এক হাতে স্যালাইনের বোতল। অন্য হাতে স্যালাইনের চ্যানেল করা। স্যালাইন চলা অবস্থাতেই ক্লাস করতে হাজির হলেন এক স্কুলশিক্ষক। এমনই দৃশ্য ধরা পড়েছে ওড়িশার একটি স্কুলে। অভিযোগ উঠেছে, প্রধানশিক্ষকের কাছে অসুস্থতার জন্য ছুটি চেয়েছিলেন ওই শিক্ষক। কিন্তু তিনি তা মঞ্জুর করেননি। বরং তাঁকে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়েই স্যালাইনের বোতল সঙ্গে নিয়েই স্কুলে এলেন ওই শিক্ষক। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং প্রধানশিক্ষকের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ঘটনাটি ওড়িশার বোলাঙ্গির জেলার। অসুস্থ ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ ভৈ। তিনি স্কুলে গণিত পড়ান। শিক্ষকের দাবি, দাদুর শেষকৃত্য সেরে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দু’দিনের জন্য ছুটি চেয়ে প্রধানশিক্ষক বিজয়লক্ষ্মী প্রধানের কাছে আবেদন করেছিলেন প্রকাশ। অভিযোগ, প্রধানশিক্ষক জানিয়ে দেন ছুটি দেওয়া যাবে না।
কলিঙ্গ টিভি-কে প্রকাশ বলেন, ‘‘দাদুর শেষকৃত্যের পর অসুস্থ বোধ করি। প্রধানশিক্ষককে বিষয়টি জানিয়ে ছুটির আবেদন করি। কিন্তু তিনি জেলা শিক্ষা আধিকারিক এবং জেলা প্রকল্প সহায়কের অফিসে দেখা করে অসুস্থতার কথা জানাতে বলেন। সেখানে যাওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।’’ প্রকাশের দাবি, বাধ্য হয়েই কোনও রকমে জেলা প্রকল্প সহায়কের অফিসে পৌঁছোন তিনি। দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি নিতে হয় তাঁকে। অভিযোগ, তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা না করে দুপুর ২টোর মধ্যে চিকিৎসা করিয়ে স্কুলে ফিরতে পারবেন কি না জিজ্ঞাসা করা হয়।
কিন্তু সরকারি হাসপাতাল অনেকটা দূরে ছিল। ওই সময়ের মধ্যে স্কুলে ফেরা সম্ভব হত না বলে জানিয়েছেন শিক্ষক। তাঁর কাছে বেশি টাকাও ছিল না যে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন। তাঁর ইউপিআই-ও কাজ করছিল না। শেষমেশ এক চিকিৎসককে দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ে স্কুলে ফেরেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই অবস্থাতেই কাজ করতে হয় বলে অভিযোগ। পর দিন সকালে স্থানীয় এক ক্লিনিকে দেখিয়ে স্যালাইনের বোতল সঙ্গে নিয়ে স্কুলে হাজির হন শিক্ষক। তাঁকে ওই অবস্থাতেই ক্লাস করতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও পরে তাঁর সহকর্মীরা হাসপাতালে ভর্তি করান শিক্ষককে।
তাঁর দাবি, ‘‘এই প্রথম নয়, এর আগেও আমার ‘সিক লিভ’ মঞ্জুর করেননি প্রধানশিক্ষক। অন্য শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করলেও আমারটা করা হয় না। বরং ছুটি চাইলেই হেনস্থা করা হয়।’’ এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। ব্লক শিক্ষা আধিকারিক প্রসাদ মাঝি জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।