Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
National news

আধার গেরো, দিল্লিতে খাদ্য মিলছে না ২৬ হাজার মানুষের

রেশন পেতে গেলে দিল্লিতে আধার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সম্প্রতি। ওই নিয়মে রেশন তুলতে গেলে গ্রাহকের আঙুলের ছাপ যাচাই করা হচ্ছে স্ক্যানারে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ১৪:৫১
Share: Save:

আধার গেরোয় আটকা পড়ল রেশন। মাসখানেক হতে চলল প্রায় ২৬ হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন বটে, কিন্তু রেশন না নিয়েই তাঁদের ফিরে যেতে হচ্ছে।

রেশন পেতে গেলে দিল্লিতে আধার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সম্প্রতি। তবে একটু অন্য ভাবে। রেশন তুলতে গেলে আগে ডিলারের কাছ থেকে জিনিস কেনার পর স্বাক্ষর করতে হত। কিন্তু, সাম্প্রতিক ওই নিয়মে রেশন তুলতে গেলে গ্রাহকের আঙুলের ছাপ যাচাই করা হচ্ছে স্ক্যানারে। আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক তথ্যে যে আঙুল ছাপ রয়েছে, সেটাই এই গ্রাহকের কি না তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। মিলে গেলে রেশন মিলবে। না মিললে, খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

আর তাতেই সমস্যায় পড়েছেন হাজার হাজার দিল্লিবাসী। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ আধার কার্ডের সঙ্গে মিলছে না। এমন খবরই প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।

আরও পড়ুন: নিজস্বী নেবেন? তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীই

গত ১ জানুয়ারি থেকে দিল্লির ২ হাজার ২৫৫টি রেশন দোকানে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তার পরই রেশন তুলতে গিয়েছিলেন বছর চল্লিশের মায়া দেবী। কিন্তু তাঁর আধার কার্ডের সঙ্গে তাঁর আঙুলের ছাপ মেলেনি। রেশন না নিয়েই তাঁকে ফিরে আসতে হয়। পর দিন তাঁর স্বামী এবং দুই ছেলেমেয়ে ওই রেশন দোকানে যান। তাঁদেরও আঙুলের ছাপ মেলেনি। মায়া দেবী জানান, রেশনে ১ কেজি চাল কিনতে লাগে ৩ টাকা। বাইরে যার দাম ৩৫ টাকা। এক কেজি গমের দাম বাজারে ২০ টাকা। কিন্তু, রেশনে সেটাই ২ টাকায় মেলে। তাঁদের পারিবারিক আয় মাসিক ৫ হাজার টাকা। কাজেই রেশন থেকে চাল-গম না কিনতে পারলে সংসার চালানো বেশ মুশকিলের। আধার কার্ড থাকার পরেও এ ভাবে যান্ত্রিক কারণে হেনস্থাটা মানতে পারছে না মায়া দেবীর পরিবার।

রেশন তুলতে গিয়ে একটু অন্য রকম সমস্যায় পড়েছেন পূর্ব দিল্লির কৃষ্ণনগরের একটি রেশন দোকানের গ্রাহক বছর পঞ্চাশের ভগবতী দেবী। তিন ঘণ্টা ঠায় লাইনে দাঁড়িয়েও রেশন পাননি তিনি। কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। তাই রেশন মিলবে না। এই সিস্টেমে বিরক্ত ভগবতী দেবীর কথায়, ‘‘আগেরটাই ভাল ছিল। সই করেই রেশন পেতাম। নতুন এই সিস্টেম খুবই খারাপ।’’

এই সমস্যা শুধু মায়া দেবী বা ভগবতীর নয়। জানা গিয়েছে, দিল্লিতে মোট ১৫ লক্ষ মানুষের রেশন কার্ড রয়েছে। তার ২ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৬ হাজার মানুষ এ সব কারণে কোনও রেশন পাচ্ছেন না। কোথাও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ হয়নি তো কোথাও দুর্বল ইন্টারনেট যোগাযোগ! এক মাস হতে চলল, এর কোনও সমাধানসূত্র বার হয়নি।

কী বলছেন কর্তারা?

দিল্লির খাদ্য সরবরাহকারী মন্ত্রী ইমরান হুসেন বলেন, ‘‘নতুন এই সিস্টেম পরীক্ষামূলক ভাবে চলছে এখন। যে সমস্ত জায়গায় দুর্বল ইন্টারনেট, সেখানে অ্যান্টেনা লাগিয়ে, সিম বদলে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’ তবে মন্ত্রীর এই দাবি মানতে নারাজ রেশন ডিলাররা। দিল্লির সরকারি রেশন ডিলারস‌্ সঙ্ঘের সম্পাদক সৌরভ গুপ্ত বলেন, ‘‘ওয়াইফাই দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করছি। ইঞ্জিনিয়াররা এসে অনেক উঁচুতে অ্যান্টেনা লাগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, ফল একই। মেশিনের সঙ্গে ইন্টারনোট সংযোগ করা যায়নি।’’

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে দিল্লির ৯৭টি রেশন দোকানে পরীক্ষা মূলক ভাবে এই কাজ শুরু হয়। কিন্তু, প্রাথমিক ভাবে সমস্যা হওয়ায়, সে কথা রেশন ডিলারস‌্ সঙ্ঘের তরফে ১৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়। কিন্তু, তার সমাধান সূত্র বার না করেই ১ জানুয়ারি থেকে সমস্ত রেশন দোকানে এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করে দেয় কেন্দ্র, বলে জানিয়েছেন সৌরভ।

আধার নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। আঙুলের ছাপ না মেলায় এর আগেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইএডিআই)-এর কাছে। সম্প্রতি সে সমস্যা সমাধানে ফেসিয়াল অথেন্টিকেশন চালু করতে চেয়েছে আধার। ১ জুলাই থেকে এই নতুন প্রযুক্তি চালু হওয়ার কথা। কিন্তু সে ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE