আদালত চত্বরে বাবার গলা জড়িয়ে কাঁদছে এক খুদে। বাবাও অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন। ছ’বছরের ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে বার বার বলছিল, ‘‘বাবার কাছ থেকে আমাকে আলাদা কোরো না। আমি বাবার কাছেই থাকতে চাই।’’ কিন্তু দেখা গেল তাকে বাবার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
ছেলেটিকে যত টেনে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছিল ততই সে তার বাবাকে জাপটে ধরে বলছিল, ‘‘আমাকে নিয়ে যেয়ো না।’’ আদালত চত্বরে এক খুদের এ রকম কাতর আর্জি দেখে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। আবেগঘন এই দৃশ্য ধরা পড়েছে রাজস্থানের ঝুনঝুনুর চিড়াওয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
হরিয়ানার ঝজ্জরের বাসিন্দা প্রীত পঞ্চরঙ্গিয়ার সঙ্গে রাজস্থানের সুরজগঢ়ের বাসিন্দা সুমনের বিয়ে হয়েছিল ২০১৫-য়। ২০১৬ সালে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়। নাম যতীন। প্রীত সেনায় কাজ করতেন। আর তাঁর স্ত্রী সুমন গৃহবধূ। কর্মসূত্রে প্রীত বাইরে থাকার দরুন ছেলে যতীনকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন সুমন।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত ২০১৮ সালে। সেই ঝামেলা মিটমাটের জন্য পঞ্চায়েতের সভা ডাকা হয়। দু’জনেই একসঙ্গে থাকার জন্য রাজি হয়ে যান। সুমন শ্বশুরবাড়িতে এসে থাকা শুরু করেন। ২০১৯-এ প্রীত-সমুনের একটি কন্যাসন্তান হয়। ওর নাম জিয়া। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও মেয়ে জন্মানোর পর ফের দু’জনের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। সম্পর্কের দূরত্ব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, কয়েক মাস আগেই সুরজগঢ় থানায় শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পণের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন সুমন।
#ParentalAlienationOfFathers is henious crime and #HumanRightsViolations
— Chetan (@cskkanu) June 28, 2022
Rotten legal system is #MaleHater
Time to raise your voice
😭😭😭 pic.twitter.com/Z4I04vg1WH
আরও পড়ুন:
এর পরই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান সুমন। ছেলেকে প্রীতের কাছেই রেখে যান। সেই মামলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছলে ছেলে যতীনকে নিজের হেফাজতে রাখার আর্জি জানিয়ে আরও একটি মামলা করেন সুমন। গত সোমবার ছিল সেই মামলার শুনানি। আদালতে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে হাজির হন প্রীত এবং সুমন। আদালত সুমনের পক্ষেই রায় দেয় এবং ছেলেকে মায়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
এর পরই ছেলেকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু তাদের হাত ছাড়িয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আদালত চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে বছর ছয়েকের যতীন। প্রীতও এই রায় শুনে ছেলের জন্য কাঁদতে থাকেন। বাবা-ছেলের কান্নার দৃশ্য আদালত চত্বরের পরিবেশকে যেন আরও ভারী করে দিয়েছিল। যতীনকে বাবার কাছ থেকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই সে বলে ওঠে, ‘‘বাবাকে আমার কাছ থেকে আলাদা কোরো না। আমি বাবার কাছেই থাকতে চাই।’’ কিন্তু আদালতের নির্দেশ ছেলেকে মায়ের হাতে তুলে দিতে হবে। পুলিশও নিরুপায় হয়ে যতীনকে তার বাবার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। ছেলের হেফাজত খুইয়ে আদালত চত্বরেই জ্ঞান হারান প্রীত।
প্রীত লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে গলওয়ান ঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। ছেলে যতীনের দেখাশোনার জন্য গত এপ্রিলে কাজ থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন।