ফাঁসির সাজা ঘোষণার পর প্রায় ১৪ বছর কেটে গিয়েছে। এতদিন পরে পরে বিহারের ‘বরা গণহত্যায়’ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছল। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং বিহার সরকারের কাছেও রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে সাজাপ্রাপ্তদের বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রায় ১৩ বছর ধরে পড়ে রয়েছে। অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে চার দণ্ডিত ও তাদের পরিবার। ফের বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হওয়ায় তাঁরা আশার আলো দেখছেন। হয়তো প্রাণ বাঁচালেও বাঁচাতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনকারীরা হল কৃষ্ণ মুচি, নানহেলাল মুচি, বীর কুঁয়ের পাশোয়ান এবং ধর্মেন্দ্র সিংহ। বিহারের ভাগলপুর জেলে বন্দি রয়েছে তারা। রাষ্ট্রপতিকে প্রাণভিক্ষা সংক্রান্ত আবেদনে পরামর্শ দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ২০০৩ সালে আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু গত মাসে খোঁজ মিলেছে গোটা ঘটনার।
১৯৯২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিহারের গয়া জেলার টেকারি থানা এলাকার বরা গ্রামে হামলা চালায় তখনকার মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার অফ ইন্ডিয়ার (বর্তমানে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি) জঙ্গিরা। গ্রামের বাসিন্দা ভূমিহার সম্প্রদায়ের ৩৫ জনকে পার্শ্ববর্তী ক্যানালের ধারে নিয়ে গিয়ে হাঁত বেঁধে প্রত্যেকের গলার নলি কেটে হত্যা করা হয়। অবিভক্ত বিহারের রাজনীতিতে এই ঘটনা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। উল্লেখ্য, এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই বিহারে জাতপাতের রাজনীতি নতুন মাত্রা পায়। ১৯৯৪ সালে পাল্টা হিসেবে উচ্চবর্ণ ও উচ্চবিত্তদের একাংশের মদতে জন্ম নেয় ‘রণবীর সেনা’।
যাই হোক, ঘটনার পর পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ১১৯ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়। কিন্তু প্রমাণের অভাবে মাত্র ১৩ জনের নামে চার্জ গঠন করা সম্ভব হয়। এরই মধ্যে মাওবাদীরা ১৯৯৬ সালে টেকারি থানায় হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। মামলার কাগজপত্র এবং প্রমাণাদি নষ্ট হয়ে যায় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে ২০০১ সালের ৮ জুন গয়া জেলা দায়রা আদালতের বিচারক মামলার রায় দেন। সেই রায়ে চার জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকিদের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল মৃত্যদণ্ডের সাজা সুপ্রিম কোর্টও বহাল রাখে। তারপরেই শুরু হয় দীর্ঘ টানাপড়েন। মৃত্যদণ্ডের বিরুদ্ধে নানা মানবাধিকার সংগঠন আন্দোলনে নামে। আইনি সাহায্যের জন্যও এগিয়ে আসে তারা। তবে তাতে লাভ হয়নি। ২০০৩ সালের ৩ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানায় সাজাপ্রাপ্তরা। প্রায় ১৪ বছর পরে সেই আবেদন রাষ্ট্রপতির টেবিলে পৌঁছল। সংবিধানের ৭২ নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী কোনও সাজাপ্রাপ্তকে মাফ করার অধিকার রাষ্ট্রপতির রয়েছে। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রাণভিক্ষার আবেদনগুলি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। তাঁর পূর্বসূরি প্রতিভা পাটিলের সময়ে সেই আবেদনগুলিতে কার্যত হাতই দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতির সচিবালয় সূত্রে খবর, প্রতিটি প্রাণভিক্ষার আবেদন নিজেই খতিয়ে দেখেন প্রণববাবু। গত চার বছরে প্রণববাবু ২৮টি প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করেছেন।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি ঢিলেমিতে এত দিনেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার পর তা কার্যকর করা সমীচিন কিনা। তবে তথ্য বলছে, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চ বিভিন্ন সময়ে পরস্পর-বিরোধী রায় দিয়েছে। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সদাশিবম এই বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সাংবিধানিক বেঞ্চ গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাও কার্যকর হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy