বাংলায় বিজেপির সংগঠন এখন যে অনেকটাই খাতায়-কলমে, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের আগেই পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি বুথ কমিটি গড়ে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এ রাজ্যে আলাদা করে আর ‘পন্না’ বা পৃষ্ঠা কমিটি গঠন করা হচ্ছে না। সেই সংক্রান্ত দায়িত্ব থাকবে বুথ কমিটিরই কয়েক জনের। পদ্ম শিবিরের ব্যাখ্যা, আসলে লোকসভাকে সামনে রেখে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের আগেই রাজ্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে তারা। রাজ্যের পরবর্তী বিধানসভার আগে রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। গত বার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটে অভূতপূর্ব ভাল ফল করেছিল বিজেপি। যদিও রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, এ বার কত আসনে জেতা সম্ভব, তার কোনও বিশ্লেষণ এখনও করেনি দল।
বাংলায় বিজেপির সংগঠন এখন যে অনেকটাই খাতায়-কলমে, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই কারণে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দু’দিনের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্বকে আলাদা করে সংগঠন শক্তিশালী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে বুথ কমিটি গঠনের উপরে, যাতে বুথ-ভিত্তিক প্রতিটি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের কাছে পৌঁছতে পারেন বিজেপি ক্যাডারেরা। বুথ কমিটির নীচে থাকে পন্না বা পৃষ্ঠা কমিটি। সেই কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব হল, ভোটার তালিকার প্রতিটি পৃষ্ঠায় নাম থাকা মানুষদের কাছে পৌঁছে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করা। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ রাজ্যে আলাদা করে আর পৃষ্ঠা কমিটি না গড়ে প্রতিটি বুথ কমিটির সদস্য সংখ্যা তিরিশের কাছাকাছি রাখা হবে। বুথ কমিটির ওই সদস্যদের মধ্য থেকেই কয়েক জনকে পৃষ্ঠা কমিটির দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হবে।
বর্তমানে বাংলায় প্রায় ৭৯-৮০ হাজারের কাছাকাছি বুথ রয়েছে। বিরোধীদের মতে, গত বিধানসভায় কার্যত অর্ধেকের কাছাকাছি বুথে ভোটের দিনে নিজেদের এজেন্ট দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। আর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপি এ রাজ্যে আড়ে-বহরে কমেছেও। পুরনো ও নব্যের দ্বন্দ্বে বহু বিজেপি কর্মী বসে গিয়েছেন। এই আবহে ৮০ হাজার বুথের জন্য ২৪ লক্ষ একনিষ্ঠ কর্মী পাওয়া কি সম্ভব? রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী। আমাদের লক্ষ্যই হল লোকসভা নির্বাচনের আগে তিরিশ সদস্যের বুথ কমিটি নির্মাণ।’’ দলের এক নেতার ব্যাখ্যা, তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে গেলে প্রতিটি বুথে দলীয় সংগঠন প্রয়োজন। তাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৬ সালের বিধানসভার লক্ষ্যে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলাই এখন দলের লক্ষ্য।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনও রাজ্য বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে। গত নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টির মধ্যে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এ বার লোকসভা আসন ধরে-ধরে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি কেমন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা এখনও শুরু হয়নি বলে দাবি করেছেন রাজ্যের নেতারা। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা মেনেই নিচ্ছেন, বর্তমানে রাজ্যে দলের যা ছন্নছাড়া পরিস্থিতি, তাতে অর্ধেক আসনও ধরে রাখা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। পরিস্থিতি ঘোরাতে প্রথম দফায় রাজ্যের ১৯টি লোকসভা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ‘প্রবাস’ বা রাত্রিযাপন করে অভাব-অভিযোগ শুনেছেন। আগামী জানুয়ারি নাগাদ দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের ২৪টি লোকসভা কেন্দ্রে (তার মধ্যে গত বারের একটি কেন্দ্রও রয়েছে) ফের ওই প্রবাস কার্যসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হলেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এই ‘প্রবাস’ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy