দুই বিচারপতির দু’রকম মত। দু’রকম মত রেখেই অবশ্য অভিন্ন নির্দেশ জারি করলেন তাঁরা। ছত্তীসগঢ়ের বস্তার এলাকায় এক খ্রিস্টান ব্যক্তিকে নিজের গ্রামে কবরস্থ করার অধিকার চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁর পুত্র। সোমবার বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন মত দিয়েছেন, নিজেদের ব্যক্তিগত কৃষিজমিতে কবরস্থ করার অধিকার পাওয়া উচিত পুত্রের। বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার মত, ২০-২৫ কিলোমিটার দূরের যে গ্রামে খ্রিস্টানদের জন্য নির্দিষ্ট কবরস্থান আছে, যাওয়া উচিত সেখানেই। এই দ্বিমত বজায় রেখে বিচারপতিদের অভিন্ন নির্দেশ, দূরের গ্রামেই সৎকার হবে ওই ব্যক্তির। পুলিশ ও প্রশাসন এ ব্যাপারে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে এবং ব্যয় বহন করবে।
সাধারণত একই বেঞ্চের দুই বিচারপতির মত ভিন্ন হলে, বৃহত্তর বেঞ্চে মামলাটি পাঠিয়ে দেওয়াই রীতি। কিন্তু বিচারপতিরা এ ক্ষেত্রে তা করেননি মৃতের মর্যাদার কথা ভেবে। মৃত ব্যক্তির দেহ গত তিন সপ্তাহ ধরে শবাগারে রয়েছে। অবিলম্বে যাতে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর সৎকার সম্পন্ন হতে পারে, সে দিকে তাকিয়েই বিচারপতিরা অভিন্ন নির্দেশ জারি করেছেন। ছত্তীসগঢ়ের মাহরা জনজাতিভুক্ত ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় ৭ জানুয়ারি। তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ছেলে চেয়েছিলেন, গ্রামের কবরস্থানে যেখানে তাঁর পূর্বপুরুষদের সমাধি রয়েছে, সেখানেই বাবাকে সমাহিত করতে। কিন্তু অহিন্দুদের সেখানে সমাহিত করা যাবে না বলে মত দেয় পঞ্চায়েত। ছেলে রমেশ বঘেল তখন নিজস্ব কৃষিজমিতে বাবাকে সমাহিত করতে চান। গ্রামে অহিন্দুর সমাধি থাকার ব্যাপারেই তখন আপত্তি ওঠে বলে অভিযোগ। হাই কোর্টও দূরের গ্রামে গিয়ে খ্রিস্টান কবরস্থানে সমাধি দেওয়ার কথাই বলে। তার পরে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে আসে। সেখানে ছত্তীসগঢ় সরকারের হয়ে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং আবেদনকারীর আইনজীবী ছিলেন কলিন গনসালভেস।
বিচারপতি নাগরত্নের মত হল, গ্রামে আলাদা করে খ্রিস্টান কবরস্থান না থাকায় নিজস্ব জমিতে বাবাকে সমাহিত করার অধিকার পাওয়া উচিত। রাজ্য সরকার এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সৎকারের অধিকার সব সম্প্রদায়ের সমান। সেটা সৌভ্রাত্রের সৌজন্যও বটে। যে বিষয়টি গ্রামস্তরে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তাকে একটা অন্য রং দেওয়া হচ্ছে। বিচারপতি শর্মার মত, সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সমাধিক্ষেত্রই সৎকারের কাজে ব্যবহার হওয়া উচিত। যে কেউ যে কোনও জায়গায় সৎকারের অধিকার চাইতে পারেন না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)