Advertisement
E-Paper

কুড়ি নয়, ‘বেনামি’ চাঁদা হোক দু’হাজার, প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের

ভোটে কালো টাকা রুখতে এ বারে সক্রিয় হল নির্বাচন কমিশন। আইন বদল করে নাম না জানিয়ে নগদে দেওয়া চাঁদার ঊর্ধ্বসীমা বিশ হাজার থেকে এক ধাক্কায় দু’হাজার টাকায় নামানোর প্রস্তাব দিল তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১২

ভোটে কালো টাকা রুখতে এ বারে সক্রিয় হল নির্বাচন কমিশন। আইন বদল করে নাম না জানিয়ে নগদে দেওয়া চাঁদার ঊর্ধ্বসীমা বিশ হাজার থেকে এক ধাক্কায় দু’হাজার টাকায় নামানোর প্রস্তাব দিল তারা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কালো টাকা রোখার ব্যাপারে বিস্তর হুঙ্কার দিলেও রাজনৈতিক দলগুলিকে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রাখা হয়েছে। এমনকী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও যতই দাবি করুন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে পুরনো ৫০০ ও এক হাজারের নোট রাজনৈতিক দলগুলি নিতে পারবে না, বাস্তব অন্য কথা বলছে। রাজনৈতিক দলের তহবিলে দেদার কালো টাকা ঢেলে পুরনো তারিখ দেখিয়ে ঘুরপথে তাকে সাদা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক স্টিং অপারেশনেও বিষয়টি ধরা পড়েছে। আর তার পরেই সক্রিয় হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বাড়ি, চাঁদা, মূলধনী আয় এবং অন্য সূত্র থেকে আয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলি আয়কর ছাড় পায়। চলতি আইন অনুযায়ী, ২০ হাজার টাকা বা তার কম নগদ চাঁদার ক্ষেত্রে দাতার নামধাম জানাতে হয় না। এই অর্থের উৎস নিয়ে কেউ ঘাঁটাঘাঁটি করে না, কোনও জরিমানাও দিতে হয় না। অভিযোগ, এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দলকে বেনামে চাঁদা দিয়ে নানা ভাবে কালো টাকা সাদা করা হয়। ভুঁইফোঁড় বহু রাজনৈতিক দলের তহবিল শুধু এই কাজেই ব্যহার করা হয় বলেও ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব, আইন করে রাজনৈতিক তহবিলে বেনামি চাঁদার পরিমাণটাই কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হোক। একই সঙ্গে তাদের পরামর্শ, যে সব দল লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে লড়াই করে আসন জেতে, তাদেরই আয়কর ছাড়ের সুযোগ দেওয়া উচিত।

রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হিসেবের খতিয়ান জমা দেয়, তাতে দেখা যাচ্ছে, নগদের খামতি নেই কোনও দলেরই! নগদ ও ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার হিসেব ধরলে শীর্ষে বিজেপিই। তার পর কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি। পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রধান দল সিপিএম এবং তৃণমূলও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। এদের মধ্যে আবার সিপিএম ক্ষমতাচ্যুত হয়েও তৃণমূলের থেকে ঢের এগিয়ে! ২০১৬ সালে যে হিসেব তারা কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সিপিএমের কাছে ২৮৬ কোটি টাকা রয়েছে। অন্য দিকে তৃণমূলের ভাঁড়ারে রয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, সরকারি খরচে ভোট হলেই কালো টাকার রমরমা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাঁর কথায়, ‘‘গোড়া থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলে এসেছে। সরকারি খরচে ভোট করার ব্যাপারে সব ইস্তাহারেই লেখা আছে। এ ব্যাপারে আমরা দায়বদ্ধ।’’

প্রশ্ন হল, নোট বাতিলের যুক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যখন কালো টাকা রোখার কথা বলছেন, ঠিক তখনই কেন কালো টাকা সাদা করার পথ খুলে দিলেন রাজনৈতিক দলগুলির জন্য? মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের কথায়, ‘‘এনডিএ জমানাতেই আইন আরও কড়া করে রাশ টানা হয়েছে। যার ফলে এখন কালো টাকা রাজনৈতিক দলে জমা করা অনেক কঠিন।’’ সরকারের যুক্তি, নোট বাতিলের পর অর্থনীতিতে কালো টাকার পরিমাণ অনেক কমে যাবে। ফলে রাজনৈতিক দলে কালো টাকায় চাঁদা দেওয়াও আর সম্ভব হবে না। যদিও এই দাবির বাস্তবতা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। কারণ রোজই দেখা যাচ্ছে, নতুন নোটেও কালো টাকার পাহাড় জমছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় কুমারের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যদি সব রাজনৈতিক দলের চাঁদা শুধু মাত্র চেকে দেওয়া যাবে বলে নিয়ম চালু করতেন, তা হলে বুঝতাম তিনি কালো টাকা রোখার ব্যাপারে আন্তরিক।’’ কেন সরকার এখনও পর্যন্ত এই প্রথা চালু করছে না, তা নিয়ে মোদী সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের কাছে কোনও যুৎসই জবাব নেই। অন্য দিকে একাধিক রাজনৈতিক দলের বক্তব্য, ছোট ছোট অঙ্কের চাঁদা সকলে চেকে দিতে পারেন না। তখন নগদে নিতেই হয়।

রাজনৈতিক দলগুলির এই গড়িমসি দেখেই নির্বাচন কমিশন এখন নগদে চাঁদার পরিমাণটি এক ধাক্কায় ২ হাজার টাকার নীচে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, অনেকে কালো টাকা সাদা করার জন্যই ভুঁইফোঁড় রাজনৈতিক দল তৈরি করে। যে হেতু রাজনৈতিক দলগুলি আয়করে ছাড় পায়, সেটাকে কাজে লাগিয়েই ওই সব আচমকা গজিয়ে ওঠা দলের তহবিলে কালো টাকা জমা করে। সে কারণে অনেক ভুঁইফোঁড় দলের হাতেও বিপুল পরিমাণ নগদ রয়েছে। কমিশনের একটি সূত্রের বক্তব্য, রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে আয়করে ছাড়ের নিয়ম বদলালে এই সব ভুঁইফোঁড় দলগুলির সিংহ ভাগই উঠে যাবে!

কমিশনের প্রস্তাব মেনে মোদী সরকার নিয়ম বদলাবে কি? বিজেপি মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র জবাব এড়িয়ে বলেন, ‘‘সব দলের সঙ্গে কথা বলে ঐকমত্য না হলে এ কাজ করা যাবে না।’’ তাঁর বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলিকেই নিজেদের তহবিলের ব্যাপারে স্বচ্ছ থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেও অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে।

Election Commission Political Parties 2000 notes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy