Advertisement
E-Paper

বাড়ির খাবারেও সতর্ক হোন, বলছেন ডাক্তাররা

খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে বরাবরই খুঁতখুঁতে স্কুল শিক্ষিকা প্রমীলা সরকার। নিজে তো বাইরের খাবার খানই না, স্বামী আর মেয়েকেও খেতে দেন না। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা, যত ভালই রেস্তোরাঁ হোক না কেন, রান্নার জায়গা কোথাও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না।

সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০৮

খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে বরাবরই খুঁতখুঁতে স্কুল শিক্ষিকা প্রমীলা সরকার। নিজে তো বাইরের খাবার খানই না, স্বামী আর মেয়েকেও খেতে দেন না। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা, যত ভালই রেস্তোরাঁ হোক না কেন, রান্নার জায়গা কোথাও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। আর অপরিচ্ছন্ন রান্নাঘর মানেই ফুড পয়জনিংয়ের আঁতুড়ঘর। অথচ এক দিন বাড়ির খাবার খেয়ে হঠাৎই অসহ্য পেটব্যথা শুরু হল প্রমীলাদেবী এবং তাঁর মেয়ের। সঙ্গে ঘনঘন শৌচাগারে যাওয়া আর প্রবল বমি। চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন, ফুড পয়জনিং!

কলেজ থেকে বন্ধুদের সঙ্গে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছিলেন প্রান্তিক বসু। কয়েক দিন দেদার মশলাদার খাবার খেয়ে রীতিমতো অরুচি ধরে গিয়েছিল তাঁর। অথচ বাড়ি ফিরে সাধারণ ডাল ভাত খাওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। অসহ্য পেটব্যথা। সঙ্গে বমি। চিকিৎসক জানালেন, বাড়ির খাবার থেকেই হয়েছে ফুড পয়জনিং।

এ রকম উদাহরণ আরও অনেক আছে। যথেষ্ট সাবধান হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির খাবার থেকেই বিষক্রিয়া ঘটে যাচ্ছে হামেশাই।

চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত নোংরা হাত, অপরিষ্কার জল এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকেই বিশেষ কিছু ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়। বেশির ভাগ মানুষই বাইরে খাওয়ার সময় এই বিষয়গুলি মাথায় রাখেন। কিন্তু বাড়িতে যে হেতু টাটকা জিনিস দিয়ে রান্না হয়, নিয়মিত রান্নাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়, পরিস্রুত জল ব্যবহার করা হয়, তাই অনেকেই ভাবেন বাড়ির খাবারে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ধারণা ভুল। বজ্র আঁটুনির ফাঁক গলে বাড়ির খাবার থেকেও হতে পারে সংক্রমণ। আর বাড়িতে আরশোলা বা মাছি থাকলে তো কথাই নেই।

চিকিৎসক মিহির ভট্টাচার্য জানান, এখন অধিকাংশ বাড়িতেই রান্নার লোক রাখা হয়। কিন্তু সেই রাঁধুনি কতটা পরিচ্ছন্ন ভাবে রান্না করছে, সেটা খেয়াল রাখা হয় না। নিয়মিত ফিল্টার সার্ভিসিং করানো না হলে সেখান থেকেও ছড়াতে পারে জীবাণু। তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি সাবধানতা নিতে হবে বাজার থেকে শাক-সব্জি, মাছ-মাংস কেনার সময়। এখন বেশির ভাগ শাক-সব্জি চাষেই রাসায়নিক আর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। মাছের কানকো বা মাংসকে লাল দেখানোর জন্যও ব্যবহৃত হয় ক্ষতিকারক রাসায়নিক। খাবারের সঙ্গে এগুলিও অবাধে ঢুকছে আমাদের শরীরেও। আর ফুড পয়জনিংয়ের পাশাপাশি এগুলির সুদূরপ্রসারী প্রভাবও রয়েছে।’’

এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সত্যগোপাল মাইতিরও একই মত। তিনি জানান, ইদানীং অসময়ের সব্জি এবং ফলে বাজার ছেয়ে গিয়েছে। চাইলেই গরমকালে ফুলকপি আর শীতকালে পটল পাওয়া যায়। নানা ধরনের হাইব্রিড ফসলের পাশাপাশি মাছ এবং মুরগিকেও দ্রুত বড় করে তুলতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রাসায়নিক। তিনি বলেন, ‘‘পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কেউ ভাবছেন বাড়ির খাবারে কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু কাঁচামালটাই যে বিষে ভরা।’’ তিনি জানান, আজকাল মানুষের হাতে সময় কমে যাওয়ায় অনেকেই একসঙ্গে অনেকটা রান্না করে ফ্রিজে রেখে দেন। সেটাই গরম করে করে কয়েক দিন চালিয়ে নেন। কিন্তু এক বার রান্না করা খাবার অনেক দিন ধরে ফ্রিজে রাখাও বিপজ্জনক। সেই খাবার ভাল করে গরম না করলে তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।

তবে শুধু জীবাণুই নয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য আরশোলা, মাছির ভূমিকাও কিন্তু কিছু কম নয়। তাই ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটাও ততটাই জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

sauvik chakraborty home made food food poisoning home made food poisoning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy