হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে আসা রোগীর সঙ্গে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ায় বরখাস্ত করা হয়েছিল এক চিকিৎসককে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে এ বার অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে বসলেন বাকিরাও। ঘটনা শিমলার একটি হাসপাতালের হলেও তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা হিমাচল প্রদেশ জুড়েই। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের জেরে গোটা রাজ্য জুড়ে যারপরনাই ব্যাহত হয়েছে চিকিৎসা পরিষেবা।
শিমলার হাসপাতাল অভিযুক্ত চিকিৎসককে বরখাস্ত করার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছে উত্তর ভারতের ওই রাজ্যের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মহল। প্রতিবাদে শনিবার থেকে হিমাচলের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে বসেছেন। তাঁদের দাবি, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত অন্যায্য। অন্য দিকে, এই ধর্মঘটের জেরে হিমাচল প্রদেশের একাধিক সরকারি হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব রকম চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। শিমলা, ধরমশালা, নাহান, হামিরপুর, উনা-সহ বেশ কয়েকটি জেলার রোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শুক্রবারই অনেক চিকিৎসক একসঙ্গে ছুটিতে চলে গিয়েছেন। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ধর্মঘট। রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, ধর্মঘট চলাকালীন নিয়মিত পরিষেবা, অপারেশন থিয়েটার এবং বহির্বিভাগ (ওপিডি) বন্ধ থাকবে। কার্যকর থাকবে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবাগুলি।
দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। শিমলার ওই হাসপাতালে আসা এমনই এক রোগীর আত্মীয় কৃষ্ণ সিংহ পিটিআইকে বলেন, ‘‘বাবার চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার আনি থেকে এখানে এসেছি, শিমলা থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে কোনও ডাক্তারকে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ আর এক রোগীর পরিজন দাসভি রামের কথায়, ‘‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি। আজ তার এমআরআই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধর্মঘটের জন্য এখনও তা হয়নি।’’
আরও পড়ুন:
তবে কী বলছেন চিকিৎসকেরা? আইজিএমসি-র রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোহেল শর্মার কথায়, তদন্তে আপত্তি নেই। কিন্তু চিকিৎসককে বরখাস্ত করায় গোটা চিকিৎসক সম্প্রদায়ের কাছে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে। অপমানিত এবং অনিরাপদ বোধ করতে শুরু করেছেন বাকি চিকিৎসকেরাও। সোহেল বলেন, ‘‘অনেক পরিশ্রম করে, অনেক পরীক্ষা দিয়ে তবে একজন ডাক্তার হওয়া যায়। ডাক্তার কিন্তু নিজেও একজন মানুষ। আমরা স্বীকার করছি যে, যা ঘটেছে তা ঠিক নয়। তবে এত দ্রুত ওই চিকিৎসককে বরখাস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। এই আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।’’
যে ঘটনা থেকে এ সবের সূত্রপাত, সেটি ঘটেছিল শিমলার ইন্দিরা গান্ধী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (আইজিএমসি)। হাসপাতালের ভিতরেই এক রোগীর সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাঘব নারুলা নামে ওই চিকিৎসক। রোগীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ঘটনার ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, স্যালাইনের রড রোগীর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তা দিয়ে তাঁকে আঘাত করার চেষ্টা করছেন রাঘব। ডাক্তারকে পাল্টা লাথি মারছেন ওই রোগী। তাতে অবশ্য দমেননি ওই চিকিৎসক। রোগীর দিকে এগিয়ে এসে তাঁকে পর পর চড় মারতে শুরু করেন তিনি। সমাজমাধ্যমে ওই ভিডিয়ো দ্রুত ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাঘবকে বরখাস্ত করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখতে হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সুখুর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে আইজিএমসি কর্তৃপক্ষ।