Advertisement
E-Paper

লাল কেল্লার ঘটনায় ‘রাষ্ট্রের সম্মান’ই অস্ত্র বিজেপির

যে ভাবে লাল কেল্লায় ধর্মীয় পতাকা তোলা হয়েছে, তা দেশের মানুষ ভাল ভাবে নেননি বুঝে ‘রাষ্ট্রের সম্মানহানি’ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৩৫
সরকার মনে করছে, জনমানসে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি এত দিন ধরে যে সহানুভূতি ছিল, তা গত কালের পরে কিছুটা  ধাক্কা খেয়েছে।

সরকার মনে করছে, জনমানসে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি এত দিন ধরে যে সহানুভূতি ছিল, তা গত কালের পরে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

কৃষক আন্দোলন থেকে কৃষি আইনের প্রশ্নটি পিছনে ফেলে এ বার লাল কেল্লার ঘটনায় রাষ্ট্রের সম্মানহানির প্রশ্ন তুলে জাতীয়তাবাদের তাস খেলতে শুরু করল বিজেপি। দলীয় সূত্রের মতে, গোড়া থেকেই তাঁরা বলে আসছেন, এই আন্দোলনের পিছনে ভারতবিরোধী শক্তি রয়েছে। গত কালের ঘটনা সেই বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

রাজধানীতে অশান্তির পরে চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি কেটে গিয়েছে। নীরব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ খোলেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঘটনার নিন্দা করে একটি টুইটও করতে দেখা যায়নি মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যকে। এমনকি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরও নীরব ছিলেন। দিল্লির কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে বক্তব্য রাখার যাবতীয় দায় দিল্লি পুলিশের উপর ছেড়ে দেন তিনি।

কেন? সূত্রের মতে, সরকার মনে করছে, জনমানসে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি এত দিন ধরে যে সহানুভূতি ছিল, তা গত কালের পরে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে কৃষক নেতাদের ভূমিকা। ভাঙন ধরেছে আন্দোলনেও। সব দিক দেখে আপাতত নীরব থাকার কৌশল নিয়েছে সরকার। সরব হয়েছে দল।

গত কাল যে ভাবে লাল কেল্লায় ধর্মীয় পতাকা তোলা হয়েছে, তা দেশের মানুষ ভাল ভাবে নেননি বুঝে ‘রাষ্ট্রের সম্মানহানি’ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। লক্ষ্য হল, কৃষি আইনের পরিবর্তে ‘সম্মানহানি’র প্রশ্নটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা। কেননা কৃষকদের বিরুদ্ধে বড় মাপের পদক্ষেপ করতে গেলে কৃষক-বিরোধী ভাবমূর্তি তৈরি হবে! আবার একেবারে পদক্ষেপ না করলে লালকেল্লার মান রাখতে সরকার ব্যর্থ, এই মর্মে আলোচনা হবে। তাই আজ সরকারের পক্ষ থেকে মুখ না খুলে পুলিশকে দিয়ে যাবতীয় পদক্ষেপ করানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই কারণে জাভড়েকর দুপুরে নীরব থাকলেও রাতে দিল্লি পুলিশের সাংবাদিক সম্মেলনের পরে কংগ্রেসকে বিঁধে মুখ খোলেন। ‘রাষ্ট্রের সম্মানহানি’র পিছনে মূলত কংগ্রেসের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ এনে জাভড়েকর বলেন, ‘‘পঞ্জাবে কংগ্রেস সরকারের উচিত ছিল দুষ্কৃতীদের তাদের রাজ্যে আটকে দেওয়া। উল্টে দেশ বিরোধিতায় ইন্ধন দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। যা দেখে মনে হচ্ছে, পরাজিত সমস্ত দল একজোট হয়ে গন্ডগোল করার জন্য উস্কানি দিয়ে চলেছে। সিএএ আন্দোলনের সময়েও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। কিন্তু জনগণ লাল কেল্লায় তেরঙ্গার অপমান সহ্য করবে না।”

জাভড়েকরের আগে আজ টুইটে সরব হন বিজেপি নেতা বি এল সন্তোষ। তিনি বলেন, “এই আন্দোলন কৃষি আইন বা আদৌ কৃষকদের স্বার্থে নয়। এই আন্দোলনের কোনও নেতা নেই। যে সংগঠনগুলি সামনে রয়েছে, সেগুলি আসলে মুখোশ। এদের আসল উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় গরিমা ও উন্নয়নকে ধ্বংস করা।” বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালবীয়ও টুইট করে বলেন, ‘‘কৃষকদের স্বার্থরক্ষার নামে দিল্লির রাস্তায় যে বিশৃঙ্খলার আমরা সাক্ষী থাকলাম, তার সঙ্গে কৃষক বা কৃষি আইনের কোনও সম্পর্ক নেই। গত কালের ঘটনা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।”

তবে কাল দীপ সিধুর ভূমিকা ও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় খানিকটা অস্বস্তিতেও বিজেপি। এই দীপ সিধুর বিরুদ্ধেই বিক্ষোভকারীদের লালকেল্লায় নিয়ে যাওয়া ও সেখানে ধর্মীয় পতাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। দীপ বিজেপি সাংসদ সানি দেওলের ঘনিষ্ঠ ও বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। দীপের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবিও সামনে এসেছে। বিজেপি-ঘনিষ্ঠ বলেই আজ রাত পর্যন্ত দীপকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে সরব হন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। অমিত মালবীয় পাল্টা টুইট করে দীপের একটি সাক্ষাৎকার সামনে আনেন, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, কৃষি আইন প্রশ্নে বিজেপির নীতি তিনি সমর্থন করেন না। সেই কারণে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন।

BJP Delhi Farmers Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy