Advertisement
E-Paper

ট্রেনের টিকিট চেয়ে হন্যে পরিযায়ীরা

এ রাজ্যের বহু মানুষ কর্মসূত্রে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, রাজস্থানে থাকেন। এঁদের কেউ স্বর্ণশিল্পী, কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ জরিশিল্পী।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৭:১৩
দিল্লিতে ছ’দিনের লকডাউন ঘোষণার পরে বাড়ির পথে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। মঙ্গলবার গাজিয়াবাদে।

দিল্লিতে ছ’দিনের লকডাউন ঘোষণার পরে বাড়ির পথে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। মঙ্গলবার গাজিয়াবাদে। ছবি রয়টার্স।

গত বছরের স্মৃতি এখনও দগদগে। তাই ভিন্‌ রাজ্যের কোথাও লকডাউন, কোথাও কার্ফু শুরু হতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিযায়ীরা। অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছেন। কেউ কেউ চলে এসেছেন। কেউ টিকিটের জন্যে হন্যে। অনেকে আবার ক’দিন সবুর করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষপাতী।

এ রাজ্যের বহু মানুষ কর্মসূত্রে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, রাজস্থানে থাকেন। এঁদের কেউ স্বর্ণশিল্পী, কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ জরিশিল্পী। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঘায়ে রাজধানী দিল্লিতে লকডাউন শুরু হয়েছে। বর্ধমানের আভা শর্মা সেখানে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। রবিবার গ্রামে ফিরেছেন তিনি। আভা বলেন, ‘‘দিল্লি জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ। লকডাউন হবে শুনেই ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। ট্রেনের টিকিট পেতেই আর দেরি করিনি।’’ মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহারের অনেক পরিযায়ী শ্রমিকও বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদেরই একজন কালিয়াচকের শ্রীমন্ত সাহা। তিনি মুম্বইয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন।। মুম্বইয়ে নাইট কার্ফু চলছে। শ্রীমন্ত বলছেন, ‘‘আবার লকডাউন হলে ফিরব কী ভাবে ভেবেই আগেভাগে চলে এসেছি।’’

করোনার দ্বিতীয় পর্বে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও দাসপুরের একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন। কারও মৃত্যু হয়েছে ফিরে, কেউ আবার ভিন্ রাজ্যেই মারা গিয়েছেন। ফলে, ফেরার টিকিট কাটতে কেউ রাত জাগছেন স্টেশনে, কেউ লাইন দিচ্ছেন ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে। দাসপুরের সুভাষ মালিক ও সঞ্জয় সাঁতরা মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে কাজ করেন। মঙ্গলবার তাঁরা ফোনে জানালেন, এখন কাজ নেই। বাড়ি ফেরার টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না। দিল্লির স্বর্ণকার সেবা সঙ্ঘের কার্তিক ভৌমিক এবং মু্ম্বইয়ের স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের কালিদাস সিংহ রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘গত বছরের মতো বাড়ি ফেরার হিড়িক পড়েছে, এমনটা এখনই বলা যাবে না।’’

বীরভূমের মুরারইয়ের অনেকে দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করেন। সপ্তাহ শেষে উপার্জনের বেশিরভাগটাই বাড়িতে পাঠান তাঁরা। সাত দিন রোজগারহীন হলে কী হয়, গত বছর দেখেছেন। অনেকেই তাই আলু, চাল, মুড়ি কিনে রাখছেন। পাইকরের আসাদুল শেখের কথায়, ‘‘গত বছর গরু-ছাগল বেচে টাকা পাঠিয়েছিল পরিবার। তারপর বাস ভাড়া করে ফিরেছিলাম। বাজারে অনেক টাকা ধার। আবার লম্বা লকডাউন হলে পথে বসতে হবে।’’ দিল্লির লকডাউনে আটকে পড়া জুতো কারখানার শ্রমিক বাঁকুড়ার ইঁদপুরের হিরাশোল গ্রামের সুমন্ত তন্তুবায়, গঙ্গাজলঘাটির গোবিন্দধামের সুমন তন্তুবায়েরাও বলছেন, ‘‘লকডাউন দীর্ঘ হলে সমস্যায় পড়ে যাব।’’ পাঁশকুড়ার দীপঙ্কর বেরা রাজস্থানে সোনার কারিগর। তাঁর কথায়, ‘‘বিক্রি কমে যাওয়ায় বেতনও কমেছে। মালিক বলেছে, আর কিছুদিন দেখে আমাদের ছেড়ে দেবে। তখন বাড়ি ফিরতেই হবে।’’ পুণেতে হোটেলে কাজ করেন নদিয়ার চাপড়ার সেলিম বিশ্বাস। সেখানে হোম ডেলিভারি বাদে দিয়ে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। বন্ধ হয়েছে হোটেলও। তবে চার দিন ধরে চেষ্টা করেও মিলছে না ট্রেনের টিকিট।

রুজির কথা ভেবেই অনেকে আবার ফিরছেন না। হাওড়ার পাঁচলা এবং ডোমজুড়ের বহু শ্রমিক দিল্লিতে জরি ও সোনার কাজ করেন। ফোনে তাঁদের কয়েকজন জানালেন, ফিরবেন না। কারণ, গ্রামেও কাজ নেই। হুগলির খানাকুলের তারকনাথ দলুই ম্যাঙ্গালোরে গয়না শিল্পী। গত বছর সাত মাস বাড়িতে থেকে ১০০ দিনের কাজটুকুও পাননি। তাই ফেরার কথা ভাবছেন না। দিল্লির একটি ডায়াগনস্টিক কেন্দ্রের কর্মী হাসনাবাদের বিনয় পোড়েও বলেন, “ লকডাউনের সময়সীমা বেড়ে গেলে বেতন গত বছরের মতো কমে যেতে পারে। তবে বাড়ি ফিরছি না। কারণ ওখানে কাজকর্ম নেই।’’

Corona Migrant Workers COVID-19 coronavirus Coronavirus in India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy