Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩

দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে অনড় বেজিং, ক্ষুব্ধ দিল্লি

দক্ষিণ চিন সাগরে একাধিপত্যের দাবি থেকে এক ইঞ্চিও সরছে না বেজিং। আমেরিকা বিষয়টি পছন্দ না করলেও এ নিয়ে সংঘাতে যেতে আগ্রহী নয় বর্তমান পর্যায়ে। তবে বিষয়টির সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িত। তাই মায়ানমারে সদ্যসমাপ্ত আসিয়ান বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিরা এর বিরুদ্ধে সরব হন। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

দক্ষিণ চিন সাগরে একাধিপত্যের দাবি থেকে এক ইঞ্চিও সরছে না বেজিং। আমেরিকা বিষয়টি পছন্দ না করলেও এ নিয়ে সংঘাতে যেতে আগ্রহী নয় বর্তমান পর্যায়ে। তবে বিষয়টির সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িত। তাই মায়ানমারে সদ্যসমাপ্ত আসিয়ান বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিরা এর বিরুদ্ধে সরব হন। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও।

Advertisement

আসিয়ান বিদেশমন্ত্রীদের ২১তম সম্মেলন শুরুর ঠিক এক দিন আগে দক্ষিণ চিন সাগরের পাঁচটি দ্বীপে পাঁচটি বড় বাতিস্তম্ভ গড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে চিন। সম্মেলনে এ নিয়ে প্রবল চাপ তৈরি হলেও, শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থানে অনড়ই থাকল চিন। ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানের দাবি, ওই পাঁচটির মধ্যে দু’টি বাতিস্তম্ভ তাদের। ওই এলাকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চিনের এই ভূমিকায় ভারত ক্ষুব্ধ।

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর এবং তাইল্যান্ড-- এই পাঁচটি দেশ পারস্পরিক বাণিজ্যিক লেনদেনের সুবিধার্থে গড়ে তুলেছিল আসিয়ান। পরে তাতে যোগ দেয় কাম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, ব্রুনেই এবং ভিয়েতনাম। ভারত বা চিন, কেউই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির এই জোটের সদস্য নয়। তবে বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত বলে প্রতিটি আসিয়ান সম্মেলনেই চিন এবং ভারত বিশেষ ভাবে আমন্ত্রিত থাকে। অন্যান্য বারের মতো এ বারের সম্মেলনেও তাদের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। বিভিন্ন আলোচনায় সক্রিয় অংশও নেন তাঁরা। দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের একাধিপত্যের বিরোধিতায় অন্যান্য দেশের পাশাপাশি সরব হন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও। চিনের নাম না করে তাদের এই সাম্প্রতিক পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই এলাকার সার্বভৌমত্বের বিষয়টিকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রেও দক্ষিণ চিন সাগরের সাম্প্রতিক ঘটনা সমস্যা তৈরি করছে। ভারত আন্তর্জাতিক আইনে বিশ্বাসী। কোনও হুমকি বা বলপ্রয়োগের আমরা বিরোধিতা করছি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৮২ সালের সনদ মোতাবেক জাহাজ চলাচল ও সম্পদ সংগ্রহের অধিকারকে ভারত সমর্থন করে।”

সমুদ্রপথে ড্রাগনের এই গরম নিঃশ্বাস নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই চাপানউতোর চলছে নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে। দক্ষিণ চিন সাগরে নৌ-আধিপত্য এবং কৌশলগত ঘাঁটি ক্রমশ বাড়িয়ে চলাই শুধু নয়, চিন দাবি করছে এই সাগরের ৯০ শতাংশই তাদের। বিষয়টি হল, এই সাগরের নিচেই লুকিয়ে রয়েছে গুপ্তধন! অর্থাৎ গ্যাস এবং তেলের এক বিপুল ভাণ্ডার। পরিস্থিতি এমনই স্পর্শকাতর জায়গায় চলে গিয়েছে যে, দক্ষিণ চিন সাগরের ভিয়েতনামের একটি ব্লক থেকে ভারতীয় সংস্থার তেল উত্তোলনের ঘটনাটি নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলে বেজিং। সমুদ্রের অধিকার নিয়ে সে সময়ে রীতিমতো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল চিন। যার জেরে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে।

Advertisement

সদ্যসমাপ্ত আসিয়ান বৈঠকে শুধু অনড় থাকাই নয়, বাণিজ্যিক ভাবে চিনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল মায়ানমার, লাওস এবং কাম্বোডিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করে বেজিং আসিয়ানের যৌথ বিবৃতিতেও দক্ষিণ চিন সাগর সংক্রান্ত বিষয়টি লঘু করিয়ে দিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে যে যৌথ বিবৃতি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে ওই সাগরের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা অনেকটাই লঘু করে দেওয়া হয়। বিদেশমন্ত্রী সুষমা এর সমালোচনা করেছেন। তাঁর কথায়, “দক্ষিণ চিন সাগরের সুস্থিতি বজায় রাখার জন্য যে নীতি রয়েছে তা প্রত্যেকেরই মেনে চলা উচিত।”

এ বছরের সম্মেলনে ভারত-চিন ছাড়াও আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও আমন্ত্রিত হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সরব হন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরিও। হোয়াইট হাউসের এক কর্তার কথায়, “এ ক্ষেত্রে বিদেশসচিব কোনও প্রত্যক্ষ সংঘাত বা শক্তিপ্রদর্শন চাইছেন না। এটা বৃহৎশক্তির লড়াইও নয়। গোটা অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। সে কারণেই শুধু চিন নয়, সংশ্লিষ্ট সব ক’টি দেশকেই সংযমের পরিচয় দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.