Advertisement
E-Paper

বড় ছেলে ফিরল কফিনে! মানতে পারছে না পরিবার

সোমবার গভীর রাতে বাচুপল্লীর স্প্রিং উডসের বাড়িতে পৌঁছলো শ্রীনিবাস কুচিভোটলার দেহ। গত বুধবার কানসাসের ওলেথের একটি বারে বর্ণ-বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রাণ হারান ৩২ বছরের এই যুবক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:৪৫
কানসাসে নিহত শ্রীনিবাস কুচিভোটলার স্মৃতিতে। রয়েছেন ওই ঘটনায় জখম অলোক মাদাসানি ও তাঁর স্ত্রীও (সামনে)। ছবি: এপি

কানসাসে নিহত শ্রীনিবাস কুচিভোটলার স্মৃতিতে। রয়েছেন ওই ঘটনায় জখম অলোক মাদাসানি ও তাঁর স্ত্রীও (সামনে)। ছবি: এপি

জুন মাসেই ছুটি নিয়ে হায়দরাবাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল তাঁর। মাস চারেক আগেই ‘ঘরে ফিরলেন’ তিনি। কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে।

সোমবার গভীর রাতে বাচুপল্লীর স্প্রিং উডসের বাড়িতে পৌঁছলো শ্রীনিবাস কুচিভোটলার দেহ। গত বুধবার কানসাসের ওলেথের একটি বারে বর্ণ-বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রাণ হারান ৩২ বছরের এই যুবক। যে মার্কিন নাগরিক তাঁকে গুলি করেছিল, বন্দুক নিশানা করে সে শ্রীনিবাসকে বলেছিল, ‘গেট আউট অব মাই কান্ট্রি’। আজ রাত দশটা নাগাদ স্বামীর দেহ নিয়ে হায়দরাবাদ পৌঁছন শ্রীনিবাসের স্ত্রী সুনয়না। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে শ্রীনিবাসদের বাড়ি পৌঁছতে আরও খানিকটা রাত হয়।

বাবা মধুসূদন আর মা পার্বতীর এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না, তাঁদের বড় ছেলে আর নেই। ২০১২ সালের অক্টোবরে বিয়ের পরেই কানসাসে স্ত্রী সুনয়নাকে নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন শ্রীনিবাস। ওভারল্যান্ড পার্কে বাড়িও কিনেছিলেন। খুব শিগগির একবার ছেলেদের কাছে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল মধুসূদন-পার্বতীর। কারণ শ্রীনিবাস নিজেই বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন, এ বার সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা।

শ্রীনিবাসের ছোট ভাই সাই কিশোরও এখন কানসাসে থাকেন। ঘটনাচক্রে দাদার মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে হায়দরাবাদের বাড়িতে এসেছিলেন বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। হায়দরাবাদ বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৭২ কিলোমিটার দূরে, শহরের একপ্রান্তে বাচুপল্লীর বাড়িতে গত কয়েক দিন ধরেই আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শির ভিড়। আজ রাতে সেই ভিড়টাই আরও বেড়েছে। শ্রীনিবাস-সাইয়ের খুড়তুতো ভাই সতীশ শুধু বলছেন, ‘‘ওদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাবা খালি বলছেন, এ সব বিশ্বাস হচ্ছে না। ওঁদের সব স্বপ্ন ভেঙে গেল।’’

গত কালই শ্রীনিবাসের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সান্ত্বনা জানান দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বেঙ্কাইয়া নায়ডু ও বন্দারু দত্তাত্রেয়। সেখানেই বেঙ্কাইয়া বলেছিলেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সে দেশের নাগরিকদের উচিত, এই ঘটনার নিন্দা করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। মার্কিন প্রশাসন যে এই ধরনের বর্ণ-বৈষম্য মানবে না, সেই বার্তা অবিলম্বে দেওয়া দরকার।’’ এ বিষয়ে তিনি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন বেঙ্কাইয়া।

আরও পড়ুন: ত্রিশঙ্কুর আশঙ্কা, মায়াকে নিয়ে পুরনো কটু মন্তব্য মুছছে বিজেপি

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নভতেজ সরনাও বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। সেখানে এখন আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটের গভর্নরদের সম্মেলন চলছে। সেই উপলক্ষে গত শনিবার নভতেজ তাঁর বাড়িতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অন্তত ২৫ জন গভর্নর ও বাকিদের দূতরা সেখানে হাজির হন। আর সকলেই বার্তা দেন, তাঁরা ভারতের পাশে রয়েছেন। ট্রাম্প-প্রশাসনের নীতি যা-ই হোক, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ধাক্কা খাবে না। মার্কিন অর্থনীতিতে ভারতীয় ও ভারতের সংস্থাগুলির কতখানি অবদান রয়েছে, তা-ও তথ্যপ্রমাণের সাহায্যে তুলে ধরেন নভতেজ।

বর্ণ-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এখন একজোট গোটা কানসাস সিটি-ও। মোমবাতি মিছিল আর প্রার্থনায় কাল সকলে স্মরণ করেন নিহত শ্রীনিবাসকে। শ’খানেক মানুষ ব্যানার আর প্ল্যাকার্ড হাতে ঘোষণা করেন, ‘ঘৃণার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না’, ‘আমরা শান্তি চাই’, ‘আমাদের মূল মন্ত্রই হল একতা’।

সে দিনের হামলায় শ্রীনিবাসের মৃত্যু হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু আলোক মাদাসানি। ক্রাচ নিয়ে বন্ধুর স্মরণ সভায় এসেছিলেন তিনি। পাশে ছিলেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রীপ্তিও। অলোকদের বাঁচাতে গিয়ে যে মার্কিন যুবক আহত হয়েছিলেন, সেই ইয়ন গ্রিলটের দুই বোনও স্মরণ সভায় যোগ দেন। ওলেথের পুলিশ প্রধান থেকে শুরু করে শহরের গভর্নর, মেয়রও উপস্থিত হয়েছিলেন সেই সভায়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে পুলিশ প্রধান স্টিভেন মেঙ্ক বলেন, ‘‘আমরা এক, আর আমরা একই থাকব। আশা করি খারাপের আতঙ্ক কাটিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এগিয়ে যাব আমরা।’’

স্থানীয় একটি মন্দিরে আয়োজন করা হয়েছিল গত কালের স্মরণ সভার। সর্বধর্ম প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল সেই সভা। শেষ হয় জন লেননের গান ‘ইমাজিন’ দিয়ে।

Srinivas Kuchibhotla Kansas Benkei Naidu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy