ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আদালতে চার্জশিট দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই প্রথম বার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বিশেষ আদালতে মামলার শুনানি হবে ২৫ এপ্রিল। চার্জশিটে নাম রয়েছে কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা, সুমন দুবের। শনিবার এই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া এবং রাহুলের ৬৬১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে ইডি। টাকা তছরুপের মামলায় মঙ্গলবার জেরা করা হয় সনিয়ার জামাই রবার্ট বঢরাকে। তার কয়েক ঘণ্টা পরে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া এবং সাংসদ রাহুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করল ইডি।
এপ্রিলের শুরুর দিকে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা করেছিল ইডি। বিশেষ বিচারক বিশাল গগনে সেই চার্জশিট পর্যালোচনা করেন। তার পরেই মঙ্গলবার তা গৃহীত হয়। ২৫ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি। বিশেষ বিচারক বিশাল জানিয়েছেন, ওই দিন কেস ডায়েরি দাখিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে তদন্তকারী অফিসার এবং ইডির আইনজীবীকে।
গত ১১ এপ্রিল ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের প্রকাশনা সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’ (এজেএল) এবং মালিক সংস্থা ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান’-এর স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইডি। দিল্লি, মুম্বইয়ের বান্দ্রার বেশ কিছু জায়গা, লখনউয়ের বিশেশ্বর নাথ রোডের এজেএল বিল্ডিং খালি করার জন্য বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দিয়ে এসেছেন আধিকারিকেরা।
এই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার সূত্রপাত বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর করা মামলার থেকে। তাঁর অভিযোগ ছিল, ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের প্রকাশনা সংস্থা এজেএলের বাজারে কোটি কোটি টাকার দেনা ছিল তাদের। যার বেশির ভাগটাই কংগ্রেসের কাছ থেকে নেওয়া। ২০০৮ সালে সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। সেই অবস্থাতে সংস্থাটি অধিগ্রহণ করেন সনিয়া, রাহুল এবং শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থা। এর পর ন্যাশনাল হেরাল্ডের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ইয়ং ইন্ডিয়ানের দখলে চলে আসে। কোটি কোটি টাকা দেনার বোঝাও চাপে তাদের ঘাড়ে। এর কিছু দিন পর ‘দেনার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব নয়’ বলে কারণ দেখিয়ে কংগ্রেসের তরফে ঋণের টাকা মকুব করে দেওয়া হয়। স্বামীর যুক্তি, কংগ্রেস রাজনৈতিক দল। তাই তারা কোনও বাণিজ্যিত সংস্থাকে ঋণ দিতে পারে না। কারণ তারা নিজেরা ঋণ দেয় না। ২০২১ সালে টাকা নয়ছয়ের তদন্ত শুরু করে ইডি।
এর মাঝে মঙ্গলবার বঢরাকে তলব করে ইডি। হরিয়ানার জমি দু্র্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর। ৮ এপ্রিল তাঁকে তলব করা হলেও তিনি ইডির দফতরে যাননি। মঙ্গলবার তিনি হাজিরা দেন। যদিও নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’-র কারণেই তাঁকে তলব করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। প্রসঙ্গত, সোমবারই নিজের রাজনীতিতে যোগদানের বিষয়টি উসকে দেন রাহুলের ভগ্নিপতি। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস নেতৃত্ব যদি বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও বেশি মানুষকে শামিল করতে চান, তবে আমাকে রাজনীতিতে যোগ দিতে বলবেন।’’