Advertisement
০৭ মে ২০২৪
National News

১৪০০ কিমি স্কুটি চালিয়ে অন্ধ্রে আটকে পড়া ছেলেকে ফেরালেন তেলঙ্গানার মহিলা

মায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গেলেও কিছুতেই বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না রাজিয়ার ছেলে।

ছেলেকে স্কুটিতে নিয়ে তেলঙ্গানার বাড়িতে ফিরছেন রাজিয়া বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

ছেলেকে স্কুটিতে নিয়ে তেলঙ্গানার বাড়িতে ফিরছেন রাজিয়া বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৪০
Share: Save:

ছেলেকে কাছে পেয়ে হাসি যেন থামতেই চাইছে না রাজিয়া বেগমের। দেশ জুড়ে ২১ দিনের লকডাউনের ফলে অন্ধ্রপ্রদেশে এক বন্ধুর বাড়িতে আটকে পড়েছিলেন রাজিয়ার বছর উনিশের ছেলে। প্রায় দু’দিন ধরে ১৪০০ কিলোমিটার স্কুটি চালিয়ে অবশেষে তাঁকে তেলঙ্গানায় বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন রাজিয়া। সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়ার এই সাহসিকতায় মুগ্ধ রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।

মায়ের এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন হায়দরাবাদে একটি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া মহম্মদ নিজামউদ্দিনও। তিনি জানিয়েছেন, ১২ মার্চ এক বন্ধুর অসুস্থ বাবাকে দেখতে তাঁর সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের রহমতাবাদে রওনা হয়েছিলেন। নেল্লোরে বন্ধুর বাড়ি থেকে তাঁদের তেলঙ্গানার বাড়িতে ফিরতে ২৩ মার্চের ট্রেনের রিটার্ন টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকেই দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। ফলে নেল্লোরের রহমতাবাদে বন্ধুর বাড়িতেই আটকে পড়েন নিজামউদ্দিন। মায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গেলেও কিছুতেই সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না।

এ দিকে গোটা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছিল রাজিয়ার। তেলঙ্গানায় নিজামাবাদের বোধন এলাকায় বাসিন্দা রাজিয়া ছেলেকে ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেন। বোধনের এসিপি ভি জয়পাল রেড্ডির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করলেও ছেলেকে ফেরানোর কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। লকডাউনের ফলে বাস-ট্রেন সবই বন্ধ। অবশেষে স্থির করেন নিজের স্কুটিতে করেই ছেলেকে ফিরিয়ে আনবেন। কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন রাজিয়া? বোধনের একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া জানিয়েছেন, নেল্লোরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ফলে ছেলের জন্য বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। বন্ধুর বাড়িতে থাকলেও নিজের খেয়াল রাখতে পারছে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার ছুঁইছুঁই, ২৪ ঘণ্টায় মৃত আরও ৩৩

অবশেষে বোধনের এসিপি-র থেকে একটি অনুমতিপত্র জোগাড় করে ৫ এপ্রিল, সোমবার সকালে স্কুটিতে করে নেল্লোরের উদ্দেশে রওনা দেন রাজিয়া। ২৫ বছর ধরে স্কুটি চালালেও তাতে চড়ে এতটা পথ কখনও পাড়ি দেননি রাজিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে আর কোনও উপায় ছিল না। গাড়ি ভাড়া যে করব, সে ব্যবস্থাও নেই। কারণ লকডাউনের সময়ে কেউ রাজি হবে না। তা ছাড়া, কোনও ভাবে গাড়ির ব্যবস্থা করলেও হাইওয়েতে পুলিশ তা আটকে দিতে পারে। মনে হল, একা স্কুটিতে চড়ে গেলে হয়তো পুলিশকে বোঝাতে পারব, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি।’’

রাজিয়া বেগমের সাহসিকতায় মুগ্ধ অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত।

ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে যে একাই নেল্লোর যাচ্ছেন, সে কথা নিজের ভাই-বোনকেও জানাননি রাজিয়া। এমনকি জানতেন না রাজিয়ার ছেলেও। রাজিয়া বলেন, ‘‘হায়দরাবাদের থেকে কিছুটা দূরে টুপরানে গিয়ে ছেলেকে জানাই স্কুটিকে করে ওকে ফিরিয়ে আনতে রওনা হয়েছি।’’

আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় উজ্জ্বল রামমূর্তি, সুগন্ধারা

স্কুটিতে এতটা পথ পাড়ি দিতে সঙ্গে রুটি-তরকারি বানিয়ে নিয়েছিলেন রাজিয়া। সেই সঙ্গে রেখেছিলেন ৫ লিটারের পেট্রলও। তা ছাড়া, জাতীয় সড়কে যেখানেই পেট্রল পাম্প দেখেছেন, তেল ভরে নিয়েছেন স্কুটিতে। রাজিয়া বলেন, ‘ভাগ্য ভাল যে স্কুটি ব্রেকডাউন হয়নি। পেট্রল পাম্পে তেল ভরা ছাড়াও ১৫-২০ মিনিটের বিশ্রাম নিতাম।’’

এতটা পথ পাড়ি দিতে কখনও পুলিশের বাধার মুখে পড়েননি? রাজিয়া বলেন, ‘‘তেলঙ্গানা-অন্ধ্রপ্রদেশের সীমানায় এক বার পুলিশ আটকেছিল। তখন বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। আমাকে দেখে ওঁরা তো একেবারে অবাক। এত রাতে হাইওয়ে দিয়ে যাওয়াটা যে নিরাপদ নয়, তা-ও বলছিলেন পুলিশকর্মীরা। ওঁদের বেশ কষ্ট করেই বোঝাতে হয়েছে যে আমি ছেলেকে আনতে যাচ্ছি।’’

অবশেষে ছেলের দেখা পেলেন রাজিয়া বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

আর এক বার নেল্লোরের কাছে এক পুলিশফাঁড়িতে রাজিয়াকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। রাজিয়া জানিয়েছেন, রাত তখন ২টো। তবে রাজিয়ার কথা শুনে তাঁকে পুলিশকর্মীরা পরামর্শ দেন, রাস্তার ধারে একটি শেলটার হাউসে থাকতে। রাজিয়া বলেন, ‘‘সেখানেই ভোর ৪টে পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফের রওনা দিয়েছিলাম।’’ সেখান থেকেই ছেলেকে ফোন করে জানান, তিনি প্রায় এসে গিয়েছেন। অবশেষে প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা ছেলের দেখা পান রাজিয়া।

রাজিয়ার এই কীর্তিতে মুগ্ধ বোধনের এসিপি। তিনি বলেন, ‘‘মহিলা অসম সাহসী! আমি ওঁকে গাড়িভাড়া করতে বলেছিলাম। তবে ওঁর কাছে গাড়িভাড়া করার অত টাকা ছিল না। ফলে স্কুটিতেই রওনা হন। আমাকে একটি অনুমতিপত্র লিখে দিতে বলেন, যাতে পুলিশফাঁড়িতে ওঁর স্কুটি আটকালে বলতে পারেন, কিসের জন্য একা একা স্কুটিতে বেরিয়েছেন। ছেলের জন্য যা করেছেন, তা সত্যিই তারিফযোগ্য!’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE