Advertisement
E-Paper

হরিয়ানায় ঘরমুখী শ্রমিকদের ফেলে পেটাল পুলিশ, অশান্তি উত্তরপ্রদেশেও

ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ নির্মম ভাবে লাঠিপেটা করছে শ্রমিকদের। শ্রমিকরা সঙ্গের জিনিসপত্র ফেলে যে যে দিকে পারছেন ছুটে পালাচ্ছেন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ১৬:৫২
হরিয়ানায় পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ। ছবি: টুইটারের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া

হরিয়ানায় পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ। ছবি: টুইটারের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া

পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য চালু হয়েছে বিশেষ ট্রেন। বাসে করেও ফেরানো হচ্ছে। কিন্তু এই বন্দোবস্তের বাইরেও বহু শ্রমিক ঘরে ফিরছেন নিজেদের উদ্যোগে। তাঁদের দুর্দশা আরও ভয়াবহ। দিনের পর দিন হেঁটে চলেছেন অনেকে। কেউ সাইকেল চালিয়ে ঘরমুখী। অনেকে আবার নিজেদের মতো করে গাড়ি ভাড়া করে গাদাগাদি হয়ে ফিরছেন। কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই। কোথাও পুলিশের চোখরাঙানি, কোথাও দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের আরও এক দুর্দশার ছবি ধরা পড়ল হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে। হরিয়ানায় নির্বিচারে পরিযায়ী শ্রমিকদের বেধড়ক পেটাল পুলিশ। উত্তরপ্রদেশে সরকারি নির্দেশিকা উপেক্ষা করে ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়লেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।

পঞ্জাব ও হরিয়ানার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উত্তরপ্রদেশে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন এক দল শ্রমিক। তাঁদের কেউ হেঁটে, কেউ বা সাইকেলে ফিরছিলেন। কিন্তু মূল রাস্তা দিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ সরকারি নির্দেশিকা। সেই নির্দেশিকা কার্যকর করতে রাস্তায় রাস্তায় বসেছে পুলিশি প্রহরা। এই পরিযায়ীদের দলটি তাই ভিন্ন পন্থা নিয়েছিলেন। গ্রাম-গঞ্জের সরু রাস্তা, চাষের জমির আল বা নদী, নালা পেরিয়ে ফেরার চেষ্টা করছিল এই দলটি। কিন্তু বাধা পান হরিয়ানার যমুনানগরে এসে। তুলনায় একটু বড় রাস্তায় উঠতেই তাঁদের আটকায় পুলিশ।

শ্রমিকদের বক্তব্য, তাঁরা যে ভাবেই হোক উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু হরিয়ানা সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী, শুধুমাত্র সরকারি ত্রাণ কেন্দ্রে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদেরই ঘরে ফেরার অনুমতি দিয়েছে সরকার। নিজেদের চেষ্টায় যাঁরা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, বা কর্মস্থলে মালিক যাঁদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা ফিরতে পারবেন না। পুলিশ সেই যুক্তিতেই তাঁদের আটকায়। কিন্তু তাঁরা নাছোড়। শেষ পর্যন্ত বেধড়ক লাঠিচার্জ করে তাঁদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।

সেই ঘটনার ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ নির্মম ভাবে লাঠিপেটা করছে শ্রমিকদের। আর শ্রমিকরা নিজেদের সাইকেল বা সঙ্গের জিনিসপত্র ফেলে যে যে দিকে পারছেন ছুটে পালাচ্ছেন। কেউ ঢুকে পড়েছেন লাগোয়া চাষের জমির মধ্যে। তাঁদেরও তাড়া করে পেটাচ্ছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: শঙ্কা বাড়াচ্ছে সংক্রমণ, ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়াল মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু

অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশের সীমানায় এসেও ঢুকতে পারছিলেন না এক দল শ্রমিক। মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেউ হেঁটে, কেউ বা সাইকেলে বা অন্য কোনও উপায়ে রেওয়ার কাছে চকঘাটের কাছে মধ্যপ্রদেশের সীমানায় পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, পায়ে হেঁটে কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ফলে রাজ্যের সব প্রবেশপথে বসেছে কড়া পুলিশি প্রহরা। তৈরি হয়েছে ব্যারিকেড। কিন্তু রেওয়ার ওই শ্রমিকরা সেই ব্যারিকেড ভেঙেই ঢুকে পড়েন উত্তরপ্রদেশের অভ্যন্তরে।

হরিয়ানার ঘটনায় আহত এক শ্রমিক বলেন, ‘‘এখানে আর কোনওদিন ফিরে আসব না। পঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে আমরা টানা ছ’দিন ধরে হেঁটে এই পর্যন্ত এসেছি। পুলিশ সাহায্যের বদলে আমার পেটাল।’’ অন্য এক ব্যক্তি বলেন, প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী চণ্ডীগড় শহর থেকে সাইকেলে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। হাইওয়ে এবং লিঙ্ক রোড ধরে যে হেতু সাইকেলে বা হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই তাই ঘাঘর নদী, ছোট ছোট নালা, চাষের জমি পেরিয়ে কোনওক্রমে এই পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। কিন্তু পুলিশ আটকে দিল। যদিও পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘পঞ্জাব ও হিমাচল থেকে এক দল শ্রমিক উত্তরপ্রদেশের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁদের যেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তাঁরা না শোনায় পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।’’

আরও পড়ুন: চালু হবে মেট্রো পরিষেবা? খুলবে মল? চতুর্থ দফার লকডাউন নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

কর্মস্থলে রোজগার বন্ধ। খাবারে টান। মাথার উপর ছাদ জুটেছে কারও। কেউ খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছিলেন। সেই অবস্থা কেন্দ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরায় ছাড়পত্র দিতেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছেন বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু সেই ফেরায় যে পদে পদে বিপদ, তার ছবি উঠে আসছে প্রতিদিন। অওরঙ্গাবাদে রেল দুর্ঘটনা হয়েছে। অহরহ ঘটছে পথ দুর্ঘটনা। তার উপর পুলিশি এই অত্যাচার। সব মিলিয়ে দেশে জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহায় ছবিই উঠে আসছে সর্বত্র।

Coronavirus Covid-19 Coronavirus Lockdown Haryana Uttar Pradesh Lathicharge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy