Advertisement
E-Paper

বেকসুর আম্মা বললেন, আমি এখন খাঁটি সোনা

সলমন খান জামিন পেয়েছিলেন দশ মিনিটে। আর জয়ললিতা মুক্তি পেলেন দশ সেকেন্ডে। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় নিম্ন আদালতের রায়কে খারিজ করে দিয়ে সোমবার কর্নাটক হাইকোর্ট বেকসুর ঘোষণা করল তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। এবং তার ফলে তাঁর সামনে ফের খুলে গেল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:০৪
জয়ললিতার মুক্তিতে উৎসবের মেজাজ। সোমবার চেন্নাইয়ে। ছবি: রয়টার্স।

জয়ললিতার মুক্তিতে উৎসবের মেজাজ। সোমবার চেন্নাইয়ে। ছবি: রয়টার্স।

সলমন খান জামিন পেয়েছিলেন দশ মিনিটে। আর জয়ললিতা মুক্তি পেলেন দশ সেকেন্ডে। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় নিম্ন আদালতের রায়কে খারিজ করে দিয়ে সোমবার কর্নাটক হাইকোর্ট বেকসুর ঘোষণা করল তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। এবং তার ফলে তাঁর সামনে ফের খুলে গেল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা।

রায় শোনার পরে জয়ললিতা বলেন, ‘‘আগুনে পুড়ে আজ আমি আরও খাঁটি সোনা। আদালতের রায়ে এটাই প্রমাণিত হল যে, আমি কোনও ভুল করিনি।’’ আর তাঁর চিরবিরোধী করুণানিধি? তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘সব আদালতের উপরে রয়েছে বিবেকের আদালত। সেখানেই আসল বিচার হবে।’’ সিপিএম অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার দাবি জানিয়েছে। যাঁর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন জয়া, সেই বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।

ঘটনা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট থেকেই প্রথম জামিন পান জয়ললিতা। এ দিন শীর্ষ আদালতেরই ৩৮ বছরের পুরনো একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আম্মাকে ৬৬ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি মামলায় বেকসুর ঘোষণা করা হয়।

১৯৭৭ সালে কৃষ্ণনন্দ অগ্নিহোত্রী বনাম মধ্যপ্রদেশ মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ‘সম্পত্তি ও আয়ের মধ্যে অসঙ্গতি যদি ১০ শতাংশের কম হয়, তা হলে অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।’ আজ রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি সি আর কুমারস্বামী জানান, জয়ললিতার মোট আয় ৩৪ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। তাঁর মোট সম্পত্তি এর থেকে ৮.১২ শতাংশ (২ কোটি ১২ লক্ষ টাকা) বেশি। তার পরেই এই প্রসঙ্গে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করেন। ৯০০ পাতার রায়ের মূল বিষয়টি জানিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘সব অভিযোগ খারিজ। সবাই বেকসুর।’’


মুক্তি পেয়েছেন দলনেত্রী। মিষ্টি বিলি করছেন এডিএমকে নেতারা।
সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

সম্প্রতি গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা মামলায় মুম্বই হাইকোর্টে জামিন পেয়েছেন সলমন খান। দুপুরে নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হয়। বিকেলেই সেই আবেদন নিয়ে শুনানি হয়। এবং দশ মিনিট শুনানির পর দু’দিনের জন্য সাজা স্থগিত হয়ে যায়। দু’দিন পর জামিন পেয়ে যান সলমন। সেই সময়ই আইনজ্ঞ মহলের একাংশ জয়ললিতার বেআইনি সম্পত্তি মামলার প্রসঙ্গ তুলেছিল। অনেকের মত ছিল, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়ে দ্রুত জামিন পেয়ে যাওয়ার ঘটনা জয়ার সময় থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এ দিন জয়াকে বেকসুরই ঘোষণা করে দিল হাইকোর্ট।

নতুন আইন অনুযায়ী জয়ললিতাই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি কারাদণ্ডের ধাক্কায় মসনদ হারিয়েছিলেন। ২০১১ সালে বিপুল জন সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন জয়া। গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পরে তিনি ইস্তফা দেন। তাঁর জায়গায় তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন তাঁরই ঘনিষ্ঠ পন্নীরসেলভম। সে দিন রায় শুনে রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব করেন আম্মা-সমর্থকেরা। সেই গোলমালে ২৩৩ জন কর্মী-সমর্থক মারা যান বলে পরে দাবি করে এডিএমকে। আর আজ রায় শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যান এআইডিএমকে নেত্রীর বাড়িতে। তামিল রাজনীতিতে শোনা যাচ্ছে, শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী পদে স্বমহিমায় ফিরে আসতে পারেন জয়া। তবে এমনও শোনা যাচ্ছে, এই আবেগকে কাজে লাগাতে আগামী বিধানসভা ভোট এগিয়ে আনার সুপারিশ করতে পারে বর্তমান এডিএমকে সরকার। সে ক্ষেত্রে নতুন করে মানুষের রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসাই লক্ষ্য জয়ললিতার।

স্বাভাবিক ভাবেই কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ে অসন্তুষ্ট তামিলনাড়ুর আম্মা-বিরোধী দলগুলির নেতারা। পিএমকে-র প্রতিষ্ঠাতা এস রামডস যেমন হাইকোর্টের রায়কে গণতন্ত্র ও বিচারের পরাজয় বলে কটাক্ষ করেন। রায় নিয়ে সরব হয়েছেন তামিলনাড়ুর সিপিএমের সম্পাদক জি রামকৃষ্ণনও। তবে সমর্থকদের আনন্দে তাতে ভাটা পড়েনি। রায়ের খবর সংসদে আসার সঙ্গে সঙ্গে এডিএমকে সাংসদরা উচ্ছ্বসিত হয়ে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান। এমন উল্লাসের ছবি দেখা গিয়েছে কর্নাটক হাইকোর্ট চত্বরেও। রায় শোনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হাজির সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

আসল উত্সব তত ক্ষণে শুরু হয়েছে তামিলনাড়ুতে। চেন্নাইতে দলের সদর দফতরের সামনে এ দিন ছিল যেন দেওয়ালি। আতসবাজি পুড়েছে যথেচ্ছ। চলছিল অবিরত কোলাকুলি! নেত্রীর মুক্তি কামনায় রাজ্যের বেশির ভাগ মন্দির-গির্জায় হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন জয়া-সমর্থকরা। আজ সেই প্রার্থনাই মোড় নেয় বাঁধভাঙা উল্লাসে। আম্মার সঙ্গে যে রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশের আশা-ভরসা জড়িয়ে, তার আঁচ মিলেছে টুইটার, ফেসবুকেও। কেউ লিখেছেন, ‘‘কাল ছিল মাতৃদিবস, আর আজ আম্মা দিবস।’’ কেউ আবার গণ-উৎসবের ছবি পোস্ট করেছেন।

বাইশ দিন জেলে কাটিয়ে জামিন পাওয়ার পরে জয়ললিতা বলেছিলেন, ‘‘আমার জীবন বরাবরই আগুনের সমুদ্র। কথা দিচ্ছি, এ বারও সাঁতরেই ফিরে আসব।’’ বেকসুর খালাস হওয়ার পর নিজেকে খাঁটি সোনার সঙ্গে তুলনা করেন। সোনার প্রতি জয়ার আগ্রহ প্রবাদপ্রতিম। তাঁর সমর্থকদের বাঁধভাঙা আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল, এডিএমকে আবার সোনার সংসার।

অপেক্ষা শুধু ‘আম্মা’র আনুষ্ঠানিক ভাবে মসনদে ফিরে আসার।

Jayalalitha tamilnadu court AIADMK DMK corruption scandal India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy