক্যাডিলা যে ডিএনএ ভ্যাকসিন বানিয়েছে তা-ও কতটা কার্যকর হবে, তা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফলের উপরে অনেকাংশে নির্ভর করছে। এই ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘এর আগে এ দেশে মানবদেহে ডিএনএ প্রতিষেধক প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই চূড়ান্ত ফলাফল না দেখে এ বিষয়ে কিছুই বলা সম্ভব নয়।’’
আচমকা টিকা-নীতি বদলের জন্য সরকারের সমালোচনা করেছেন কঙ্গ। টিকা বণ্টনের প্রশ্নে পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশের পরে কর্নাটক সরকারের পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছেন কঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘গত অগস্টে সরকার রাজ্যগুলিকে আশ্বাস দিয়েছিল, রাজ্যগুলির নিজে থেকে প্রতিষেধক সংগ্রহ করার দরকার নেই। কেন্দ্রই প্রতিষেধক জোগাবে। কিন্তু মে মাস থেকে টিকা প্রশ্নে নতুন নীতি নেয় সরকার।’’ কঙ্গের মতে, কেন্দ্রের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে টিকার জন্য রাজ্যগুলিকে কার্যত একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। প্রতিষেধক পাওয়ার ক্ষেত্রে সব রাজ্যকে সমসুযোগ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy