ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সামনেই চ্যালেঞ্জ। শুধু কাশ্মীরের দখলই নয়, গোটা অঞ্চলে ভারতের নেতৃত্বের জায়গাকে আঘাত করাটাও ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির তথা সাউথ ব্লক।
সংঘাত বিরতি হয়েছে কিন্তু ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এই উপমহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে নিজেদের হাজার দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃত্বের একটি ছাতার তলায় আসতে চাইছে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক সদস্য রাষ্ট্র। গত কয়েক দশকে ভারতের অর্থনীতির উন্নতির ফলে সার্কভুক্ত কিছু রাষ্ট্রের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে নয়াদিল্লির বৃদ্ধির সুফল তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিও পেতে শুরু করবে।
পাকিস্তান ভারতের এই নেতৃত্বের জায়গাটিকে খর্ব করতে চাইছে বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রকের একাংশ। তারা বাংলাদেশের জমানা পরিবর্তনের পরে ঘন ঘন বৈঠক করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে। সার্ককে ফের সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য হল, বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে এই অঞ্চলে প্রভাব খাটানোর জন্য জমি তৈরি। এর পিছনে বেজিংয়ের হাত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারতকে সীমান্তে যতটা ব্যতিব্যস্ত করে রাখা যাবে, নয়াদিল্লির কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ততটাই দুর্বল হবে এমন হিসাব ইসলামাবাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে রয়েছে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, গোটা অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজন সুস্থিতি এবং শান্তির আবহাওয়া। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ বলছে, এটাও ঘটনা যে মোদী জমানায় গত দেড় দশকে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার কোনও কাঠামো তৈরি করার চেষ্টাই করা হয়নি সে ভাবে। ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যে কিছুটা ইতিবাচক চেষ্টা হয়েছিল। সামান্য হলেও তার ফল পাওয়া গিয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, তার পরে মনমোহন সিংহ এবং পাকিস্তানের পারভেজ মুশারফ কিছু দূর পর্যন্ত এগিয়েছিলেন। কিন্তু তথাকথিত ‘মনমোহন-মুশারফ সূত্র’ খারিজ করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এসে। তিনি নিজের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা শুরু করেছিলেন যা স্বল্পস্থায়ী হয়।
আজ অর্থনৈতিক দিক থেকে জাপানকে টপকাতে চলেছে ভারত। ভারত এখন অন্তত এই জায়গায় পৌঁছেছে যে বিশ্বকে নিজের শর্তে কিছু ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু ভারতের অগ্নিগর্ভ প্রতিবেশী বলয় এই বার্তাই দিচ্ছে যে তারা নয়াদিল্লির অর্থনীতির সুফলে নিজেরা সামিল না হতে পারলে কোনও না কোনওভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াবেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)