বিহারের ঔরঙ্গাবাদ জেলার ওবরা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার মহম্মদ শাহ খালিদ। চাকরি সূত্রে দিল্লিতে থাকেন। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করার পরে তাঁর বাড়িতে বিএলও বা বুথ স্তরের অফিসার এসে ফর্ম দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ফর্মে নিজের নাম, জন্মতারিখ, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের নম্বরের সঙ্গে বাবা, মায়ের নাম, ভোটার সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বরও লিখে জমা দিয়েছিলেন। বিএলও সেই ফর্ম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে সব তথ্য তুলে দেওয়ার কথা।
কিন্তু খালিদ কমিশনের পোর্টালে গিয়ে দেখেন, তাঁর ফর্মে শুধু নাম, জন্মতারিখ সংক্রান্ত তথ্যই জমা পড়েছে। বাবা, মায়ের নাম যে ভোটার তালিকায় রয়েছে, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্যই পোর্টালে জমা পড়েনি। যার অর্থ, বিএলও সেই তথ্য পোর্টালে তোলেননি। অথচ খালিদ নিজে তাঁর বোনের হয়ে নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে গিয়ে ফর্ম পূরণ করায় সব তথ্যই জমা পড়েছে।
খালিদের মতো বিহারের যে সব ভোটার রাজ্যের বাইরে থাকেন, তাঁদের জন্য আজ নির্বাচন কমিশন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, তাঁরা অনলাইন থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে তা পূরণ করে, ছবি ও অন্যান্য নথি-সহ তা অনলাইনেই আপলোড করে দিতে পারবেন। অথবা বিহারের বাড়িতে বাস করছেন, এমন কোনও আত্মীয়ের মাধ্যমে ফর্ম জমা দেওয়া যাবে। ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। খালিদের অভিযোগ, তিনি পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ফর্ম জমা দিলেও কমিশনের পোর্টালে সব তথ্য নেই। পোর্টাল বলছে, ফর্মে কোনও রদবদল করতে হলে বিএলও-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে। বিএলও বলছেন, তাঁর কাছে ফর্মে রদবদল করার কোনও সুযোগ নেই।
বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের একের পর এক নির্দেশিকায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত। প্রথমে নির্বাচন কমিশন বলেছিল, ভোটার হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে বিহারের প্রায় ৭.৯ কোটি ভোটারকে ফর্ম পূরণ করে নথি জমা দিতে হবে। তার পরে নির্বাচন কমিশন বলে, আপাতত কোনও ফর্ম জমা দিতে হবে না। পরে আবার বলে, নথি জমা দিলে ভাল। এখন আবার পরিযায়ী শ্রমিকদের অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে নথি জমা দিতে বলছে।
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, বিহারের ভোটার তালিকায় ইতিমধ্যেই ৩৫.৮ লক্ষ ভোটারের সন্ধান মিলেছে, যাঁরা হয় মারা গিয়েছেন, অথবা অন্য জায়গায় পাকাপাকি ভাবে চলে গিয়েছেন কিংবা একাধিক জায়গায় ভোটার হিসেবে নাম নথিভুক্ত রয়েছে।কংগ্রেস, আরজেডি-সহ বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, গরিব, প্রান্তিক শ্রেণির পরিযায়ী শ্রমিকদের কত জন অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে পারবেন? তা-ও এই কম সময়ের মধ্যে? ফর্ম জমা না পড়লে কি ধরে নেওয়া হবে তাঁরা পাকাপাকি ভাবে অন্য রাজ্যেচলে গিয়েছেন?
আজ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিহারের ৭.৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৬.৮ কোটি ফর্ম জমা পড়েছে। বিএলও-রা বাকি সমস্ত ভোটারের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করবেন, যাতে সমস্ত যোগ্য ভোটার খসড়া তালিকায় থাকেন। যে সব বাড়িতে প্রথম দফায় ভোটারদের দেখা মেলেনি, সেখানে আবারযাওয়া হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)