ফাইল ছবি
চিন্তন শিবির শেষ হতেই গত কাল সন্ধ্যায় রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, দুই ভাইবোন চলে গিয়েছিলেন উদয়পুর থেকে জওয়াইতে। জওয়াই নদীর উপরে বাঁধের পাশেই জঙ্গলে চিতাবাঘের বাস। জঙ্গল সাফারির পরে আজ সকালে রাহুল গেলেন ডুঙ্গারপুরের বেণেশ্বর ধামে। সেতুর শিলান্যাসের আগে বেণেশ্বর ধামে রাহুল প্রথমে শিবমন্দির, তার পর বিষ্ণু মন্দির, শেষে বাল্মীকি মন্দিরে পুজো দিলেন।
রাহুল যখন বেণেশ্বর ধামে মন্দিরে ঘুরে ঘুরে পুজোআচ্চা করছেন, উদয়পুরে চিন্তন শিবির থেকে সস্ত্রীক দিগ্বিজয় সিংহ, অরুণ যাদব, পি এল পুনিয়া, সি পি জোশীর মতো কংগ্রেস নেতারা দলে দলে তখন রওনা দিয়েছেন নাথওয়াড়ায় শ্রীনাথজি মন্দিরে। সপ্তদশ শতকে তৈরি মন্দিরে কৃষ্ণর বালক-রূপ মূর্তি দর্শন করতে।
নির্বাচন এলেই রাহুল এবং কংগ্রেসের অন্য নেতাদের মন্দিরে মন্দিরে ঘোরার ‘নরম হিন্দুত্ব’ নীতি উদয়পুরের চিন্তন শিবিরে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অযোধ্যার পরে বিজেপি-আরএসএস যখন কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে চাইছে, সেই সময়ে হিন্দুত্ব মোকাবিলায় কংগ্রেসের নীতি স্পষ্ট করার দাবি তুলেছিলেন দলের নেতারা। দু’রকম মতামত উঠে আসায় চিন্তন শিবিরে এ নিয়ে কোনও ফয়সালা হয়নি। জনসংযোগ করতে গিয়ে কংগ্রেস নেতারা ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেবেন কি না, চিন্তন শিবিরের শেষে ‘উদয়পুর ঘোষণা’য় এ নিয়ে খাতায়-কলমে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু আজ রাহুল থেকে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা চিন্তন শিবিরের শেষেই মন্দির-দর্শনে বেরিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপাতত তাঁরা নরম হিন্দুত্বের নীতিতেই থাকছেন।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জনার্দন দ্বিবেদীর মতে, দুইয়ের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি আঁকড়ে থাকতে হবে বলে পুজোআচ্চা ছাড়ার প্রয়োজন নেই। খোদ মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীকে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি আওড়াতে রামকে ছাড়তে হয়নি। রাহুল আজ নিজেই বেণেশ্বর ধামে সেতুর শিলান্যাসের পরে বলেছেন, “সকালে বেণেশ্বর ধাম দর্শন করেছি আর আমি খুব খুশি যে এখানেই সেতুর শিলান্যাস করেছি।’’ রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার ব্যাখ্যা, বিজেপির হিন্দুত্ব ও হিন্দু ধর্ম যে আলাদা, রাহুল তা বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল নরম হিন্দুত্বের নীতির পক্ষেই সওয়াল করে বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেস নেতাদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়া উচিত।’’ মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ থেকে উত্তরপ্রদেশের নেতা আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণণও একে সমর্থন করেছেন। উল্টো দিকে এই নরম হিন্দুত্ব নীতির ঘোর বিরোধিতা করেছেন কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চাণ্ডি, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের মতো নেতারা। তাঁরা যুক্তি দেন, বিজেপির হিন্দুত্বের মোকাবিলায় নরম হিন্দুত্ব নীতি গ্রহণ করলে কংগ্রেস বিজেপির ‘বি টিম’ হয়ে যাবে। বিজেপির সঙ্গে লড়তে হলে বিজেপির পিচে খেলতে নামলে চলবে না। কর্নাটকের বি কে হরিপ্রসাদের মতো নেতারা যুক্তি দিয়েছেন, কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতার মতাদর্শই আঁকড়ে থাকা উচিত। নরম হিন্দুত্ব করতে গিয়ে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক কংগ্রেসের থেকে সরে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উত্তরপ্রদেশের এক কংগ্রেস নেতা বলেন, “অযোধ্যার রামমন্দির-বাবরি মসজিদ বিতর্ক মিটে যাওয়ার পরে বিজেপি এ বার বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে হিন্দু মন্দির ছিল বলে বিতর্ক তৈরি করতে চাইছে। জ্ঞানবাপী নিয়ে বিতর্কে আমরা নীরব থাকব, নাকি মসজিদের চরিত্র বদলের চেষ্টার বিরোধিতা করব, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার ছিল। বিজেপির হিন্দুত্বের মোকাবিলায় স্পষ্ট নীতি নেওয়া প্রয়োজন।” চিন্তন শিবিরেও এ নিয়ে বিতর্ক হয়। কিন্তু সেখানেও দু’রকম মত উঠে আসে। কংগ্রেসের তরফে পি চিদম্বরম অবশ্য আইনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন, তাঁরা পি ভি নরসিংহ রাওয়ের আমলে তৈরি ধর্মস্থান আইনের পক্ষে। অযোধ্যার বিতর্কের পরে তৈরি এই আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যেখানে যে ধর্মের আরাধনা স্থান রয়েছে, তা তেমনই থাকবে। রামমন্দির-বাবরি মসজিদের মতো বিবাদ এড়াতেই এই আইন তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টও এই আইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy