Advertisement
০৪ মে ২০২৪
জয়ললিতার আর্জি আজ

জামিন ভেঙে নির্বাচনী প্রচারে, চৌটালাকে ডাক হাইকোর্টের

অসুস্থতার কারণে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক সময় বুঝেই হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে নেমে পড়েছিলেন ভোট প্রচারে! অবশেষে সিবিআইয়ের আর্জির ভিত্তিতে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালাকে কালই হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত। পাঁচ দিন বাদেই হরিয়ানায় নির্বাচন। অনেকেই মনে করছেন, এই জাঠ নেতাকে ভোটের আগেই ফের শ্রীঘরে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারে আদালত। তখন কী হবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

অসুস্থতার কারণে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক সময় বুঝেই হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে নেমে পড়েছিলেন ভোট প্রচারে! অবশেষে সিবিআইয়ের আর্জির ভিত্তিতে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালাকে কালই হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত। পাঁচ দিন বাদেই হরিয়ানায় নির্বাচন। অনেকেই মনে করছেন, এই জাঠ নেতাকে ভোটের আগেই ফের শ্রীঘরে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারে আদালত। তখন কী হবে? যদিও আদালত ডেকে পাঠানোর পরে চৌটালা আজ প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি জেলে যেতে ভয় পান না।

গুঞ্জন অবশ্য শুধু চৌটালাকে ঘিরে নয়। জেল-জামিনের জটে আটকে এখন প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী। এক জন চৌটালা। অন্য জন তামিলনাড়ুর সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। হিসাব বর্হিভূত সম্পত্তি মামলায় সাজা পেয়ে মাত্র দশ দিন আগেই জেলে গিয়েছেন জয়া। গত পরশু কর্নাটক হাইকোর্ট তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। সূত্রের খবর, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন জানাবেন জয়ার আইনজীবী। এবং মজাটা এখানেই! রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই মনে করেছেন, চৌটালার জামিন-বিধি লঙ্ঘন ছায়া ফেলতে পারে জয়ার ওপর। কারণ, রাজনীতিকদের ‘অসুস্থতা’ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

কী রকম?

হরিয়ানার প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির দায়ে গত বছর লোকদল নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালাকে দশ বছরের জন্য হাজতবাসের সাজা শুনিয়েছিল আদালত। কিন্তু গত মে মাসে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিনে মুক্তি পান এই জাঠ নেতা। মুচলেকা ছিল ১৭ অক্টোবর ফের জেলে ফিরে যাবেন তিনি। সেই মোতাবেক জেল থেকে সোজা গুরগাঁওয়ের মেদান্তা হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন চৌটালা। কিন্তু হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে সোজা ভোট প্রচারে নেমে পড়েন এই জাঠ নেতা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মেদান্তা হাসপাতালের একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হরিয়ানার জিন্দে এক জনসভায় উপস্থিত হন তিনি। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। এমনকী প্রচারে গিয়ে এ-ও বলছেন, প্রয়োজনে জেলে বসেই মুখ্যমন্ত্রী পদে ফের শপথ নেবেন তিনি! সরকারও চালাবেন জেল থেকেই!

চৌটালার বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলা করেছিল সিবিআই। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর জাঠ নেতার এই আচরণ দেখে সিবিআই আজ ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়। চৌটালার জামিন খারিজ করার পাশাপাশি সিবিআই এ-ও দাবি করেছে, এ ক্ষেত্রে মেদান্তা হাসপাতালের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হোক। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার এই আর্জির ভিত্তিতে কাল চৌটালাকে হাজিরা দিতে বলেছে আদালত।

সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা আজ বলেন, “চৌটালা প্রথম প্রচারে নামেন ২৫ সেপ্টেম্বর। তা হলে আদালতের দ্বারস্থ হতে সিবিআই এতো সময় লাগালো কেন? নাকি কেন্দ্রে বিজেপি সরকার বুঝতে পারছে, চৌটালা তাদের যাত্রাভঙ্গ করতে পারে। আর সেই কারণেই সরকারের গুঁতোয় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিবিআই।”

কংগ্রেসের এই উষ্মায় নেপথ্যেও অবশ্য কারণ দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। দশ বছর হরিয়ানায় শাসন করার পর এখন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় ভুগছে সেখানে কংগ্রেস সরকার। এই অবস্থায় বিরোধী ভোট ভাগাভাগিতেই ভরসা রাখছেন কংগ্রেস নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। তিনি চাইছেন, বিরোধী ভোট যাতে বিজেপি বা চৌটালার আইএনএলডি-র মতো রাজ্যের দু’টি বড় বিরোধী দল এবং কুলদীপ বিষ্ণোইয়ের হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস ও গোপাল কাণ্ডার লোকহিতের মতো ছোট দলের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু ভোটের ঠিক আগে আদালতের নির্দেশে ওমপ্রকাশ চৌটালাকে যদি প্রচার থেকে বসে যেতে হয়, তা হলে ফায়দা পেয়ে যেতে পারে বিজেপি।

বিজেপি স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। চৌটালা যে তাঁদের পথের কাঁটা, সেটা বিজেপি-র ভোট প্রচারেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। কারণ, হরিয়ানার দু’দিন প্রচার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুডা সরকারের পাশাপাশি চৌটালাকেও সমান ভাবে আক্রমণ করছিলেন। তবে সিবিআই সক্রিয় হওয়ার পর আজ সংযত প্রতিক্রিয়াই দিতে চেয়েছে বিজেপি। দলের মুখপাত্ররা বলেন, আইন আইনের পথে হাঁটছে। এ ব্যাপারে বিজেপি-র কিছু বলার নেই।

তবে জাঠ বলয়ের এই রাজনীতির বাইরে আপাতত চোখ থাকছে আদালতের দিকে। ভোটের আগেই কি শ্রীঘরে ফিরে যেতে হবে চৌটালাকে? আর জয়ললিতারই বা কী হবে!

জেল-জামিনের জালে বাঁধা পড়ে আপাতত উদ্বেগের প্রহর কাটাচ্ছেন দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE