Advertisement
E-Paper

যত বিধি কেন স্কুলের ঘাড়ে, প্রশ্ন আলোচনায়

পাথওয়েজ ওয়ার্ল্ড স্কুলের অধিকর্তা প্রভাত জৈন বলেন, ‘‘গুরুগ্রামের ঘটনার পর থেকে এমন একটা সপ্তাহও যায়নি, যেখানে নতুন নির্দেশিকা জারি হয়নি। ১৭৪টি নির্দেশিকা এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯

গুরুগ্রামের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে কলকাতার জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন—একের পর এক ঘটনায় যে ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরেই চাপ তৈরি হচ্ছে, তাতে শঙ্কিত শিক্ষা জগতের উদ্যোগপতিরা। তাঁদের যুক্তি, স্কুলগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর নিত্য নতুন নির্দেশিকা জারি করে দায় সারছে সিবিএসই, আইসিএসই থেকে রাজ্য সরকার। হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা না মানলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু এমন অনেক নির্দেশিকা জারি হচ্ছে, যা পরস্পরবিরোধী ও অবাস্তব। তা থেকে অন্য বিপদ হতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হতে পারে।

স্কুলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতায় বিতর্কের প্রেক্ষিতেই আজ এ বিষয়ে দিল্লিতে আলোচনাসভা ডেকেছিল বণিকসভা ফিকি। সেখানে বণিকসভার কর্তারা আরও একটি জোরালো প্রশ্ন তুলেছেন। তা হল, নজরদারি ক্যামেরা থেকে নিরাপত্তারক্ষী, বাইরের লোকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ—যাবতীয় নিরাপত্তা কি বেসরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্যই প্রয়োজন? সরকারি স্কুলে কি এ সবের কোনও দরকার নেই? সরকার যেটা বেসরকারি স্কুলগুলিকে করতে বলছে, সে সব নিজেরা পালন করছে না কেন?

পাথওয়েজ ওয়ার্ল্ড স্কুলের অধিকর্তা প্রভাত জৈন বলেন, ‘‘গুরুগ্রামের ঘটনার পর থেকে এমন একটা সপ্তাহও যায়নি, যেখানে নতুন নির্দেশিকা জারি হয়নি। ১৭৪টি নির্দেশিকা এসেছে। কী ভাবে সম্ভব সেটা মানা? সব মানতে গেলে নতুন বিপদের আশঙ্কা থাকে। যেমন ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি পৌঁছনোর সময় সব স্কুল বাসে এক জন শিক্ষিকা ও মহিলা নিরাপত্তা কর্মী রাখতে বলা হয়েছে। শেষ ছাত্র বা ছাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে ওই দুই মহিলা যখন চালক-কন্ডাক্টরের সঙ্গে ফিরবেন, তাদের নিরাপত্তার কী হবে?’’

ফিকি-কর্তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৫ কোটি ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। তার মধ্যে ১৫ কোটি সরকারি স্কুলে পড়ে। হেরিটেজ স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মনীত জৈন বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কোনও ভেদাভেদ থাকাটা ঠিক নয়। সরকারি, বেসরকারি, সব স্কুলের ছেলেমেয়েদেরই নিরাপত্তা প্রয়োজন।’’ এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার উপরেও গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রভাত, মনীতরা। তাঁদের যুক্তি, এটা ঠিক যে অনেক ঘটনাই জানা যায় না। কিন্তু তার পরেও যে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা খুবই কম, তা-ও মাথায় রাখা উচিত।

গুরুগ্রামের ঘটনার পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাইকোমেট্রিক টেস্ট থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের দাওয়াই এসেছে। প্রভাতের যুক্তি, ‘‘এতে তো শিক্ষক-শিক্ষিকারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, আমরা কতখানি নিরাপদ? আমাকে জেলে যেতে হলে কে দেখবে?’’ সব মিলিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার সম্পর্কও ধাক্কা খাচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

ফিকি-র বেসরকারি নিরাপত্তা শিল্প কমিটির প্রধান, সিআইএসএফ-এর প্রাক্তন স্পেশ্যাল ডিরেক্টর মঞ্জরী জরুহরের দাওয়াই, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক, ছাত্রদের কমিটি তৈরি হোক। পেশাদার ডেকে কোন স্কুলে কোথায় নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে, তা যাচাই করা হোক।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘অভিভাবকরাও ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন। স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে মাথা ঘামান না। কিন্তু কোনও ঘটনা ঘটে গেলে প্রতিবাদের সময় বাঁধনছাড়া হয়ে যান। কলকাতার স্কুলে ছাত্রীর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে যেমন ঘটছে।’’

এ ক্ষেত্রে অবশ্য স্কুলগুলির খামতি রয়েছে বলে মনে করছেন সিআইএসএফ-এর ডিজি ও পি সিংহ। সিআইএসএফ বিমানবন্দর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেখভাল করে। আইআইটি-আইআইএম-এর মতো সংস্থার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানোর জন্যও পরামর্শ দেয়। সিআইএসএফ বহু বছর ধরেই নিরাপত্তার বিষয়ে উপদেষ্টার কাজ করে। কিন্তু কোনও স্কুল এই পরামর্শ চায় না। তাঁর মতে, স্কুলের মধ্যে খুন, দুর্ঘটনা বা যৌন নির্যাতনের ঘটনা আটকানো, ঘটলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসারও ব্যবস্থা দরকার। মনীন জৈনও মানছেন, নজরদারি ক্যামেরার মতো নিরাপত্তার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মানসিক ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার দিকেও নজর দিতে হবে। মঞ্জরীর মতে, প্রতিটি স্কুলেই কাউন্সেলিংয়ের জন্য মনোবিদ থাকা প্রয়োজন।

সমস্যা থাকলেও এখনও স্কুলই শিশুদের জন্য সব থেকে নিরাপদ জায়গা বলে মনে করছেন ও পি সিংহ। বিশেষ করে যখন অধিকাংশ বাবা-মা-ই চাকরি করছেন। একই যুক্তি মনীত জৈনেরও। প্রভাত জৈনের যুক্তি, কোনও ছাত্রছাত্রী সারা বছরের মাত্র ১৮ শতাংশ সময় স্কুলে কাটাচ্ছে। ৭২ শতাংশ সময় স্কুলের বাইরে বা বাড়িতে। কোনও বাবা-মা’র পক্ষেই লিখিত গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয় যে বাড়িতে থাকার সময়ে সন্তানের কোনও ক্ষতি হবে না। স্কুলের ক্ষেত্রেও এই কথাটা বোঝা প্রয়োজন।

discussion School Studentd Ryan International School GD Birla FICCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy