Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
এনএসজি নিয়ে কথা

গোপনে ড্রাগনের দেশে দিল্লির দূত

পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থায় (এনএসজি) ভারতের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনার সামনে চওড়া হচ্ছে চিনের প্রাচীর। ঠিক তখনই কাকপক্ষীকেও টের পেতে না দিয়ে চরম গোপন এক বেজিং সফর সেরে এলেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর।

সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা.

সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা.

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৯:৩৫
Share: Save:

এ যেন কোনও টানটান স্পাই থ্রিলারের চিত্রনাট্য।

পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থায় (এনএসজি) ভারতের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনার সামনে চওড়া হচ্ছে চিনের প্রাচীর। ঠিক তখনই কাকপক্ষীকেও টের পেতে না দিয়ে চরম গোপন এক বেজিং সফর সেরে এলেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। ভারত অথবা চিনের সংবাদমাধ্যম তো দূরের কথা, তাঁর এই সফরের (১৬-১৭ জুন) কথা হাতে গোনা কয়েক জন শীর্ষনেতা ছাড়া জানানো হয়নি কাউকেই। পাকিস্তান-সহ বিশ্বের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দেশের কানে পৌঁছনোর তো প্রশ্নই ওঠে না।

আগামী ২৩ তারিখ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে বসছে এনএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। তার আগে চিনের বিরোধিতাকে লঘু করতে গোপনীয়তা বজায় রেখে এই পদক্ষেপ করেছিল নয়াদিল্লি। আজ জয়শঙ্করের ওই সফরের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বিদেশমন্ত্রীর দাবি, এই দৌত্যে অনেকটাই সফল ভারত। তাঁর কথায়, ‘‘চিন এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছে না। এই গোষ্ঠীতে ঢুকতে হলে ভারতকে কোন কোন শর্ত পালন করতে হবে তা নিয়েই আপাতত তারা চিন্তাভাবনা করছে।’’ ভারতের পক্ষ থেকে এই শর্তাবলি আরোপের বিষয়টি নিয়েও চলছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দরকষাকষি। বিদেশমন্ত্রীর কথায়, ‘‘২০০৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির সময়ে আমাদের একটি ছাড় দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ে পরমাণু শক্তি ব্যবহার সংক্রান্ত যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম, তা রক্ষা করেছি। শুধু তা-ই নয়, তার থেকেও এগিয়ে গিয়েছি।’’ বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, চিনা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে আরোপিত শর্তাবলি নয়, পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতের রেকর্ড দেখুক চিন।

এনএসজি-র সদস্য দেশগুলির মধ্যে ঐকমত্য না হলে ভারতের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়। আমেরিকা, সুইৎজারল্যান্ড-সহ কয়েকটি দেশ ভারতকে সমর্থন করলেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে চিন। তুরস্ক-সহ কিছু দেশকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের বিরোধিতায় নেমেছে তারা। বেজিংয়ের যুক্তি, পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর না করলে কোনও দেশকে এনএসজি-র সদস্য করা ওই সংগঠনের নিয়মের বিরোধী। এর মধ্যে আবার এনএসজি-র সদস্য হতে আসরে নেমেছে পাকিস্তান। তার পিছনেও চিনা মদত দেখছে সাউথ ব্লক। সুষমা স্বরাজ অবশ্য আজ যথেষ্ট আশার সুরে বলেছেন, ‘‘আমার ধারণা এক বার যদি ঐকমত্য তৈরি হয়, তা হলে কোনও একটি দেশ তা ভঙ্গ করতে চাইবে না। আমার আশা, ভারত এ বার এনএসজি-র সদস্যপদ পাবে।’’ এই গোষ্ঠীভুক্ত ২৩টি দেশের নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছেন বলে আজ জানিয়েছেন সুষমা।

সোলে এনএসজি বৈঠকের ঠিক আগে (২২ জুন) তাসখন্দে মুখোমুখি হবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। ‘সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন’ বা এসসিও-র বৈঠকে দুই নেতারই যোগ দেওয়ার কথা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, তাসখন্দে মোদী-চিনফিং পার্শ্ব বৈঠকে অবশ্যই এনএসজি নিয়ে আলোচনা হবে।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, পাকিস্তানকে সদস্য না করলে চিনের ভারত-বিরোধিতা কমানো যাবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আমেরিকা। বারাক ওবামা প্রশাসন দিল্লিকে বোঝাতে চাইছে, পাকিস্তান এনএসজি-র সদস্য হওয়ার ভাল দিকও আছে। সে ক্ষেত্রে পরমাণু চোরাচালানে অভিযুক্ত ওই দেশটির সব চুল্লি আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় আনা যাবে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন সুষমা বলেন, ‘‘ভারত অন্য কোনও দেশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায় না। তবে প্রত্যেক দেশকেই তাদের রেকর্ডকে সামনে তুলে ধরতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

S Jaishankar Foreign secretary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE