E-Paper

শুল্কের ভার, পড়শিকে ছাড় সামলে চুক্তি লক্ষ্যে দিল্লি

ট্রাম্পের ‘কটু কথা’ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বিদেশ মন্ত্রক আজ এর পাল্টা জবাব দিতে চায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রক বলছে, আমেরিকার সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে ২৫ অগস্ট বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ দফার বৈঠক হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৩৭
ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

‘মেরেছে কলসির কানা, তা বলে কি প্রেম দেব না!’

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতকে ‘মৃত অর্থনীতি’ তকমা দিয়ে ভারতীয় পণ্যের উপরে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের থেকে বেশি হারে শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন। তা সত্ত্বেও মোদী সরকার মনে করছে, এখনও আমেরিকা-ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে। যাতে দুই দেশই লাভবান হবে। ট্রাম্প ‘বন্ধু’ নরেন্দ্র মোদীকে অস্বস্তিতে ফেললেও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের মত, অক্টোবর-নভেম্বরের ঘোষিত সময়সীমার আগেই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ঐকমত্য হতে পারে, যদি দু’পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোয়। এই অবস্থান থেকেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে খোলা মনে দর কষাকষি চালিয়েযেতে চাইছে।

ট্রাম্পের ‘কটু কথা’ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বিদেশ মন্ত্রক আজ এর পাল্টা জবাব দিতে চায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রক বলছে, আমেরিকার সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে ২৫ অগস্ট বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ দফার বৈঠক হবে। ঐকমত্য হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বার্তালাপের মাধ্যমে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

ভারতের বিরুদ্ধে চড়া শুল্ক চাপানোর অভিযোগ তুলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৫% পাল্টা চড়া শুল্ক এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য বাড়তি জরিমানার কথা ঘোষণা করেছেন। কোন দেশের উপরে কত হারে শুল্ক চাপবে, হোয়াইট হাউস তার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। পাকিস্তানের উপরে ১৯%, শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের উপরে ২০% এবং আফগানিস্তানের উপরে ১৫% শুল্ক চাপছে। প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ভারতের উপরে শুল্ক সবচেয়ে বেশি। আগামী ৭ অগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এত দিন ভারতীয় পণ্যে আমেরিকায় কার্যত ৪% শুল্ক চাপত। সেই তুলনায় ২৫% শুল্ক বেশি হলেও অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ, ট্রাম্প এপ্রিলেই ভারতের উপরে ২৬% শুল্ক চাপিয়েছিলেন। যা পরে তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখেন। চিন্তা হল, রাশিয়ার থেকে তেল আমদানির জন্য কত জরিমানা চাপানো হবে, তা নিয়ে। ট্রাম্পের কথাবার্তায় ইঙ্গিত, জরিমানার হার ১০০% পর্যন্ত হতে পারে। তবে ট্রাম্প যখন-তখন সিদ্ধান্ত বদলান। তাই ৭ অগস্ট থেকে শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ফের পিছিয়ে যেতে পারে। এর আগে ট্রাম্প এপ্রিলে শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করে তা ৯০ দিনের জন্যস্থগিত রেখেছিলেন।

মোদী সরকার মনে করছে, ট্রাম্প রাশিয়ার বদলে আমেরিকার থেকে বেশি পরিমাণে তেল-গ্যাস এবং যুদ্ধাস্ত্র, এফ-৩৫-এর মতো যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাই জরিমানার কথা বলেছেন। ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরের যৌথ বিবৃতিতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের উল্লেখ ছিল। কিন্তু আজ লোকসভায় বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এ নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য, ট্রাম্প চাপ দিলেও বাণিজ্য চুক্তিতে তাড়াহুড়ো না করা। কারণ, ভারতের অর্থনীতি ভিয়েতনামের মতো রফতানি নির্ভর নয়।” দর কষাকষির ক্ষেত্রে ভারতের লক্ষ্য হল, চিনের তুলনায় ভারতের পণ্যে কম শুল্ক নিশ্চিত করা। একমাত্র তা হলেই বাণিজ্য চুক্তি থেকে ভারত লাভবান হবে। দুশ্চিন্তা হল, আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে গত ২৮ ও ২৯ জুলাই দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। চিনও আমেরিকার চড়া শুল্ক ও রাশিয়ার থেকে তেল কেনার উপরে জরিমানা এড়াতে সমঝোতায় যেতে চাইছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবারই ভারতের আমেরিকা থেকে তেল কেনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো একটি সাক্ষাৎকারে ভারতকে ‘কৌশলগত শরিক’ বলে উল্লেখ করলেও জানিয়েছেন, রাশিয়ার থেকে ভারতের তেল কেনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরক্তির কারণ। কারণ, এই তেল বেচার টাকাতেই রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। নয়াদিল্লির বক্তব্য, ভারত নিজের স্বার্থ দেখে ঠিক করবে, কোথা থেকে তেল কেনা হবে। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি আপাতত রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা স্থগিত রেখেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ট্রাম্পের ধমকে মোদী সরকার ভয় পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সরকারের দাবি, অশোধিত তেলের দর তুলনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

বাণিজ্য চুক্তির জন্য দর কষাকষি নিয়ে সরকারি সূত্রের বক্তব্য, আমেরিকা চায় তার কৃষি পণ্য, ইস্পাত, গাড়ি, অ্যালুমিনিয়ামে ভারত শুল্ক কমাক। আমেরিকাকে ভারতের চামড়া, বস্ত্রের মতো পণ্যে শুল্ক কমাতে হবে। কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যে ভারত কোনও ভাবেই দেশের বাজারের দরজা হাট করে খুলে দেবে না। ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে সেটা হয়নি। আগেই অর্থ মন্ত্রক আমেরিকার হুইস্কি, ওষুধে শুল্ক কমিয়েছে। আমেরিকার স্বার্থে পরমাণু চুল্লিতে দুর্ঘটনার দায় সংক্রান্ত আইন শিথিল করেছে। আমেরিকাকেও শুল্ক কমানোর বাইরে আরও বেশি সংখ্যায় এইচ-১বি ভিসার মতো প্রস্তাব দিতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump US Tariff War US Tariff Indian Economy India-US

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy