E-Paper

বিহারে ‘নিখোঁজ’ ৪১ লক্ষ ভোটার! সন্ধান না মিললে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা

বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪১ লক্ষ ৬৪ হাজারের বেশি ভোটারকে তাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি বলে নির্বাচন কমিশন জানাল। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হিসাব ছিল ৩৬ লক্ষ ৮৭ হাজারের মতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ০৬:১৮

—প্রতীকী চিত্র।

মাত্র এক দিনেই ৩৬ লক্ষের ঘর থেকে বেড়ে ৪১ লক্ষ।

বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪১ লক্ষ ৬৪ হাজারের বেশি ভোটারকে তাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি বলে নির্বাচন কমিশন জানাল। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হিসাব ছিল ৩৬ লক্ষ ৮৭ হাজারের মতো। জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত বিহারের ভোটার তালিকায় প্রায় ৭ কোটি ৯০ লক্ষ জন ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, এর মধ্যে ৫.২৭ শতাংশ ভোটারকে তাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ, ওই ভোটারদের যদি আর সন্ধান এবং তথ্য প্রমাণ না পাওয়া যায়, তা হলে এই বিপুল সংখ্যক নামের ভোটারের তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা।

আজ বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের ফলে সে রাজ্যে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষের ভোটাধিকার চলে যাবে। বিহারের পরে যেহেতু গোটা দেশেই ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় পরিমার্জন’ হতে চলেছে, তাই এ নিয়ে সতর্ক করে তেজস্বী আজ মল্লিকার্জুন খড়্গে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এম কে স্ট্যালিন-সহ ৩৫ জন নেতানেত্রীকে চিঠি লিখেছেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধন করতে নেমে নির্বাচন কমিশন সমস্ত নিয়ম ভাঙছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিহারের ৭ কোটি ৯০ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ভোটার বা প্রায় ৭ কোটি ১৫ লক্ষ ভোটারের ‘এনুমারেশন ফর্ম’ জমা পড়েছে। এর বাইরে ৪১ লক্ষ ৬৪ হাজারের মতো ভোটারকে তাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। এঁদের মধ্যে প্রায় ১৪ লক্ষ ২৯ হাজার ভোটার ‘সম্ভবত’ মারা গিয়েছেন। প্রায় ১৯ লক্ষ ৭৪ হাজারের মতো ভোটার ‘সম্ভবত’ পাকাপাকি ভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো মানুষের নাম একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় রয়েছে। ১১ হাজার ভোটারের সন্ধান মিলছে না। কমি‌শনের বক্তব্য, ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য ফর্ম জমা শেষ হতে এখনও ৬ দিন বাকি। ইতিমধ্যেই ৯৫.৯২ শতাংশ ভোটার এর আওতায় চলে এসেছেন।

আজ বিহারের বিরোধী জোটের অন্যতম শরিক সিপিআই-এমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, এখনও যদি কাজ শেষ হয়ে না থাকে, তা হলে এত নিখুঁত পরিসংখ্যান নির্বাচন কমিশন পাচ্ছে কোথা থেকে? এখনও তো অগস্ট মাসে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে তা যাচাই করা, অভিযোগ, আপত্তি অনুযায়ী পরিমার্জন বাকি।তাঁর অভিযোগ, বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন একটা কেলেঙ্কারির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। বিএলও-রা ঘরে ঘরে না গিয়ে এক জায়গায় বসে ফর্ম জমা নিচ্ছেন। ফর্মে বিএলও কোনও তথ্য ছাড়া নিজেই সই করছেন বলে ভিডিয়ো মিলেছে। যদিও কমিশনের বক্তব্য, মৃত ভোটারদের ফর্মে বিএলও সই করছিলেন। সঙ্গে মৃত্যুর শংসাপত্রও ছিল।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছিল, বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন করতে নেমে বাংলাদেশি, নেপালি, মায়ানমারের নাগরিক অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের সন্ধান মিলেছে। দীপঙ্করের প্রশ্ন, এই তথ্যই বা কমিশন কোথায় পাচ্ছে? তাঁর অভিযোগ, ২০১৯-এর ১০ জুলাই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল, ভোটার তালিকায় কোনও বিদেশিনাগরিক নেই। ১০১৬ থেকে ২০১৯-এই চার বছরে শুধুমাত্র ২০১৮ সালে এ নিয়ে তিনটি অভিযোগ ছিল। তার মধ্যে একটি তেলঙ্গানা, একটিগুজরাত ও একটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বিহার থেকে কোনও অভিযোগ মেলেনি। ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের আগেও এমন কোনও অভিযোগ ছিল না। তা হলে এখন ভোটার তালিকায় বিদেশি নাগরিকের প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে?

নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ সূত্র বলছে, ভোটার তালিকায় বিদেশি নাগরিক আইনত থাকতে পারে না। যদি কোনও বিদেশি নাগরিক বা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী থাকেন, তা হলে খুঁজে বার করে সেই নাম বাদ দেওয়ার জন্যই বিহারে বিশেষ নিবিড় পরিমার্জন(স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) শুরু হয়েছে। কারণ, সংবিধানের ৩২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটার হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা দেশের নাগরিকত্ব। ২০১৯-এর আগে এই বিশেষ পরিমার্জন হয়নি। শুধুমাত্র ভোটার তালিকার নতুন ভোটার যোগ হওয়া, মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার মতো ‘সামারি রিভিশন’ হয়েছে।

বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, কমিশন নিয়ম মাফিক কাজ করছে না। সিপিএমের পলিটব্যুরো আজ ৮ অগস্ট বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। সিপিআই-এমএল লিবারেশনও জানিয়েছে, অগস্টে তারা বিহারে ‘নির্বাচন চোর, গদি চোর’ স্লোগান নিয়ে প্রচারে নামবে। তার আগে দলের নেতারা ২২ জুলাই কমিশনের সঙ্গে দেখা করবেন।

বিহারের ভোটার তালিকা পরিমার্জন

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান

· জানুয়ারি মাসের ভোটার তালিকায় ছিলেন ৭.৯০ কোটি।

· এখনও পর্যন্ত ফর্ম জমা পড়েছে ৭.১৫ কোটি (৯০.৬৪%)।

· ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না ৪১.৬৪ লক্ষ।

· এর মধ্যে সম্ভবত মৃত ১৪.২৯ লক্ষ।

· সম্ভবত পাকাপাকি স্থানান্তরিত ১৯.৭৪ লক্ষ।

· একাধিক জায়গায় নাম ৭.৫০ লক্ষ।

· নিখোঁজ ১১ হাজার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar Assembly Election 2025 Bihar Election Commission of India Voter Card

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy