E-Paper

ক্ষোভ-ভিড় দুই আছে, সিপিএমের পরীক্ষা সংগঠনে 

সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, ত্রিপুরায় বিজেপির রথ এই যাত্রায় রুখে দিতে পারলে উত্তর-পূর্বে শুধু গেরুয়া শিবিরের পরিকল্পনা ধাক্কা খাবে, তা-ই নয়।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪২
Picture of Brinda Karat.

প্রচারে বৃন্দা কারাট। নিজস্ব চিত্র

শহর থেকে মফস্‌সল। সাধারণ আসন হোক বা জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা। ভোটের হাওয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে ত্রিপুরার আম জনতার মুখে একটাই প্রশ্ন— ভোট কেমন হয় দেখুন! ভোটটা দিতে পারব তো?

সমতল হোক বা জনজাতি এলাকা, সিপিএমের সভায়-মিছিলে চোখে পড়ার মতো ভিড়। যেখানে কিছু দিন আগেও বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকেরা প্রকাশ্যে কর্মসূচি নিতে ভয় পেতেন, সেখানেও পতাকা নিয়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়েছেন। সেই ছবি দেখলে প্রশ্ন জাগবে— এই ভিড় কি ভোট-বাক্সে প্রতিফলিত হবে?

এই দুই প্রশ্নের সন্ধিক্ষণে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিপুরার সিপিএম! পাঁচ বছরে রাজ্যে বিজেপির শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে গরগরে। বিশেষত, পরের পর নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটে বাধা পেয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ। বিজেপি আসার আগে টানা ২৫ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। কিন্তু পালাবদলের পরে বিরোধী দল হিসেবে তারা আক্রান্ত। হামলা হয়েছে খাস রাজ্য দফতরে, মার খেয়েছেন নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতির পরিবর্তনে বামেদের ডাকে আবার ভিড় করে আসছেন মানুষ। এখন সিপিএমের সংগঠনের সামনে অগ্নিপরীক্ষা!

প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া সহায়ক হতে পারে অবশ্যই। কিন্তু ক্ষোভ, অসন্তোষকে ভোট পর্যন্ত নিয়ে যেতে সংগঠন লাগে। ত্রিপুরার সিপিএমের পরীক্ষা সেখানেই। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘ভাষণ দিয়ে আসন হয় না!’’

সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, ত্রিপুরায় বিজেপির রথ এই যাত্রায় রুখে দিতে পারলে উত্তর-পূর্বে শুধু গেরুয়া শিবিরের পরিকল্পনা ধাক্কা খাবে, তা-ই নয়। লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় বিজেপির কাছ থেকে বামেদের জমি কাড়তেও সুবিধা হবে। বিজেপিকে ধাক্কা দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগানোর লক্ষ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে ত্রিপুরায় আসন সমঝোতায় গিয়েছে সিপিএম। খয়েরপুর কেন্দ্রে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিকের সঙ্গে এক মঞ্চে বক্তৃতা করছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট— বঙ্গ প্রদেশ থেকে আসা চোখে এমন অবিশ্বাস্য দৃশ্যও এ বার ধরা পড়ছে ভোটের ত্রিপুরায়!

সমঝোতা হলেও কংগ্রেসের শক্তি সীমিত, তাই সাংগঠনিক ভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার গুরুদায়িত্ব তাঁদেরই— বিলক্ষণ জানেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিটব্যুরোর প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট, মহম্মদ সেলিম বা বাংলা থেকে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধরেরা ছুটে বেড়িয়েছেন প্রচারে। ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন ইয়েচুরি, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের দৌড়োদৌড়ির পরে আবার এক বার আসবেন। ইয়েচুরির মতে, ‘‘ত্রিপুরার এ বারের নির্বাচনের ফল অনেক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। মানুষ বিজেপির হাত থেকে মুক্তি চান। তাঁদের অসন্তোষকে ভোটে প্রতিফলন ঘটানোর দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।’’

নিতে তো হবে কিন্তু নেবে কে? ভোটের সময়ে সংগঠনকে টানটান করতে যে সমন্বয় লাগে, সেখানেই এ বার টান পড়েছে ত্রিপুরার সিপিএমে। বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার এ বার প্রার্থী নন। কিন্তু প্রচারে না গিয়ে তিনি সংগঠন সামলাতে বসলে পাল্টা প্রচার হতো— প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসেই গেলেন! তাই তাঁকে প্রচারে চষে বেড়াতে হচ্ছে। আবার দলের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী নিজেই সাব্রুমে প্রার্থী। জনজাতিদের মধ্যে প্রচারের তিনিই অধিনায়ক। জিতেন্দ্র বলছেন, ‘‘সুযোগ পেলে আগরতলায় এসে রাজ্য দফতরে যাচ্ছি। প্রাণপণ চেষ্টা করছি সব দিক সামাল দেওয়ার।’’

সঙ্কট যে সংগঠনের প্রশ্নেই, নানা ঘাটে ঘুরে, বহু জনের কথা শুনে ধরে ফেলেছেন পোড়-খাওয়া মানিকও। প্রায় শেষ বেলায় সোনামুড়ার মেলাঘরে সিপিএমের এই বর্ষীয়ান পলিটবুরো সদস্যকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমাদের নেতৃত্বকে বলছি, ভোট তো এসে গেল। আর এত মিটিং-মিছিল করে লাভ নেই। ভোটের দিন সব বাধা সরিয়ে দল বেঁধে মানুষ যাতে বুথে গিয়ে ভোট দিয়ে ফিরে যেতে পারেন, সেই দায়িত্বটা নিতে হবে।’’

প্রশ্নপত্রে কঠিন পরীক্ষাটা ওখানেই!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tripura CPM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy