Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মোদী সফরের মুখে বারো ঘণ্টায় চার হামলা

রক্তাক্ত কাশ্মীরে ১১ সেনা-পুলিশসহ হত ২১

ভোটের মরসুমে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফরের ঠিক আগেই ধারাবাহিক জঙ্গি হামলায় ফের উত্তাল জম্মু ও কাশ্মীর। ভোর তিনটে থেকে শুরু করে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে চার-চারটি জঙ্গি হামলা ও ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের পাল্টা জবাবের জেরে পরিস্থিতি থমথমে শ্রীনগর, উরি, সোপিয়ান ও ত্রাল-সহ রাজ্যের একটা বড় অংশে।

সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

ভোটের মরসুমে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফরের ঠিক আগেই ধারাবাহিক জঙ্গি হামলায় ফের উত্তাল জম্মু ও কাশ্মীর। ভোর তিনটে থেকে শুরু করে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে চার-চারটি জঙ্গি হামলা ও ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের পাল্টা জবাবের জেরে পরিস্থিতি থমথমে শ্রীনগর, উরি, সোপিয়ান ও ত্রাল-সহ রাজ্যের একটা বড় অংশে। সংঘর্ষে নিহত এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল-সহ আট জওয়ান। নিহত হয়েছেন তিন পুলিশ কর্মীও। প্রথম দফার সংঘর্ষে ৬ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি সেনার। প্রাণ গিয়েছে দুই সাধারণ নাগরিকেরও। পুলিশের সঙ্গে অন্য একটি সংঘর্ষে মারা গিয়েছে আরও দুই লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২১। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শনিবার রাজ্যে আসছেন সেনা-প্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ।

বিচ্ছিন্ন দুু’একটি ঘটনা ছাড়া প্রথম দু’দফার ভোট নির্বিঘ্নে মিটলেও এখনও তিন দফা ভোট বাকি রাজ্যে। তৃতীয় দফার ভোট মঙ্গলবার। ভোটপ্রচারে মোদী আসছেন সোমবার। শ্রীনগরের একটি জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার কথা। তার ঠিক আগেই এই জঙ্গি হামলায় চিন্তিত নয়াদিল্লি। ‘ভোটের মুখে শান্তিভঙ্গ’ বলে টুইটারে এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মোদী। ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও।

আজ প্রথম সংঘর্ষটি ঘটে উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা জেলার উরি সেক্টরের সেনা ছাউনিতে। সেনা সূত্রের খবর, নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে উরি সেক্টরের মোহরা ক্যাম্পে ভোর ৩টে নাগাদ আত্মঘাতী হামলা চালায় এক দল জঙ্গি। গ্রেনেড হানার সঙ্গে শুরু হয় এলোপাথাড়ি গুলিবৃষ্টি। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে সেনাও। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আশপাশের সেনা ছাউনির জওয়ানেরাও। প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ। সাড়ে ন’টা নাগাদ পরিস্থিতি সেনার নিয়ন্ত্রণে আসে। উদ্ধার করা হয় নিহত ৬ জঙ্গি, ৮ জওয়ান ও ৩ পুলিশকর্মীর দেহ। জঙ্গিদের থেকে ছ’টি এ কে ৪৭ রাইফেল, ৫৫টি ম্যাগাজিন, ২টি শটগান, ২টি আধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্র, ৪টি রেডিও, ৩২টি টাটকা গ্রেনেড-সহ আরও বেশ কিছু অস্ত্র মিলেছে বলে দাবি সেনার। এলাকায় আরও জঙ্গি লুকিয়ে আছে সন্দেহে সেনার তরফে শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান। সূত্রের খবর, শীত পুরোপুরি ঢুকে পড়ার আগেই ভারতে বড় সংখ্যায় অনুপ্রবেশ করতে চাইছে পাক-জঙ্গিরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, দিন দশেক ধরেই এলাকায় সক্রিয় মুম্বই হামলার কুচক্রী হাফিজ সইদ।

পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকেই জঙ্গিরা ভারতে এসেছে বলে মত সেনার। সংঘর্ষ চলাকালীন ছাউনির একটি বাঙ্কারে আগুন ধরে যায়। তাতে কিছু জওয়ান আহত হলেও, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

সংঘর্ষের দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে শ্রীনগরের সৌরা এলাকায়। পুলিশের দাবি, নাশকতার ছক নিয়েই শহরে ঢোকার চেষ্টা করছিল দুই জঙ্গি। হামলা চলে পুলিশের উপরেও। তারই জেরে সংঘর্ষ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবার জেলা কমান্ডার কারি ইসরারের। বেগ পেতে হয় আত্মগোপন করে থাকা দ্বিতীয় জঙ্গিকে খুঁজে বের করতে। পরে তাকেও গুলি করে মারে পুলিশ। নিহত জঙ্গি কম্যান্ডারের থেকেও একটি এ কে ৪৭ রাইফেল উদ্ধার হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, দুই জঙ্গির মৃত্যুর পরেও শান্ত হয়নি পরিস্থিতি। এলাকায় সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার জেরে শ্রীনগর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাতেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। বারামুলা থেকে উরি যাওয়ার বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান থানার সামনে আজ তৃতীয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। গ্রেনেড বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেলেও হতাহতের কোনও খবর নেই। তবু এই হামলাকে খাটো করে দেখতে নারাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এলাকায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘিরে বাড়তি সতর্কতা জারি হয়েছে এখানেও।

দিনের চতুর্থ হামলাটি ঘটে পুলওয়ামা জেলার ত্রাল বাসস্ট্যান্ডে। জঙ্গিদের গ্রেনেড হানায় নিহত হন দুই নাগরিক।

আজকের ঘটনায় পাকিস্তানকে নিশানায় রেখেই তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। পাকিস্তানের কৈফিয়ত তলব করে তিনি বলেন, “সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকেই জঙ্গিরা ঢুকছে ভারতে। এই সমস্যার সমাধান পাকিস্তানকেই করতে হবে। একান্তই না পারলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হোক। আমরা সাহায্য করতে তৈরি।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর পাকিস্তানের পাশাপাশি পরোক্ষে নিশানা করেছেন চিনকেও। তাঁর দাবি, “অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি কিছু দেশ নিয়মিত আর্থিক মদতও জোগাচ্ছে পাকিস্তানকে।” ভোট বানচাল করার উদ্দেশ্যেই আজকের এই জঙ্গি হানা বলে মনে করছেন তিনিও। ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকেই হুরিয়ত-সহ বেশ জম্মু-কাশ্মীরের বেশ কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে আসছে। তবু প্রথম দু’ দফায় নাশকতার যাবতীয় হুমকি অগ্রাহ্য করেই অবাধ ভোট দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমান, রাজ্যবাসীকে ফের বার্তা দিতেই আজকের এই ধারাবাহিক হামলা জঙ্গিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE