জয়সল কেপি-র সেই উদ্ধারের দৃশ্য। যা এখন ভাইরাল।
একবুক জলেও ঝুঁকে রয়েছেন নীল টি-শার্ট। তাঁর পিঠে পা দিয়ে এক এক করে মহিলারা নৌকায় উঠছেন। বন্যাবিধ্বস্ত কেরলে যখন জলে-মানুষে লড়াই চলছে, ঠিক সেই সময় উদ্ধারের এমন এক দৃশ্যে গোটা দেশ তোলপাড়। এই ঘোর সঙ্কটের মুহূর্তে কেরলের কোণে কোণে এমনই ছবি হয়ত আরও উঠে আসবে। জয়সল কেপি তেমনই এক দৃষ্টান্ত।
রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে মলপ্পুরম একটি। সেই জেলারই তানুরের বাসিন্দা কেপি। পেশায় মত্স্যজীবী। বন্যায় তাঁর গ্রামের সবটাই জলের তলায় চলে গিয়েছে। কয়েকশো বাসিন্দার মতো তাঁর পরিবারও ঘরছাড়া। ঠাঁই হয়েছে ত্রাণশিবিরে। ঘর হারিয়েছেন বলে চুপ করে বসে থাকেননি। ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উদ্ধারকাজে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর মতোই রাজ্যের কয়েকশো মত্স্যজীবী। এবং তা নিঃশব্দেই! ওই জেলার মুথালামারের উদ্ধারের দৃশ্য সামনে আসার পর কেপি-ই যেন এখন নিঃশব্দে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সেই সব ‘সৈনিক’দের মুখ।
কেরলের ১৪টি জেলার মধ্যে ১৩টিই এখন জলের তলায়।জেলাগুলির প্রত্যন্ত এলাকায়এখনও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন। তেমনই এক প্রত্যন্ত এলাকা মুথালামার। উদ্ধারকারীদের কাছে খবর আসে ওই এলাকায় প্রবল জলস্রোতের মধ্যে একটি বাড়িতে আটকে রয়েছন কয়েক জন মহিলা। তাঁদের সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। শনিবার সেখানে উদ্ধারকাজে যায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জওয়ানরা। কিন্তু একেই প্রত্যন্ত এলাকা, তার উপর প্রবল জলের স্রোত— উদ্ধারকারীরা নৌকা নিয়ে গেলেও জলের স্রোতের সঙ্গে যুঝতে পারছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মুথালমারের মতোবিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় মত্স্যজীবীদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। এ ক্ষেত্রেও জয়সল কেপি এগিয়ে আসেন। উদ্ধারকারীদের সঙ্গে গিয়ে ওই শিশু ও মহিলাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
দেখুন সেই ভিডিয়ো
দেখা যায়, কেপি উদ্ধারকারীদের নৌকার সামনে জলের মধ্যে উপুড় হয়ে রয়েছেন। আর পিঠে পা দিয়ে সেই মহিলারা নৌকায় উঠছেন। জয়সল বলেন, “ওই এলাকায় এনডিআরএফ-এর জওয়ানরা নৌকা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা মহিলাদের তাছে পৌঁছতে পারছিলেন না। তখনই খবর দেওয়া হয় আমাদের। উদ্ধারকারীদের কাছে নৌকা চাইলাম। তার পর সেই নৌকা নিয়ে উদ্ধার করে আনলাম আমরা কয়েক জন।” কেপি আরও জানান, সবার কাছে যাতে সহযোগিতা পৌঁছে দিতে পারি সে জন্য দিনরাত এক করে কাজ করছেন তাঁরা। বলেন, “কোনও রকম নিরাপত্তা নেই। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই উদ্ধারকাজ চালাচ্ছি।” তবে স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতা ছাড়া যে এ কাজ করা সম্ভব হত না, সে কথাও জানিয়েছেন বছর বত্রিশের কেপি।
আরও পড়ুন: ছাদেই নেমে এল কপ্টার, দুঃসাহসিক উদ্ধার কেরলে
আরও একটি ঘটনার কথা জানান কেপি। কী ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক শিশুকে উদ্ধার করে এনেছেন। জলের স্রোতে নৌকা উল্টে যাওয়ার ভয় ছিল, তাই বাধ্য হয়েই সাঁতরে ২১ মাসের ওই শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এ কথা বলতে বলতে তাঁর মুখে একটা পরিতৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠে।
শুধু কেপি-ই নন, তাঁর মতো রাজ্যের অন্য মত্স্যজীবীরাও সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যে নৌকা সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে লাগাতেন, এখন সেই নৌকাই কেরলবাসীর উদ্ধারে কাজে লাগছে। ভালিয়াভেলির এক মত্স্যজীবী জ্যাক ম্যান্ডেলা যেমন জানান, তাঁদের একটা দল ভারিয়াভেলি সংলগ্ন এরায়ানমুলাতে উদ্ধারে গিয়েছিল। জলের তোড়ে নৌকা প্রায় উল্টে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখান থেকে বহু মানুষকে উদ্ধার করেন।
আরও পড়ুন: আমি মরি তো মরব, তুলে নিয়ে যান ওঁদের
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy