E-Paper

শিমলা চুক্তি স্থগিত থাকলে অভিযানে সুবিধে দিল্লির

উরি হামলার পরে ভারত পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল। আবার পুলওয়ামা হামলার পরে বালাকোটে বায়ুসেনা অভিযান করে।

প্রদীপকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রাক্তন ভাইস অ্যাডমিরাল, নৌসেনা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৫৯
পহেলগামে সেনা বাহিনী।

পহেলগামে সেনা বাহিনী। —ফাইল চিত্র।

পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে ভারত সরকার যে নানা পথে প্রত্যাঘাতের কথা ভাবছে সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত। এই ধরনের জঙ্গি হামলা পাক সেনার সর্বোচ্চ স্তরের অনুমোদন ছাড়া হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। ফলে সামরিক পথে প্রত্যাঘাতের ক্ষেত্রে ভারত জঙ্গিদের ঘাঁটি এবং যে সব কেন্দ্রে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা হয় সেগুলিকে বেছে নিতে পারে।মনে রাখতে হবে, পাক সেনার অফিসারেরা জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকেন।

ঘটনার পরে ভারত সিন্ধু জলচুক্তি সাময়িক ভাবে স্থগিত করেছে। জবাবে পাকিস্তানও শিমলা চুক্তি-সহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সাময়িক ভাবে স্থগিত রেখেছে। শিমলা চুক্তি সাময়িক ভাবে স্থগিত থাকলে ভারতের কৌশলগত সুবিধে রয়েছে। কারণ, জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি মানার দায় এ ক্ষেত্রে দিল্লির থাকবে না। ফলে সামরিক প্রত্যাঘাতের ক্ষেত্রে আইনগত সুবিধে রয়েছে।

উরি হামলার পরে ভারত পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল। আবার পুলওয়ামা হামলার পরে বালাকোটে বায়ুসেনা অভিযান করে। অনেকে বলছেন, এই দুই পথে আর অভিযান করা কঠিন হতে পারে। কারণ, পাকিস্তান এখন সতর্ক রয়েছে। কিন্তু কৌশলগত দিক থেকে দেখলে এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। পরিস্থিতি বিচার করে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখাকেই কাজে লাগিয়ে অভিযান চালানো হতে পারে। আর অভিযান সব সময়ে একই এলাকায় হয় না।

আমার মতে, রাফাল যুদ্ধবিমান হাতে আসায় ভারতীয় বায়ুসেনা কিছুটা সুবিধে পাবে। কারণ, রাফালের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা পাকিস্তানি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের চেয়েও বেশি। আবার ভারতীয় সেনা ড্রোনের মাধ্যমেও পাল্টা আঘাত করতে পারে।

এই ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে নৌসেনার ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই গোপন থাকে। তবে সব ক্ষেত্রেই নৌসেনাকেও শত্রুর উপরে চাপ বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমনটা হয়েছিল কার্গিলযুদ্ধের ক্ষেত্রেও।

অনেকেই নৌসেনার মাধ্যমে পাকিস্তানি বন্দর অবরোধ করার কথা বলেন। তেল ও অন্য সামগ্রীর অভাব ঘটিয়ে শত্রুর যুদ্ধক্ষমতা নষ্ট করার জন্য এমন অবরোধ করা হয়। বর্তমানে এই ধরনের অবরোধ করা কঠিন। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পুরো সমর্থন পাওয়া প্রয়োজন। তবে প্রয়োজনে অন্য পথেও এ কাজ করা যায়।

এখন নৌসেনার পশ্চিমে অর্থাৎ আরব সাগরে গতিবিধি বাড়বে বলে আমি মনে করি। এক দিকে যেমন সমুদ্রপথে পাকিস্তানের গতিবিধির উপরে নজর রাখার জন্য নৌসেনার পি৮আইয়ের মতো বিমানকে ব্যবহার করা হতে পারে, তেমনই অন্য দিকে প্রয়োজনে অভিযানের জন্যও নৌবাহিনীকে ব্যবহার করা হতে পারে। ভারতীয় নৌসেনার হাতে একাধিক ‘ল্যান্ড অ্যাটাক’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যেগুলি ডুবোজাহাজ বা জাহাজ থেকে ভূমিতে পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা সম্ভব। আবার অভিযানের তীব্রতা বাড়লে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ থেকে মিগ-২৯কে-র মতো যুদ্ধবিমান গিয়েও শত্রুকে আঘাত করতে পারে।

আরও একটি পথ হল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গোপন অভিযান বা সেখানকার বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে পাকিস্তানকে আঘাত করা। সেই বিষয়টিও দিল্লি গভীর ভাবে ভাবছে বলেইআমার ধারণা।

বর্তমানে আফগানিস্তানের শাসক তালিবানের সঙ্গে টানাপড়েন ও নিজেদের জঙ্গি সমস্যা নিয়ে পাক সেনা যথেষ্ট বিব্রত। পাক সেনা বাণিজ্যিক কাজকর্মে বেশি জড়িয়ে পড়ায় তাদের পেশাদারিত্ব কিছুটা হলেও কমেছে। ফলে ভারত সামরিক পথে প্রত্যাঘাত করলে পাকিস্তানকে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়তে হবে বলে আমি মনে করি।

অনুলিখন: অনঘ গঙ্গোপাধ্যায়

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India Pakistan Relation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy