ধনেশ্বরকে ওই অবস্থায় দেখে গ্রামের লোক ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। কিন্তু নির্বিকার ধনেশ্বর তাঁদের অভয় দিয়ে বলেন— সাপ দু’টো এতক্ষণ তাঁর গলায় রয়েছে। কিছুই করেনি। ওরা একেবারে শান্ত প্রকৃতির।
কিন্তু কে শোনে ধনেশ্বরের কথা? গ্রামবাসী প্রবীণ যাদব বলেন, ‘‘ধনেশ্বরের মুখ দিয়ে ভক-ভক করে মদের গন্ধ বেরচ্ছে। ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারছিল না। ও তো নেশার ঘোরে ছিল। কী করছে, কী বলছে নিজেই জানে না। সাপ দু’টোর মুখ মুঠো করে ধরেছিল। আমরা বলি, এখনই সাপগুলোকে ঝুড়িতে ভরে ফেলো। কিন্তু ধনেশ্বর রাজি হয়নি।’’
লাতেহারের বালুমথ জঙ্গলের আশপাশে অজগর বা অন্য সাপ দেখতে পাওয়া নতুন কিছু নয়। গ্রামবাসী বিজয় মুর্মু বলেন, ‘‘জঙ্গলের রাস্তায় আমরাও অজগর সাপ দেখেছি। কিন্তু তাদের গলায় জড়ানোর দুঃসাহস দেখানোর কথা ভাবতেই পারি না। আমাদের ধনেশ্বর মদ খেয়ে কখন যে কি করে ফেলে।’’
এ দিকে গলায় সাপ জড়িয়ে সোজা বালুমথ বাজারে চলে যান ধনেশ্বর। তাঁকে ঘিরে ভিড় বাড়তে থাকে ক্রমশ। গ্রামের লোকরা ধনেশ্বরকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু নেশার ঘোরে ধনেশ্বর কোনও কথাই শোনেননি। তাঁর দাবি ছিল, ওই অজগর দু’টো তাঁর পোষ মেনে গিয়েছে। তাই ওরা তাঁর গলাতেই থাকবে।
এরই মধ্যে খবর যায় বালুমথ বন দফতরে। বনকর্মীদের নিয়ে সেখানে পৌঁছন বালুমথের রেঞ্জার প্রেম প্রকাশ সাউ। বন দফতরের কর্মীরা ধনেশ্বরকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অজগর দু’টোকে গলা থেকে নামান। তার পর সাপ দু’টোকে বস্তায় ভরে ফেলেন। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন গ্রামবাসীরা।
প্রেম প্রকাশ বলেন, ‘‘অজগর দু’টোকে বালুমথের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অজগর সাধারণত মানুষকে কিছু করে না। ওরা জঙ্গলের মুরগি, বা ছোট জন্তু ধরে খায়। তবে ধনেশ্বর সাপুড়ে না হয়েও যা করলেন তা ভাবা যায় না। ভয়ঙ্কর ঘটনা।’’
প্রেম প্রকাশ জানিয়েছেন, অজগর দু’টো প্রায় পাঁচ ইঞ্চি মোটা। দৈর্ঘ্যে একটি পাঁচ ফুট, অন্যটি সাত ফুট। ওজন ৩০ থেকে ৩৫ কিলোগ্রাম। এমন ওজনদার দু’টো সাপ গলায় পেঁচিয়ে কী ভাবে এতক্ষণ ঘুরলেন ধনেশ্বর? ধনেশ্বর অবশ্য নির্বিকার। পোষ্যগুলো কাছছাড়া হওয়ায় মনমরা ধনেশ্বর বলেন, ‘‘অজগর দু’টো তো পোষ মেনে গিয়েছিল। আমার গলায় কী সুন্দর পেঁচিয়ে বসেছিল। খামোকা ওদের ছিনিয়ে নিল বনকর্মীরা। বেচারারা নিশ্চয় আমাকে খুঁজছে।’’ গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, অজগরদের খুঁজে আনতে ফের বালুমথের জঙ্গলে অভিযান চালাতে পারেন ধনেশ্বর। তাই তাঁকে আপাতত নজরে রাখা হয়েছে।